সুদীর্ঘকালের ঐতিহাসিকভাবে গৌরবদীপ্ত ও অনিবার্য ঘটনাবলির কারণেই টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে বিবেচিত হতে বাধ্য। এই জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নিরালা মোড় নামের ত্রিরাস্তার এক সঙ্গমস্থল―—যা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বৈচিত্র্যপূর্ণ স্মৃতিবাহিত স্থান হিসেবে কালের ভাস্বর হয়ে নিরবধি প্রবাহিত হয়ে চলেছে টাঙ্গাইলের পার্শ্ববর্তী বয়ে চলা স্রোতস্বিনী ধলেশ্বরীর মতোই। প্রবহমান ও জীবনদায়ী এই নদীর প্রবাহিত স্রোতের মতোই টাঙ্গাইলের রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলন, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা তথা যেকোনো ধরনের জাতীয় আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত ইতিহাস পেয়েছে এক অপরিহার্য পরিণত পর্যায়।
টাঙ্গাইলের গর্ব মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, রাজনীতির দিশারি ও ভাষাসৈনিক শামছুল হক থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত প্রথিতযশা অনেক গুণীজনের সময়োপযোগী সাহসী পদক্ষেপ ও তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠের নিরঙ্কুশ ও প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে নিরালা মোড় সবসময়ই থেকেছে অত্যন্ত সরব ও জীবন্ত।
উল্লেখ্য যে, করোনাভাইরাস নামক অতিমারির কবলে পড়ে ২০২০ সালের মার্চ থেকে নিরালা মোড়ের চাঞ্চল্য একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এরই প্রেক্ষাপটে নিরালা মোড়কে প্রতীকী অবয়বে কাব্যিক চিন্তায় পুঁজি করে ‘নিরালা মোড়’ শিরোনামে এক সিরিজ কবিতার ভেতর দিয়ে আমি চরমভাবে বিধ্বস্ত একটি সময়কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রাসঙ্গিক কারণেই এই দীর্ঘ কবিতায় প্রযুক্ত হয়েছে নিরালা মোড়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘ্যাগের দালান, শহিদ মিনার, সাধারণ গ্রন্থাগার (রমেশ হল), করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাব (সিডিসি), শ্যামাবাবুর খাল, বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, টাঙ্গাইল পৌরসভা, টাঙ্গাইল ক্লাব, শহিদ স্মৃতি পৌর উদ্যান এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঐতিহাসিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, নিয়ত জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্যের সৃজনশীলগণ ও সাধারণ মানুষজন―যারা নিত্য-নতুন অনুষঙ্গে অহর্নিশ মাতিয়ে রাখত এই নিরালা মোড়ের কর্মচাঞ্চল্যের নানা অনুষঙ্গ। এগুলোর ছবিসহ আলাদা আলাদা পরিচয় উক্ত গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি, বইটি পরবর্তী প্রজন্মের গবেষণাধর্মী কাজে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ‘নিরালা মোড়’ সিরিজ কবিতাটির ওপর ঋদ্ধ আলোচনা করে আমাকে ধন্য করেছেন ষাট দশকের অন্যতম কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব, সত্তর দশকের অন্যতম কবি মাহমুদ কামাল ও সোহরাব পাশা, সরকারি সা’দত কলেজের অধ্যক্ষ ও চর্যা গবেষক প্রফেসর আলীম মাহমুদ, সাংবাদিক ও গবেষক জুলফিকার হায়দার, কথাসাহিত্যিক রোকেয়া ইসলাম, নাট্যজন আলী হাসান ও প্রাবন্ধিক আলী রেজা। তাঁদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব নিয়ে বইটি প্রকাশে সহযোগিতা করেছেন আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সৃজনশীল মানুষ মো. লোকমান হোসেন। তাঁকে জানাই অকৃত্রিম ভালোবাসা ও নান্দনিক শুভেচ্ছা।
ইতিহাসভিত্তিক কাব্যগ্রন্থ ‘নিরালা মোড়’ পাঠক ও সুধীমহলে সমাদৃত হলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।
১৯৭৬ সালের ৩ জানুয়ারি ঘাটাইলের এম. গলগন্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি লাভ করে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। পিতা- মির্জা সৈয়দ আলী, স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মাতা- সবজান বেগম, সুগৃহিণী। স্ত্রী- রেখা মির্জা দর্শনশাস্ত্রে বিএ (সম্মান)সহ এমএ ও একমাত্র সন্তান যারীন তাসনিম মুগ্ধকে নিয়ে তার যাপিত সংসার। কাব্যগ্রন্থ : স্বপ্নের ভেতর এক স্বপ্ন (২০০৫), ঘাসফুল কিংবা শ্রাবণের জল (২০১০)। ছড়াগ্রন্থ : মুগ্ধ হাসে ফোকলা দাঁতে (২০২০)। সম্পাদিত সাহিত্যকাগজ : অমৃত অন্বেষা। স্বীকৃতি: টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার (২০২০) কবি আযাদ কামাল শিক্ষানুরাগী এবং দক্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠক। তিনি ঘাটাইলের সিংগুরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত ‘সিংগুরিয়া মহিলা বি.এম কলেজ’র উদ্যোক্তা ও অধ্যক্ষ। তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ, টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ’র সহ-সাধারণ সম্পাদক।