১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ছোট ছিলাম; কিন্তু যুদ্ধ কিভাবে হচ্ছে, কারা যুদ্ধ করছে সে সম্পর্কে সকল খবরাখবর বড়দের কাছে শুনতে পারতাম। গা শিহরিত হয়ে উঠতো। শুনেছি এক মেজর জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কর্নেল এম এ জি ওসমানি। আর শুনতাম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বীরত্বগাথা, যাদের নেতৃত্বে দেশ যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং দেশ স্বাধীন হয়। পরে সেনাবাহিনীতে যোগদান করার পর মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন কোর, রেজিমেন্ট সম্পর্কে ধারণা লাভ করি। প্রশিক্ষণ শেষে কোন কোর বা রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করতে চাই সে বিষয়ে লিখে দিতে হতো। আমি ইতোমধ্যেই ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকেই বেছে নিয়েছিলাম; কেননা, এ রেজিমেন্টের শৌর্য, বীর্য, সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। এ রেজিমেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশুনা করেছি এবং এ রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মেজর এম এ গণিকে একজন দুঃসাহসী বীরপুরুষ, দেশপ্রেমিক ও ইমানদার ব্যক্তি হিসেবে চিনতে পেরেছি। তিনিই ছিলেন আজকের বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর রূপকার। কেননা, তাঁর প্রচেষ্টায়ই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল সশস্ত্রবাহিনীর প্রথম রেজিমেন্ট ‘ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট’।
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, হঠাৎ করে এদেশ স্বাধীন হয়ে যায়নি। এর ভিত্তি রচিত হয়েছে বহু আগে। এরপর রাজনীতিবিদগণের পাশাপাশি সামরিক নেতাগণ এ ভিত্তিকে ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী অবয়ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এমন এক সময় ছিল যখন এ বাংলার মানুষ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। গুটি কয়েকজন বাঙালি অফিসার ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে। এ সকল অফিসারগণ কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে বাঙালি জনগোষ্ঠীকে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের পরিবেশ তৈরি করতে আপ্রাণ চেষ্টা ও উদ্বুদ্ধ করেন এবং পাকিস্তানের শুরুতেই ‘ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট’ নামে একটি স্বতন্ত্র রেজিমেন্ট গড়ে তোলার প্রয়াস পান। যে রেজিমেন্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করে।
বিশেষ করে দুঃসাহসী, ত্যাগী ও মেধাবী চৌকশ অফিসার যারা সামরিক নেতা হিসেবে পরিচিত, সামরিক বাহিনী গঠন এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অসাধারণ অবদান রেখেছেন। এ বইয়ে সম্মুখ সারির অনন্যসাধারণ এক ব্যক্তিত্বের জীবনী ও তাঁর কৃতিত্বকে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং যা ‘ফেসবুক’ ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করে ব্যাপক সাঁড়া পেয়েছি। বয়োজ্যেষ্ঠ, জ্ঞানী, অভিজ্ঞরা সেগুলো পড়ে আরো বহু তথ্য ও অজানা বিষয় তুলে ধরেছেন তাঁর সম্বন্ধে। এ সকল মন্তব্যও এ বইয়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
মেজর গণির উপর আমার দীর্ঘদিনের গবেষণার ফসল হলো আজকের এ বই। তাঁকে ও তাঁর অবদানকে জাতির নিকট তুলে ধরার জন্য আমি দু’টি সেমিনারের আয়োজন করেছি এবং পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেছি। এ সকল প্রচেষ্টার সম্মিলিত প্রতিফলন হলো এ বইটি। আশা করি এ বইটির মাধ্যমে মেজর গণি পরিচিত হবেন অনাগত শতাব্দির মানুষের নিকট।
বইটি পাঠের পর পাঠকের চোখে যদি ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় দয়া করে আমাকে জানালে, পরবর্তী সংস্করণে আমি আরো পরিশুদ্ধ আকারে প্রকাশের চেষ্টা করবো। মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আমাদের সহায় হোন। আমিন।