‘নৈরাজ্য’ শব্দটি অনেকের দৃষ্টিতে নেতিবাচক। তবে ধারণাটি প্রকৃতপক্ষে তা নয়। বরং কর্তৃত্ববাদী শাসকের দমনমূলক নীতি এই তত্ত্বটিকে নেতিবাচক হিসেবে প্রচার করে চলেছে। যেমন ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের বলা হতো রাষ্ট্রদ্রোহী। একইভাবে জনগণের কোনো সিদ্ধান্ত শাসক বা বিদ্যমান ক্ষমতাকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুললেই সেসব ‘নৈরাজ্য’ বলে প্রচারিত হয়। লেখক জানিয়েছেন, শব্দটির “অর্থ ‘রাজার অনুপস্থিতি’। খুব সহজ ভাষায় বললে নৈরাজ্য হচ্ছে শাসকবিহীন, কর্তৃত্ববাদী কাঠামোমুক্ত, স্বশাসিত একটা সামাজিক অবস্থা।” নৈরাজ্যবাদী নৃবিজ্ঞান: বিকল্প সম্ভাবনা বইটি প্রচলিত এই ধারণার বিপরীতে একটি চ্যালেঞ্জ।
এই বইয়ে আনন্দ অন্তঃলীন আমাদের একটি নতুন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো, শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতাসমূহ এবং শ্রম-শোষণের বিভিন্ন দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। দেখিয়েছেন ‘উন্নয়ন’ শিরোনামে কথিত রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়, পরিবেশ-প্রতিবেশের ভয়াবহ দূষণের মাত্রা। তবে কেবল সমস্যা চিহ্নিতকরণই নয়, নতুন সম্ভাবনাময় একটি সমাজব্যবস্থা কীভাবে গড়ে তোলা যায় সেসবের একাধিক উদাহরণ উল্লেখ করেছেন তিনি। এসব রচনায় লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি সমাজতান্ত্রিক দর্শনের অনুগামী। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাও তাঁর দৃষ্টি এড়ায়নি।
সাম্প্রতিক বিশ্ব-পরিস্থিতি, যুদ্ধ, মানবিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষ-এসব অস্থিরতার মধ্যে এই বই মানুষের অন্তর্গত সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে সহায়ক হবে বলেই আমাদের ধারণা। কেননা, সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে মানুষ অপরাজেয়। আবহমানকালের অশ্রু আর আগুনের ছোঁয়ায় মানুষই প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাদের সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষা।