শৈশব থেকে সংবাদপত্রে দেখি এ দেশের নাম ও সংকট। ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও ইসরাইলের বসতি স্থাপন। দেখি ইহুদীদের নির্মমতা ও বর্বরতার দৃশ্য। পড়ি সংবাদপত্রের শিরোনামে ফিলিস্তিনিদের কষ্টের কথা। যায়নবাদী ইহুদীদের আগ্রাসনের কথা পড়ি এবং কষ্ট অনুভব করি হৃদয়ে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন এই সমস্যা ও সংকটের মূল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে শুরু হয় এই সংকট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কী সালতানাত দুর্বল হয়ে যাওয়ার ফলে খণ্ড বিখণ্ড হয় মধ্যপ্রাচ্য। বেহাত হয় ফিলিস্তিন। পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের বাইতুল মুকাদ্দাস। ঐতিহাসিক নগরী জেরুসালেম। তিন ধর্মের কাছেই পবিত্র এ নগরী। এই শহরকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয়েছে ক্রুসেড। বীর সালাহ্উদ্দীন আইয়ূবী রহ.-এর বীরত্বের কাহিনী এই শহরকে কেন্দ্র করেই। দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর রা.-এর ফিলিস্তিনে সফরের কাহিনীও ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়।
সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন ও আমেরিকার যৌথ প্রকল্প ইসরাইল। সুরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে বনী ইসরাইলের কুচরিত্র। বিশ্বাসঘাতকতা। অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। নবীহত্যাও করেছে অভিশপ্ত এই জাতি। দেশহীন এই জাতিকে ব্রিটেন নিজ দেশে বা ইউরোপে ঠাঁই না দিয়ে তাদেরকে স্থান দেয় মধ্যপ্রাচ্যে। চার হাজার বছর থেকে ইতিহাসে রয়েছে ফিলিস্তিন।
অর্থ, অস্ত্র ও নানামুখী সহযোগিতা করে পশ্চিমা বিশ্ব লালন করে তাদের অবৈধ সন্তানকে। দুধকলা দিয়ে পোষে। গত শতাব্দীতে ইসলামী খেলাফতের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি, ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, ইরাক-কুয়েত সমস্যার পর জাযিরাতুল আরবে ইহুদী-নাসারা-মুশরেক চক্রের আগ্রাসন; এই তিন ঘটনায় বিপর্যয়ের শিকার মুসলিম জাহান। এই শতাব্দীতে ৯/১১ পর “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রকল্পে” তথ্যসন্ত্রাসের শিকার মুসলিম উম্মাহ।
অসলো এক্ট, ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিসহ কোনো রোডম্যাপই শান্তি দেয়নি ফিলিস্তিনিদের। মুক্তিকামী জনতার হামাস নেতা শায়খ আহমদ ইয়াসিন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে শহীদ করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে ইয়াসির আরাফাতকেও। গুপ্তহত্যায় অতীত থেকেই পারদর্শী ইহুদী জাতি। নবীকেও তারা হত্যা করেছে। কূপে নিক্ষেপ করেছে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে। আসমানি খাবার মান্না-সালওয়া পেয়েও আল্লাহর প্রতি হয়েছে অকৃতজ্ঞ। নবীজীকে হত্যার নিয়তে বিষ প্রয়োগ করেছে। মদীনা সনদ মেনে নিয়েও তারা মক্কার মুশরিক ও মদীনার মুনাফিকদের সহযোগিতা করেছে। তাদের অপকর্মের কারণে নির্বাসন দেয়া হয়েছে মদীনা মুনাওয়ারা থেকেও। পৃথিবী অভিশপ্ত এই জাতির কোনো দেশ ছিলো না। গাদ্দার এই জাতিকে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখায় ব্রিটেন। আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যে রেখেছে তাদের স্বার্থরক্ষার তল্পিবাহকরূপে। পশ্চিমাদের মদদে সাত দশক থেকে ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যা করছে। উচ্ছেদ করছে ভিটেমাটি থেকে।
৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাস তুফানুল আকসা অভিযান পরিচালনা করে। দুঃসাহসী অভিযান। অনেকের ধারণা ইসরাইল অজেয়। দুর্ভেদ্য আকাশ সীমা ইসরাইলের। আইরন ডোমে পরিবেষ্টিত। হামাস সব ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত করে দম্ভ চূর্ণ করেছে ইসরাইলের।
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল ছয় দিনের যুদ্ধে আরব পরাজিত হলেও হামাসকে ছয় মাসেও পরাজিত করা সম্ভব হয়নি। সুড়ঙ্গে অবস্থান করে এবং নানা কৌশলে হামাস বীরের ভূমিকা রেখেছে। এ পর্যন্ত গাযার নিরীহ নাগরিক শহীদ হয়েছে ৩৮ হাজার। আহত হয়েছে লক্ষাধিক। এরপরও যুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছে হামাস।
‘ফিলিস্তিনে মুক্তিযুদ্ধ’ গাযা-ইসরাইল যুদ্ধের সময়কে ধারণ করে কিছু কথা লেখার চেষ্টা করেছি। পাঠক সমীপে দুআ কামনা।
ফিলিস্তিন মুক্ত হোক। স্বাধীন।
মুসলিম উম্মাহ জেগে উঠলে স্বাধীনতার পতাকা উড়বে ফিলিস্তিনের আকাশে। আল্লাহ আমাদের জেগে ওঠার তওফীক দিন।