বিশেষভাবে “মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাস”টি সাধারণ এঁতিহাসিক
ঘটনাগুলো থেকে নিখুঁতভাবে বিচার ও পর্যালোচনা করে মুসলিম
শাসনকর্তাদের ইতিহাস রচনা করা হয়েছে। এতে ভারতীয়
জনসাধারণের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনব্যবস্থার বিভিন্ন
মৌলিক দিক স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সম্প্রতি এঁতিহাসিকরা ভারতের
মুসলিম পূর্বসূরি শাসকবর্গের রাজনৈতিক কার্যক্রমের মধ্যে তথা
জয়পরাজয়ের অনুপম জাতীয় পরিচয়সহ বিস্তারিত ইতিহাস তুলে
এনেছেন । পাশাপাশি ভারতের ইতিহাসবিদরা প্রমাণ করতে চেষ্টা
করেছেন যে অতীতকালে হিন্দুরা রাষ্ট্র গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রেখেছিল ৷ তৎকালে হিন্দু রাষ্ট্র ছিল ধর্মভিত্তিক ৷ সার্বভৌম শাসনকর্তার
কর্তব্য ছিল জনসাধারণের কল্যাণ বৃদ্ধি করা, বস্তুগত অভাবের উন্নতি
সাধনও সমগ্র হিন্দু জনগোষ্ঠীর নৈতিক উন্নয়ন । প্রত্যেক হিন্দু রাজাকে
তার প্রজাদের সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধনের জন্য একটি বিধিবদ্ধ শপথ গ্রহণ
করতে হতো । মিস্টার জয়াসাল লিখেছেন যে রাজপদের হিন্দু ততুটিকে
কখনো স্বর্গীয় ভণ্ডামি ও ধর্মদ্বেষী স্বৈরতন্ত্রে অঘঃপতিত হওয়ার অনুমতি
দেওয়া হতো না । মুসলিম বিজয়ী বখতিয়ার খলজির ১২০১ খ্রিস্টাব্দে
বাংলার রাজধানী নদীয়া আক্রমণের পরে ভারতে ধীরে ধীরে মুসলিম
শাসনের সূত্রপাত ঘটে ৷ তাছাড়া হিন্দুরা বিভিন্ন সময় তাদের নিজস্ব
সামরিক শক্তি নিয়ে মুসলিম শাসনকর্তাদের মোকাবিলা করতে থাকে
এবং তাদের মতানৈক্য, নেতৃতের অভাব ও অন্যান্য ত্রুটির কারণে প্রায়
অধিকাংশ যুদ্ধে পরাজিত হয় । হিন্দুদের ব্যর্থতা ও মুসলমানদের
বিজয়ের কারণগুলো এই গ্রন্থটি পাঠের সময় যথাস্থানে বিস্তৃতভাবে
বিভিন্ন পর্যবেক্ষকের মতামতের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে, যার
সারমর্ম সুধী পাঠকগণ অনায়াসে উপলব্ধি করতে পারবেন ।