‘ধারাবাহিক বর্ণনায় নবীজির সীরাত’ কিতাবটি বিখ্যাত সীরাতগ্রন্থ ‘সীরাতে মুগলতাঈ’ এর অনুবাদ। ‘সীরাতে মুগলতাঈ’ এক মলাটে পুরো নবীজীবনকে উপজীব্য করে লেখা সবচেয়ে তথ্যসমৃদ্ধ সংক্ষিপ্ত সীরাত। একদিকে নবীজীবনের হেন কোনো বিষয় নেই, যা এই সীরাতে উল্লেখিত হয়নি, অন্যদিকে এর কলেবর অন্যান্য সীরাতের তুলনায় ছোট। এটাই ইমাম আলাউদ্দিন মুগলতাঈ রহ. এর কারিশমা। এককথায় বললে তিনি সিন্ধুকে বিন্দুর মধ্যে পুরে দিয়েছেন।
.
দারুণ এই সীরাতের কিছু বৈশিষ্ট্য জানা যাক—
* এটি আটশো-নয়শো হিজরির পরে লিখিত ছোট-বড় প্রায় সবগুলো সীরাতের রেফারেন্স-বুক।
মূলত ইমাম আলাউদ্দিন মুগলতাঈ রহ. ছিলেন একজন যুগবিখ্যাত মুহাদ্দিস ও সীরাতবিদ । তাই তার রচিত এই গ্রন্থটি সীরাত-বিষয়ক রেফারেন্স-গ্রন্থ হিসেবে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
* এটি নবীজি সা. এর সুবিস্তৃত জীবনের ঘটনাপ্রবাহের একটি চমৎকার ইনডেক্সের মতো।
শুধু জীবনী অংশের ধারাবর্ণনাই নয়, ইমামদের মতানৈক্য, হাফিয মুগলতাঈ রহ. এর ইলমি নুকতা, প্রতিটি গাযওয়া ও সারিয়ার সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ বিবরণ, নবীজির চরিত্র, মুজিযা, সাহিত্যবোধ, স্ত্রী, সেবক, দাস-দাসী ও দৈনন্দিন ব্যবহৃত আসবাবপত্রের তালিকা ও আকৃতির চমৎকার বর্ণনা আছে এই সীরাতে। যা অন্যান্য সীরাতে দুর্লভ। এটা সম্ভবত ৮০০ হিজরির বিখ্যাত হানাফি মুহাদ্দিস ও সীরাতবিদ হাফিয মুগলতাঈ রহ. এর ইলমের ব্যাপ্তি ও বিস্তৃতির কারণেই সম্ভব হয়েছে।
* এতে হাদিসের শাস্ত্রীয় মানদণ্ডে সীরাতের বর্ণনাগুলোকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
হাফিয মুগলতাঈ রহ. যেহেতু যুগবিখ্যাত মুহাদ্দিস ছিলেন তাই তিনি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনার অবস্থা ও বর্ণনাকারীর ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের অবস্থানও তুলে ধরেছেন। আর মতানৈক্যের ক্ষেত্রগুলোতে নিজের মতকে সবার আগে উল্লেখ করে অন্যান্য মতেরও উল্লেখ করেছেন। আলেম, তালিবুল ইলমের জন্য লেখকের এই নুকতা, পর্যালোচনা ও অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
সবশেষে, কেউ যদি নবীজির সীরাত বিষয়ে চমৎকার একটি হোমওয়ার্ক করতে চায় তাহলে এই বই হবে তার একান্ত সহযোগী।