আধুনিক সভ্যতার এর শুরু থেকেই প্রথাসম্মত ধর্মের বিরোধী। ধর্মকে সে একেকভাবে দেখার চেষ্টা করেছে। একেক নামে তাকে আখ্যায়িত করেছে। কখনও বলেছে ধর্ম দুর্বলদের আশ্রয়, শক্তিশালীদের জন্য ধর্ম নয়। কখনও বলেছে ধর্ম মানব-বিকাশের অপূর্ণাঙ্গ স্তরের অবশিষ্টাংশ, তাই আধুনিক যুগে যেখানে মানুষের বিকাশ পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেছে তখন আর ধর্মের প্রয়োজন নেই। কখনও বলেছে ধর্ম পুরোটাই নাকি মানুষের বানানো। আবার কখনও বলেছে ধর্ম একপ্রকার মানসিক বিকার। নানাভাবে ধর্মকে অবমূল্যায়ন এই আধুনিক সভ্যতা করেছে।
এতে করে কি ধর্মের প্রতি, তুরীয় সত্তাকে জানার প্রতি, সেই মহিয়ান সত্তার কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার প্রতি মানুষের যেই ঝোঁক, যেই টান বা আকর্ষণ—তাকে বদলে ফেলা গেছে? মানুষের আদিস্বভাব পরিবর্তন করা কি সম্ভব হয়েছে? না। মানুষের এই স্বভাব অমোঘ। এর টান অমোচনীয়। এটা মোটেও রূপকথার গল্প কিংবা অপূর্ণাঙ্গ বিকাশজনিত মনোব্যাধি নয় বরং মানুষের স্বভাবের বহিঃপ্রকাশ। কাউকে না কাউকে সে নিজের চাইতে বড়, উত্তম, মহান, সর্বশক্তিমান বলে মানতে চায়। তাঁর কাছে সমর্পিত হতে চায়। তাঁর সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে দিতে চায়।
ইসলাম মানুষের এই স্বভাবটিকেই বলে ফিতরাত। এই ফিতরাত মানুষের আদিম স্বভাব। তাকে এভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তার সৃষ্টির মূল কাঁচামাল এটাই। রূহানী জগতে এই সাক্ষ্য দিয়েই সে পৃথিবীতে আগমণ করেছে। সেই সাক্ষ্যের ছাপ সে বহন করে চলেছে রাতদিন। অহর্নিশ তা চেষ্টা করছে নিজেকে ব্যক্ত করার। প্রকাশিত করার। এই ফিতরাত তাঁর প্রকৃত উৎস খুঁজে বেড়াচ্ছে অবিরত। এ যেন এক অস্তিত্বতাত্ত্বিক (existential) যাত্রা। এক বিশাল মহাসাগর। যাতে প্রত্যেকটি মানুষকেই গা ভাসাতে হয়। খুঁজে নিতে হয় নিজের চরম গন্তব্য, জীবনের পরমার্থ।
ফিতরাত কি? কেন তা জরুরী, বিশেষত আধুনিক যুগে এসে? কীভাবে তা ইসলামী বিশ্ববীক্ষার একেবারে মৌলিক উপাদানের মর্যাদা লাভ করলো? আর এর প্রভাবই-তা কতদূর বিস্তৃত? এ ধরণের নানা প্রশ্নের জবাব মিলবে এ বইটিতে ইনশাআল্লাহ।
ড. ইয়াসিন মোহামেদের জন্ম জোহানেসবার্গে, ১৯৫৪ সালে। ডারবান ও কেপটাউনেই তার প্রাথমিক পড়াশোনা। স্নাতক আরবি ভাষার ওপর। মাস্টার্স করেন রিয়াদ থেকে, ইসলামী মনস্তত্ত্ব (Islamic Psychology) বিষয়ে। আমস্টারডাম থেকে পিএইচডি, ইসলামী নীতিশাস্ত্রে (Islamic Ethics)। এরপর থেকে কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ও অন্যান্য ইসলামী বিষয়ের অধ্যাপনায় নিযুক্ত রয়েছেন।