কুরআন বোঝার জন্য চাই—জাগ্রত মস্তিষ্ক, আলোকিত হৃদয়, পরিচ্ছন্ন মনন ও আল্লাহ তাআলার সাথে গভীর সম্পর্ক। এ গুণগুলো যার মধ্যে যে মাত্রায় থাকবে, সে ওই মাত্রায় কুরআনের মর্ম বুঝতে পারবে। কুরআনের অন্তর্নিহিত রহস্য সমূহও তার কাছে ততো পরিষ্কারভাবে ধরা দিবে। তাদাব্বুরের অতলতায়ও সে ততো গভীরভাবে ডুব দিতে পারবে।
থানভি রহ. পূর্ণ মাত্রায় উপরিক্ত সবগুলো গুণের অধিকারী ছিলেন। কুরআনের সাথে তার সম্পর্ক ছিল বিস্ময়কর। তার তাফসিরে বয়ানুল কুরআনকে ধরা হয় সমাধানী কিতাব হিসেবে। বহু তাফসির ঘেটে যে বিষয়ের কোন সমাধান পাওয়া যায় না, বয়ানুল কুরআনে মাত্র দুয়েক কথায় তার সমাধান পাওয়া যায়।
তার রচনাবলি, খুতুবাত ও মালফুজাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কুরআনি মনিমানিক্য।আমাদের হাতের বইটি মূলত সেসব মুক্তামালারই এক অনন্য সংকলন।
বইয়ের পরিচিতি কনটেন্ট :
আচ্ছা, আপনি কি দর্শন বা বিজ্ঞানের ছাত্র? অথবা আপনি কি এ দুটি বিষয়ের প্রতি ইন্টারেস্টেড? ফলে আপনার মনে ইসলাম সম্পর্কে নানান প্রশ্ন দোলা দিচ্ছে? সেসব নিরসনের জন্য প্রচুর বইপত্র পড়ে ফেলেছেন, কিন্তু সমাধান পাচ্ছেন না? একটি প্রশ্নের সমাধান হয়—তো আরেক প্রশ্ন এসে হাজির হয়?
তাহলে আপনাকে বলছি, গৎবাঁধা অধ্যায়ন না করে এ বইটির মাধ্যমে আপনার পাঠযাত্রা শুরু করুন। থানভি রহ. এতে মাত্র সাতটি মূলনীতির মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে দর্শন ও বিজ্ঞানের ফলে সৃষ্ট সকল প্রশ্ন ও আপত্তির সমাধান করেছেন। তার এ সপ্ত-মূলনীতি এতটা গভীর ও ব্যাপক যে, তা কেবল অতীত ও হাল আমলের প্রশ্ন-আপত্তির সমাধানই করবে না; ইসলাম সম্পর্কে ভবিষ্যতে যত প্রশ্ন ও আপত্তি হতে পারে, তারও সমাধান করবে। আমরা আশাবাদী, বইটির পাঠ আপনার চিন্তাকে শানিত করবে। বিশ্বাসের এক দুর্ভেদ্য দুর্গে নিয়ে যাবে আপনাকে।
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।