বইটি লেখার পর থেকে আমার সমস্ত বিনিয়োগই সেই নীতিমালা অনুসারে হয়েছে। আমি যে মিউচুয়াল ফান্ডটি পরিচালনা করি—লেগ মেসন ফোকাস ট্রাস্ট—এটি মূল বইয়ের ধারণাগুলোর বাস্তব পরীক্ষাগার। এ পর্যন্ত তার ফলাফল অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক।
গত চার বছরে একটি কেন্দ্রভিত্তিক পোর্টফোলিও পরিচালনার অভিজ্ঞতার সঙ্গে আরও কিছু মূল্যবান পাঠ শিখেছি। বাফেট মনে করেন—গণিত ও সম্ভাবনার মৌলিক ধারণা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং বাজার-মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে বিনিয়োগকারীর পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। তিনি বাজার-ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর নির্ভর করার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন। কিন্তু এই সব ক্ষেত্রে তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা তুলনামূলকভাবে কম, কারণ তিনি এ বিষয়গুলো নিয়ে খুব ঘনঘন প্রকাশ্যে মত দেননি।
তাই আমাকে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে হয়েছে নিজের ব্যাখ্যা ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা দিয়ে। সম্ভাবনা ও গণিত বুঝতে আমি আশ্রয় নিয়েছি গণিতবিদ এড থর্প-এর। মানুষের ভুল-বিবেচনার মনস্তত্ত্ব বুঝতে সাহায্য করেছেন চার্লি মানগার। আর জটিল অভিযোজিত ব্যবস্থার বিজ্ঞান নিয়ে আমাকে শিক্ষিত করেছেন বিল মিলার।
পাঠকদের সুবিধার জন্য বইটির গঠন সম্পর্কে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। বইটি দুটি বড় খণ্ডে বিভক্ত, যাদের শুরুতে একটি ভূমিকাস্বরূপ অধ্যায় এবং শেষে উপসংহার রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক বিনিয়োগের মূল ধারণা এবং তার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর সংক্ষিপ্ত সারমর্ম আছে।
দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অধ্যায় পর্যন্ত প্রথম বড় অংশ—যেখানে একদিকে রয়েছে কেন্দ্রভিত্তিক বিনিয়োগের একাডেমিক ভিত্তি, অন্যদিকে রয়েছে তার পরিসংখ্যানগত প্রমাণ ও কয়েকজন খ্যাতিমান কেন্দ্রভিত্তিক বিনিয়োগকারীর অভিজ্ঞতা।
দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রভিত্তিক পোর্টফোলিও নিয়ে যথেষ্ট ঐতিহাসিক তথ্যের অভাব ছিল; ফলে তার সার্বিক আচরণ সম্পর্কে পরিসংখ্যানগত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন ছিল। কিন্তু নতুন গবেষণা সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে।
গত দুই বছর ধরে আমি ও অধ্যাপক জোয়ান ল্যাম-টেনান্ট মিলে তিন হাজার কেন্দ্রভিত্তিক পোর্টফোলিও নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা করেছি। বিভিন্ন সময়পর্বে তাদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে তা তুলনা করেছি আজকের জনপ্রিয়, ব্যাপকভাবে বিচিত্র বিনিয়োগে গড়া পোর্টফোলিওর সঙ্গে। এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে “ফোকাস ইনভেস্টিং: অ্যান অপটিমাল পোর্টফোলিও স্ট্র্যাটেজি অলটারনেটিভ টু অ্যাক্টিভ ভার্সাস প্যাসিভ ম্যানেজমেন্ট” শীর্ষক একাডেমিক গবেষণাপত্রে। এর সহজ ভাষায় সারমর্ম রয়েছে চতুর্থ অধ্যায়ে।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম অধ্যায়ে বইয়ের দ্বিতীয় বৃহৎ অংশ—যেখানে বিনিয়োগ-গণিত, বিনিয়োগ-মনস্তত্ত্ব এবং জটিলতার বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা রয়েছে। অনেকের কাছে এ বিষয়গুলো আলাদা জগতের মনে হতে পারে, কিন্তু আমার বিশ্বাস—এই জ্ঞান ছাড়া কেন্দ্রভিত্তিক বিনিয়োগ কখনই স্থিতিশীল ভিত্তি পায় না।
শেষ অধ্যায়ে রয়েছে কেন্দ্রভিত্তিক বিনিয়োগকারীদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সার্বিক চিত্র এবং আপনার নিজস্ব পোর্টফোলিওতে এমন কৌশল কীভাবে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করবেন—তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা।