চিন্তা করলে অবাক হতে হয় যে, একজন সাধারণ শিশু থেকে কালাম হয়ে ওঠার পথটা কিন্তু সহজ ছিল না, কিন্তু ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আব্দুল কালাম যাঁর পুরো নাম ডাক্তার আবদুল পাকির জৈনুলাব্দীন আব্দুল কালাম, তাঁর জীবনের মূল মন্ত্রই ছিল, 'কখনো ছোটো স্বপ্ন দেখো না। যে দায়িত্বই পাবে সেটিকেই একটি নতুন সংজ্ঞা দেবে।' তিনি নিজেও এমনটাই করেছিলেন, এই কারণেই তিনি জনগণের রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও সকলের কাছে একজন বিশিষ্ট মানুষই থাকবেন।
তিনি প্রথম এমন একজন অরাজনৈতিক রাষ্ট্রপতি, যাঁর রাজনীতিতে আগমন হয় বিজ্ঞান এবং কারিগরি ক্ষেত্রে তাঁর উৎকৃষ্ট অবদানের জন্য। ডা. কালাম শিশু এবং যুবকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। ভারতবাসী আদর করে তাঁকে 'মিসাইল ম্যান' বলে আখ্যা দিয়েছিল। নিজের সহকারীদের প্রতি ঘনিষ্ঠতা এবং ভালোবাসার জন্যে কিছু মানুষ তাঁকে 'ওয়েল্ডার অফ পিউপিল' বলত। তাঁর পরিবারের লোকেরা এবং ছোটোবেলার বন্ধুরা তাঁকে 'আজাদ' বলে ডাকতেন। ১৫ অক্টোবর, ১৯৩১-এ ধনুষকোডি গ্রামে (রামেশ্বরম, তামিলনাডু)-তে একটি মধ্যবিত্ত মুসলমান পরিবারে কালামের জন্ম হয়। তাঁর বাবা জৈনুলাব্দীন খুব বেশি লেখাপড়া জানতেন না, সংসারের আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো ছিল তা নয়। কালামের বাবা জেলেদের নৌকা ভাড়ায় দিতেন। আবদুল কালাম একটি একান্নবর্তী পরিবারের মধ্যে থাকতেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা কত হতে পারে তা আন্দাজ করতে গেলে জেনে নিন যে স্বয়ং কালামেরই আরও চার ভাই এবং পাঁচ বোন ছিল এবং তাঁরা ছাড়াও ঐ বাড়িতে আরও তিনটি পরিবার বাস করত। আবদুল কালামের জীবনে তাঁর বাবার প্রভাব খুব বেশি ছিল। জৈনুলাব্দীন খুব বেশি লেখাপড়া না জানতেন না ঠিকই, কিন্তু তাঁর নিষ্ঠা এবং তাঁর দেওয়া সংস্কার আবদুল কালামের অনেক কাজে এসেছিল।
তিনি নিজেদের পারিবারিক বাড়িতে থাকতেন, যা উনবিংশ শতকে তৈরি হয়েছিল। রামেশ্বরমের বিখ্যাত শিব মন্দির তাঁর বাড়ি থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরে। ওই অঞ্চলে মুসলমানেদের বেশি সংখ্যা বেশি ছিল। তারা প্রতিদিন বিকেলে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যেত, কিন্তু একই সঙ্গে তারা রামেশ্বরম মন্দিরে মাথা ঠুকতেও ভুলত না কখনো। মন্দিরের পূজারী লক্ষণ শাস্ত্রী কালামের বাবার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। যখন কালামের বয়স মাত্র ৬ বছর, তখন বাবার সাথে মিলে তিনি একটি কাঠের নৌকো বানান যা স্থানীয় লোকেদের রামেশ্বরম থেকে ধনুষকোডির নদী পারাপার করতে সাহায্য করত। প্রতিদিন সকালে রামেশ্বরম রেলওয়ে স্টেশন ও ধনুষকোডি পর্যন্ত পথে পথে খবরের কাগজ বিক্রির কাজও করেছিলেন, যা তাঁর উপার্জনের একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছিল।
৫ বছর বয়সে রামেশ্বরমের পঞ্চায়েত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর লেখাপড়া শুরু হয়। তাঁর শিক্ষক ইয়াদুরাই সলোমন তাঁকে বলেছিলেন-'জীবনে সাফল্য এবং অনুকূল পরিণাম লাভ করার জন্যে তীব্র ইচ্ছা, আস্থা, অপেক্ষা এই তিনটি শক্তিকে খুব ভালো করে বুঝে নিতে হবে এবং তাদের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ