ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ১৯১১ সালে বক্সগীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি গঠন করে এ ধরনের উৎস সন্ধানের দিকে জোর দেন। সমিতির ৪র্থ দফায় বলা হয় বক্সগদেশের বিভিন্ন স্থানের পির, সাধুপুরুষ ও অন্যান্য মহাজনের জীবনী সংগ্রহ ও প্রকাশ সমিতির অন্যতম লক্ষ্য। ৫ম দফায় বলা হয়, বক্সগীয় মুসলমান সমাজের প্রাচীন বংশাবলি, প্রাচীন কীর্তিকলাপের ইতিবৃত্ত ও জাতীয় ইতিহাসের অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করা হবে। গবেষক মো. কলিম উল্লাহ সেই কাজটিই করেছেন শত বছর পরে। তিনি মক্কা বিজয়ের পর কাবা শরিফের চাবি হস্তান্তর থেকে সিলেট বিজয় পর্যন্ত মাখদুম পরিবারের ইতিহাসের ধারাভাষ্য দিয়েছেন। ওসমান ইবনে তালহার মৃত্যুর পর কাবা শরিফের চাবি হস্তান্তরিত হয় তার চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ আলা হাদরামি (রা.) এর কাছে। যিনি ছিলেন খলিফা ওসমানের মনোনীত মক্কার গভর্নর। বংশপরম্পরায় চাবি হস্তান্তরিত হয় তৎপুত্র আবদুর রহমানের কাছে, যিনি উমাইয়াদের আমলে ছিলেন মিশরের গভর্নর। তারই ধারাবাহিকতায় আব্বাসীয় আমলে পারস্যের খোরাসানে বসবাস করতেন অধঃস্তন তাহির ইবনে হোসাইন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন হাদরামাউত ছিলেন নবী হুদের পুত্র কাহতানের বংশধর। আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ আরব অংশে বর্তমান ইয়ামানে তাদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করতো। রাজা হাম্মুরাবি কর্তৃক হযরত হুদ (আ.)-এর শরিয়া আইনের উৎকীর্ণ লিপি ইয়ামেনের গুরাব দুর্গে আবি®ৃ‹ত হওয়া পর এই দাবি আরো জোরালো হয়। কাহতানীয়রা ছিল জন্মগতভাবে আরবি ভাষাভাষী। যেখানে আদনানীয়রা ছিলেন ‘আরবাইজড আরব’, কারণ তাদের পূর্বপুরুষরা জন্মগতভাবে আরবি ভাষাভাষী ছিলেন না। ইবরাহিম (আ.)-এর ভাষা ছিল আরামিক বা ক্যালদীয়। গবেষক কলিম উল্লাহ এই সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, কাবাঘরের চাবি ছিল খাঁটি আরবি ভাষাভাষী ইয়ামানিদের হাতে। তাতে ‘চাবি বিতর্কের’ একটি বিশ^াসযোগ্য মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হলো বলে ধরে নেওয়া যায়।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ছিলেন হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর সক্সগী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম গোরাচাঁদ ওরফে সৈয়দ আব্বাস আলী মক্কী ও হযরত পেয়ার শাহের আদি খাদেম শেখ দারা মালিকের অধঃস্তন বংশধর। দারা মালিক থেকে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ অধঃস্তন সপ্তম পুরুষ। জনাব মো.কলিমউল্লাহ বংশলাতিকা বিভাজন করে দেখিয়েছেন তিনিও একটি বিখ্যাত মাখদুম পরিবারের অধঃস্তন পুুরুষ। এটি প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে গবেষক বংশাবলি ইতিহাসের একটি প্রামাণ্য দলিল তৈরি করেছেনÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতিহাসের নিরিখে উৎরে গেলে এটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এবার তিনি যখন তিন শতো ষাট আওলিয়ার জীবন নিয়ে পরিচিতিমূলক প্রামাণ্য গ্রন্থ রচনা করবেন, তখন এটি বংশাবলির ইতিহাস রচনায় আরো সহায়ক ভূমিকা রাখবেÑ এব্যাপারে আমি নিশ্চিত। পুরনো ইতিহাসের ধারায় এটি হবে একটি নতুন সংযোজন,একটি যুগান্তকারী ঘটনা।সারা বাংলাদেশ এই ধারাটির পুনরুজ্জীবনের জন্য অপেক্ষা করছে। সিলেটে এই ধারার সূচনা করে জনাব মো. কলিম উল্লাহ আমাদের সবারই প্রিয়ভাজন লেখকে পরিণত হবেন এই কামনা করি।