সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা সেই মহান আল্লাহ তাআ’লার জন্য, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং কলমের মাধ্যমে মানুষকে জ্ঞান দান করেছেন। তাঁর অসীম দয়া ও অনুগ্রহেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আমার কলমে রূপ পেয়েছে। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বজগতের শ্রেষ্ঠ মানব, মানবতার পথপ্রদর্শক, হাবীবুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ ﷺ-এর ওপর। যাঁর শিক্ষা ও আদর্শ সকল অন্ধকার দূর করে মানুষের হৃদয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মানবজীবনের প্রতিটি অধ্যায় নানা অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার রঙে রাঙানো। কখনও তা আনন্দের, কখনও বেদনার, কখনও সংগ্রামের, আবার কখনও অফুরন্ত আশার। একইভাবে একটি জাতির ইতিহাসও গড়ে ওঠে তার ভূগোল, সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার আলোকে। আমার কাছে বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত কেবল একটি সীমারেখা নয়; এটি সংগ্রামের এক সিম্ফনি, আশার এক আলোকবর্তিকা, সম্ভাবনার এক অপার সেতুবন্ধন এবং এক দীর্ঘ যন্ত্রণার ইতিহাস।
এই বই রচনার মূল প্রেরণা ছিল সীমান্তের মানুষের অজানা ও অপ্রকাশিত গল্পগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরা। সীমান্ত মানেই শুধু সীমারেখা নয়Ñএখানে আছে জীবনের টিকে থাকার এক অদম্য সংগ্রাম, প্রকৃতির সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই, এবং দারিদ্র্যের আঁধার পেরিয়ে আশার প্রদীপ জ্বালানোর এক জীবন্ত উপাখ্যান। রাজধানী বা বড় শহরের আলোচনায় সীমান্তের এই অমূল্য বাস্তবতা অনেক সময় চাপা পড়ে যায়। অথচ এই অঞ্চল আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়নের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত।
এই বই লেখার পথে আমি প্রত্যক্ষ করেছিÑসীমান্তের মানুষের চোখে স্বপ্নের উজ্জ্বল দীপ্তি, হৃদয়ে বেদনার করুণ সুর, আর সংগ্রামের অটল সাহস। একদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দারিদ্র্যের ছায়া; অন্যদিকে সীমাহীন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত। আমি গভীরভাবে অনুভব করেছি, যদি এই সম্ভাবনাগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে দক্ষিণ সীমান্ত একদিন দেশের উন্নয়নচর্চার অনন্য মডেলে পরিণত হবে।
আমার প্রচেষ্টা ছিল শুধু তথ্য উপস্থাপন করা নয়, বরং প্রতিটি তথ্যের গভীরে লুকিয়ে থাকা মানবিক স্পন্দনকে পাঠকের অন্তরে পৌঁছে দেওয়া। যেন পাঠক পড়তে পড়তে শুধু জানা নয়, বরং অনুভব করেনÑসীমান্তের প্রতিটি ঢেউ, প্রতিটি হাওয়া, প্রতিটি মানুষের হাসি-কান্না ও নীরব কণ্ঠস্বর।
এই দীর্ঘ যাত্রায় আমি একা ছিলাম না। অনেকেই আমাকে উৎসাহ, সহযোগিতা ও প্রেরণা জুগিয়েছেন। বিশেষ কৃতজ্ঞতা আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণের প্রতিÑযাঁদের জ্ঞানের আলো ও প্রজ্ঞার দিকনির্দেশনা ছাড়া আমার গবেষণার এ পথ এতটা সহজ হতো না। আমার পরিবারÑযাঁরা নিঃস্বার্থভাবে আমার পাশে থেকেছেন, প্রতিটি ক্লান্তি দূর করেছেন, প্রতিটি স্বপ্নকে দৃঢ় করেছেনÑতাঁদের প্রতিও আমি হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
একই সাথে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রকাশনা কর্তৃপক্ষের প্রতি। তাঁদের নিষ্ঠা, সহযোগিতা ও নিরলস পরিশ্রমে এই গ্রন্থ আলোর মুখ দেখেছে। তাঁরা শুধু প্রকাশক নন, তাঁরা আমার ভাবনা ও স্বপ্নের এক বিশ্বাসী নির্মাতা। আমি প্রার্থনা করিÑআল্লাহ তাআলা তাঁদের প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং দ্বীনি ও মানবকল্যাণমূলক কাজের ক্ষেত্রে তাঁদের আরও সফলতা দান করুন।
এই বই লেখার সময় আমি কোনো একক সূত্রের ওপর নির্ভর করিনি, বরং তথ্য সংগ্রহ করেছি বহুমাত্রিক উৎস থেকে।যেমন: বিভিন্ন প্রামাণ্য গ্রন্থ, গবেষণাপত্র, প্রবন্ধ, ওয়েবসাইট, সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন, আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম এবং সীমান্ত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতাÑএসবই এই গ্রন্থের তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশেষ করে, দেশের স্বনামধন্য পত্রিকার আর্কাইভ থেকে অতীতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করে। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে একটি বিশ্লেষণাত্মক কাঠামোয় সাজানোর চেষ্টা করেছি, যাতে পাঠক একদিকে যেমন নির্ভরযোগ্য তথ্য পান, তেমনি জীবন্ত উপস্থাপনার আবেগও অনুভব করেন। এক্ষেত্রে তথ্যের উৎস ব্যাপক ও বিভিন্ন হওয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিটির সূত্র উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি, তবে প্রতিটি তথ্য যথেষ্ট চিন্তা ও যাচাই-বাছাই করে আমার নিকট যেটি অধিক গ্রহনযোগ্য মনে হয়েছে সেটি এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি।
পরিশেষে, আমি শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি সীমান্তের সেইসব অদম্য মানুষদের, যাঁরা প্রতিদিন নীরবে জীবনযুদ্ধে লিপ্ত। তাঁদের শ্রম, ঘর্মাত্তক কপাল,অশ্রুসিক্ত হাসি, আশা আর হতাশার গল্পই আমার কলমকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তাঁদের অসীম ধৈর্য ও সাহসই আমাকে দেখিয়েছেÑসীমান্ত শুধু একটি স্থান নয়, এটি জীবনের এক বুনন, যেখানে সংগ্রাম আর সম্ভাবনা একে অপরকে ছুঁয়ে চলে।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, “দক্ষিণ সীমান্তের উত্তাল হাওয়া” কেবল একটি বই নয়; এটি পাঠকের হৃদয়ে ঢেউ তুলবে, চিন্তার খোরাক জোগাবে, এবং সীমান্তের মানুষের সংগ্রাম, আশা ও সম্ভাবনার সঙ্গে পাঠকের অন্তরকে একাত্ম হতে সহায়তা করবে। প্রতিটি পাতা যেন সীমান্তের বাতাসের মতো জীবন্ত হয়ে ওঠে, আর প্রতিটি শব্দ যেন মানুষের অন্তর্গত কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি হয়ে প্রতিধ্বনিত হয়।