ভ্রমণকাহিনি কেবল কোনো জায়গার প্রকৃতি বা রূপ বর্ণনাই নয়, তার সঙ্গে অনুপান হিসেবে থাকতে হয় জায়গাটার ইতিহাস-ঐতিহ্য, মানুষ এবং তাদের জীবনযাপনের সুলুক-সন্ধানও। তবে তথ্য বা ইতিহাসের অনুপাত কতখানি হবে, তারও রয়েছে কিছু অলিখিত হিসাব। তথ্য-উপাত্ত এবং সাহিত্যরসের ভারসাম্য রক্ষা করে একটা উপাদেয় ভ্রমণবৃত্তান্ত উপস্থাপন করার ক্ষমতা একজন কুশলী ভ্রমণলেখকের বিরল গুণ। এই বইতে এসব উপাদান ও রসে জারিত সাতটি ভ্রমণগল্প পাঠককে নিয়ে যাবে জর্ডানের ইতিহাসের অলিগলিতে যেখানে থমকে আছে হাজার বছর আগের সময়, যার পরতে পরতে পাওয়া যাবে নানান জানা-অজানা তথ্য।
গ্রেকো-রোমান সময়ে জর্ডানের রাজধানী আম্মানের নাম ছিল ফিলাডেলফিয়া, আরব দেশ হলেও জর্ডানে যে একসময় গ্রিক রোমানদের জবরদস্ত উপস্থিতি ছিল-সেসব নিদর্শনের সুস্বাদু বর্ণনা ও ইতিহাস পাওয়া যাবে এই বইতে। নরম হলুদ গমের মতো মিঠে রোদমাখা আরাম পাওয়া যাবে ওয়াদিরাম মরুভূমিতে যাযাবর বেদুইনদের ঘরবাড়ি আর জীবনযাত্রার অনুপুঙ্খ বর্ণনায়। আবার পাওয়া যাবে একই মরুভূমিতে তাঁবুর ভেতর রাতের তারা দেখে রাত কাটানোর বিরল অভিজ্ঞতাও। প্রাচীন রূপকথার মতো অবিশ্বাস্য সুন্দর পাথুরে নগরী পেত্রার ভেতর ফারাও রাজাদের ধন ভান্ডারের দরজাও যেন খুলে যাবে বর্ণনার মুনশীয়ানায়। জর্ডানের মৃত সাগরের জীবন্ত বর্ণনার সঙ্গে এই সাগরটি সম্পর্কে বহু মিথ ভেঙে দিয়ে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান যুগের বাণিজ্য-আগ্রাসনে এই বিচিত্র সাগর যে ক্রমে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে লেখকের উদ্বেগের আভাসও পাওয়া যাবে এই বইতে।
ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি, সঙ্গীত, মঞ্চ নাটকসহ শিল্প-সংস্কৃতির নানান শাখায় নিজেকে জড়িয়েছেন। সাহিত্যের প্রতি প্রগাঢ ভালোবাসায় ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থায় দীর্ঘদিন কাজ করার সূত্রে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঘোরার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সংস্পর্শে গিয়ে তাদের জীবনকে নানাভাবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ মিলেছে। কর্মসূত্রে ছুটে বেড়ানোর সেই বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা থেকেই ভ্রমণের সুতীব্র ইচ্ছা আরও ডালপালা মেলেছে।
দীর্ঘ বিরতির পর ছোটোগল্পের মাধ্যমে আবারও লেখালেখির জগতে বিচরণ শুরু করেছেন। ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রথম গল্পগ্রন্থ, ‘সমুদ্রের কাছে দুঃখ জমা রাখি’।
ভ্রমণ করা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা এই সময়ে সবচেয়ে প্রিয় কাজ। বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভৌগোলিক বিভাজন সত্ত্বেও পৃথিবী নামক গ্রহের প্রতিটি স্থানে পা রাখার অধিকার মানুষের জন্মগত।