শৈশব হলো জীবনের সবচেয়ে কোমল অধ্যায়, জীবনের ভীত গড়ার সময়। যেখানে স্বপ্নের বীজ বোনা হয়, মায়ের স্নেহ ও পরিবারের উষ্ণতায় শিশুর হৃদয় বিকশিত হয়। কিন্তু যখন সেই শৈশব ভেঙে যায় অবহেলা, বিচ্ছেদ, সৎ মায়ের কঠোরতা কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অমানবিকতার আঘাতে, তখন তা হয়ে ওঠে এক দুঃস্বপ্ন। “শৈশবের দুঃস্বপ্ন” এক দগদগে ক্ষতের দলিল।
সম্প্রতি মাদ্রাসার এক শিক্ষকের দ্বারা ছাত্র বলাৎকারের ঘটনা লেখকের হৃদয়ে পুরোনো ক্ষতকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে। নিজের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা তিনি এখানে সাহসের সঙ্গে উন্মোচন করেছেন, যেন সমাজ উপলব্ধি করে। এ ধরনের নীরব যন্ত্রণার দায় কেবল ব্যক্তির নয়, আমাদের সবার।
এই উপন্যাস কেবল কান্না আর যন্ত্রণার গল্প নয়; বরং এটি এক গভীর সামাজিক বার্তা। স্বামী-স্ত্রী যখন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাদের সন্তানদের মানসিক আঘাতের কথা ভেবে দেখা কি জরুরি নয়? মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারা আছেন, তারা কি শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট সতর্ক? অভিভাবকরা কি সন্তানদের খোঁজখবর রাখছেন, তাদের ভয়ের কিংবা ব্যথার ভাষা বুঝতে চেষ্টা করছেন?
লেখকের বিশ্বাস, সচেতন পরিবার, দায়িত্বশীল শিক্ষক ও মানবিক সমাজই পারে শৈশবকে রক্ষা করতে। তাই এই উপন্যাস শুধু একটি ব্যক্তিগত যন্ত্রণার কাহিনি নয়, এটি সমাজের জন্য এক সতর্কবার্তা, এক জাগরণের আহ্বান।
প্রতিটি শব্দে রয়েছে বেদনার চিহ্ন, প্রতিটি পাতায় লুকিয়ে আছে অশ্রুর ইতিহাস, আর প্রতিটি অধ্যায় পাঠককে মনে করিয়ে দেয় শিশুর হাসি রক্ষা করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব।
এটি এক আয়না যেখানে আমরা নিজেদের মুখ দেখতে পাই। যে সমাজ সচেতন হবে, পরিবর্তনের পথে হাঁটবে, তার কাছেই এই গল্পের আসল আবেদন।