সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে জনগণের যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যম হলো ভাষা। এই ভাষার মাধ্যমেই সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন অসংখ্য পাঠক-শ্রোতার কাছে তথ্য পৌঁছায়। সংবাদমাধ্যম শুধু তথ্যপ্রকাশের মাধ্যম নয়; বরং পাঠক-শ্রোতার ভাষাচর্চারও অন্যতম ক্ষেত্র। তবে, সংবাদমাধ্যমের ভাষার গাঁথুনি যদি দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ হয়, তাহলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে। আর জনগণ প্রতিনিয়ত ভুলের সঙ্গে পরিচিত হলে, একসময় ভুলই তাঁদের কাছে শুদ্ধ মনে হবে।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে বাংলা শব্দের অশুদ্ধ প্রয়োগ, অপ্রয়োজনে বিদেশি শব্দের ব্যবহার, ভুল বানান, শব্দচয়নজনিত ত্রুটি, জটিল বাক্যের ব্যবহার-সহ ভাষাগত বিভিন্ন অসংগতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অসংগতি পাঠক-শ্রোতার মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
বর্তমানে সংবাদপত্রসমূহে ব্যবহৃত কিছু শব্দের সঙ্গে বাংলা একাডেমির অভিধানভুক্ত কিছু শব্দের বানানগত পার্থক্য রয়েছে। বাংলা একাডেমির অভিধান ও সংবাদপত্রসমূহের মধ্যে বানান-পার্থক্য যত কমিয়ে আনা যাবে, বাংলা ভাষার প্রমিত ব্যবহারে তত বেশি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
সংবাদমাধ্যমে বাংলা ভাষার শুদ্ধ ও প্রাঞ্জল প্রয়োগ নিশ্চিত করার প্রয়াস হিসেবে গ্রন্থটি লেখা হয়েছে। তথ্য অধিদফতরের পাঁচ শতাধিক তথ্যবিবরণী, বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সহস্রাধিক সংবাদপত্র এবং বেতার ও টেলিভিশনের সংবাদ থেকে সংগৃহীত ভাষাগত ভুলের শুদ্ধ ও প্রাঞ্জল রূপ গ্রন্থটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুলের ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে। বানানের সূক্ষ্ম ভুল থেকে শুরু করে সংবাদে শব্দ ব্যবহারে মিতব্যয়িতা, শিরোনাম ও ক্যাপশনে প্রচলিত ভুলের শুদ্ধ প্রয়োগ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে সংবাদ লিখনে করণীয়, সংবাদে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নামের ক্রম নির্ধারণে করণীয়-সহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় গ্রন্থটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গ্রন্থটিতে কোনো ভুল থাকলে পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করা হবে। আমি বিশ্বাস করি, গণমাধ্যমকর্মী, জনসংযোগ কর্মকর্তা, আগ্রহী পাঠক—সকলেই গ্রন্থটি থেকে উপকৃত হবেন।
মো. মামুন অর রশিদ ৩৬তম বিসিএস তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। তাঁর জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার দক্ষিণ উমানন্দ গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কয়েক মাস সাপাহার সরকারি কলেজে রসায়নের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে বিসিএস তথ্য ক্যাডারে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জনসংযোগ কর্মকর্তা (সিনিয়র তথ্য অফিসার) পদে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। এর আগে তিনি আঞ্চলিক তথ্য অফিস, রংপুর; জেলা তথ্য অফিস, লালমনিরহাট ও জেলা তথ্য অফিস, নীলফামারীতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর বিসিএস ইনফরমেশন এসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরির পাশাপাশি তিনি লেখালিখি করতে পছন্দ করেন। তাঁর লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— ‘স্বাচ্ছন্দ্যে শুদ্ধ বাংলা বলা ও লেখা’, ‘দাপ্তরিক পত্রে বড়ো ভুলের ছোটো সমাধান’, ‘A Practical Handbook for English Spelling and Pronunciation’, ‘বাংলাদেশের জেলা তথ্য অফিসের একাল-সেকাল’ ও ‘বিসিএস তথ্য ক্যাডার সম্পর্কিত বিষয়াদি’। তিনি পত্রিকায় নিয়মিত ফিচার লেখেন। তাঁর লেখা শতাধিক ফিচার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ব্যক্তি জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক।