ফ্ল্যাপে লিখা কথা ফিহির হোসাইনের লেখার সাথে আমার বিশেষ পরিচয় ‘মিথ্যের ভাঁজ’ উপন্যাসের পা-ুলিপি পড়তে গিয়ে। তাঁকে জানি নতুন লিখিয়ে হিসেবে। সে নতুনত্বের স্বাদ পেলাম তাঁর এ লেখায়। তাজা টাটকা প্রকাশ, সতেজ সজীব ভঙ্গি, স্বচ্ছ সরল গতি- নতুনের ওপর বিশেষত্ব ‘মিথ্যের ভাঁজ’কে স্বতন্ত্র করেছে নিঃসন্দেহে। অনেক নতুন লিখিয়ে প্রথমেই পাকা হাতের লেখা লিখে নিজের ব্যুৎপত্তি দেখাতে গিয়ে অকাল প্রবীনত্বকে বরণ করে নেন, সে ভুল করেন নি ফিহির হোসাইন। তিনি নিজের কথা নিজের মতো করেই বলার চেষ্টা করেছেন স্বতঃস্ফূর্ত সাবলীলতায়। তার চেষ্টা তাঁর চারপাশের চেনা-জানা মানুষ, তাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সমসময়ের পরিবেশ, পরিস্থিতিকে একটি কাহিনীবৃত্তে ধারণ করা। এই সূত্রে ভিড় করে আসে একে-একে অনেক চরিত্র। স্বাভাবিক ভাবেই আসে তারা। তাই তাদের চলন বলন এমন যে মনে হয় কোথায় দেখেছি এই মানুষগুলোকে কিংবা এখনও তো দেখছি! আসলে ‘মিথ্যের ভাঁজ’ এই সময়ের এক জীবনছবি। কল্পনাবিলাসী কোন ফ্যানটাসি ফিকশন নয়। পড়তে-পড়তে মনে হবে কোথায় শুনেছি এ ঘটনা, কোথায় পড়েছি এমন একটি খবর। ফিহির হোসাইনের কৃতিত্ব এখানেই। প্রথম উপন্যাসের এ কৃতিত্ব তাঁর অব্যাহত থাকুক এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি করুক- এই কামনা করি। স্বাগত জানাই ‘মিথ্যের ভাঁজ’কে, অভিনন্দন জানাই লেখক ফিহির হোসাইনকে।
বহুমাত্রিক কবি ও কথাসাহিত্যিক সাযযাদ কাদির
লেখকের কথা চলতে গিয়ে দেখি-খবরের কাগজে পড়ি, সংবাদ শিরোনামে শুনি আর লোকমুখে চায়ের আড্ডায়। ভাবি, বারবার ভাবি, অসংখ্য বার ভাবি। কে যেনো তাড়া করে, তাড়না জোগায়, অনুপ্রাণিত করে-স্কুলের মাস্টারের মতো পেছন থেকে বেত হাতে। আৎকে উঠে শিহোরিত হই অদৃশ্যের জোর ধাক্কায়, মানবিকতার প্রশ্ন জাগে, দায়বদ্ধতায় বন্ধি হই, মাতাল হই করুণ বীণে আর লজ্জিত কতগুলো চাহনির কাছে, তাই বাধ্য হয়ে হাতে তুলে নেই কলম-সাদা কাগজের কিছু পৃষ্ঠা, লেখি-বর্ণবিভেদহীন সব ধর্মের, সব জাতির নিত্যবেলার নিত্যকথা। তবুও দেখি বাঁকা চোখের ব্যাঙ্গ দৃষ্টি॥
থেমে থাকিনি, দূরেও চলে যাইনি, লিখে যাই সবার কথা। তারই স্বাক্ষ্য স্বরুপ আমার এই “মিথ্যের ভাঁজ” উপন্যাসটি।
একটি সত্য ঘটনা প্রকাশের দুঃসাহিক অভিযানে নেমে ইমু আটকে যায় বেড়াজালে। রাতের আঁধারে তাকে পালিয়ে যাবার পথ দেখিয়ে দেয়া হয় পরোক্ষভাবে। তবুও সে তার সত্য প্রকাশে ছিলো অনঢ়। তাকে এও বলা হয়-“ইমু সাহেব, হয় সত্যের পথ না হয় ফাঁসির মঞ্চ’’। ইমু তবুও অপেক্ষার পহর গুণে। সত্য প্রকাশের অপেক্ষায় বসে থাকে। কিন্তু একের পর এক বানানো মিথ্যে কথায় তাকে জড়িয়ে দেয়া হয় চরমভাবে......এমন এক দুঃসাহসিক কাল্পনিক ইমু চরিত্র নিয়ে রচিত এই উপন্যাসটি। তার ঘটনা প্রবাহকে এমন ভাবে সাজানো হয়েছে, তা যে কোনো মানুষের সাথেই মিলে যেতে পারে। মনে হতে পারে, এটি তার জীবনের-ই ঘটে যাওয়া কোনো এক অংশ। উপন্যাসটি কাল্পনিক হলেও সম্পূর্ণ বাস্তবভিত্তিক ও সম-সাময়িক। আশা করি, পাঠকের মনে একটু হলেও দাগ রেখে যাবে।
লেখক পরিচিতি বর্তমানে ঢাকা কর্মাস কলেজে অর্থনীতি বিভাগের সম্মান (অর্নাস) ৩য় বর্ষের ছাত্র। এই বইটি তার জীবনের প্রথম উপন্যাসের বই। তার আগে “আজ রবিবার” নামে একটি ছোট গল্পের বই প্রকাশিত হয়। যে গল্পগুলোর মধ্যে “বারগার” গল্পটি “খেলা ক্রিয়েশন” এর পরিবেশনায় স্বল্পদৈর্ঘ্যরে চলচিত্র বানানো হয়। যা আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় আর্ন্তজাতিক চলচিত্র প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়।
তিনি গল্প লেখা শুরু করেন ২০০৯ থেকে। দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, লিটলম্যাগ সহ, ত্রৈমাসিক পত্রিকাগুলোতে গল্প ও কবিতা লেখালেখি করছেন। তার জন্ম ১০-ই ফেব্রুয়ারী কুমিল্লা জেলার অধীন বরুড়া থানার মুগুজি ভূঁইয়া বাড়ীতে। আর নিজ দেশের বাড়ী হচ্ছে মনোহরগঞ্জ থানার তাহেরপুর মিয়া বাড়ী।
ফিহির হোসাইন ভালোবাসা প্রিয় একজন মানুষ। বিচিত্র ভালোবাসায় ডুবে থেকে খুঁজে থাকেন প্রকৃত সুখ। ‘তিন বন্ধু’ গল্প দিয়ে সাহিত্যের উঠোনে প্রবেশ। দ্যাখতে দ্যাখতে এক যুগ হারিয়ে যায় জীবনের আনন্দপাল থেকে সাহিত্যের সাথে। ‘এরি নাম ভালোবাসা’ গল্প দিয়ে সিনেমার পর ‘বারগার’ গল্প দিয়ে শর্ট ফিল্ম আর্ন্তজাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ‘বারগার’ ফিল্মটি দেখানো হয়। ‘মিথ্যের ভাঁজ’ উপন্যাসটি পাঠক মন কাড়ায় টানা ৪ বছর প্রকাশ পায় একই প্রকাশন থেকে। ‘আজ রবিবার’, ‘শূন্যের কাছাকাছি’ ও ‘আকাশের জলে তোমায় খুঁজি’ গল্পগ্রন্থ ছাড়াও মাসিক ‘জলপাই’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ সময় ছিলেন। এছাড়া মাইকেল মধুসূন, রবীন্দ্রনাথ, কবি নজরুল, আবুল মনসুর ও হুমায়ুন আহমেদসহ বিশিষ্ট গুণিজনদের জীবনী গাঁথা প্রবন্ধ বিভিন্ন দৈনিকে ছাপানো হয়। সাহ্যিতাঙ্গটি সাজিয়ে রাখেন ড্রয়িং রুমের মতো। মনন বিলাসে আনন্দ সময়ে হারিয়ে যাওয়ার এক অনন্য দিগন্ত এই অঙ্গনটিকে মনে করেন। বিচিত্র শব্দের মাঝে খুঁজেন প্রকৃতির সবুজ-হলুদ প্রেম। মেঘ- কুয়াশায় ঢাকা আরামের সকাল ও ডুবন্ত সূর্যের বিকেল। গল্প, উপন্যাস, ছাড়াও প্রবন্ধ ও কাব্য লিখেন। একুশের মাসেই জন্ম। শুধু সংখ্যাটি হলো ১০। বাংলার একজন সৈনিক হিসেবে মাইলস্টোন কলেজে কর্মরত ছিলেন। এখনো বাংলার একজন নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলা ভাষা বর্ণের সবচেয়ে প্রিয় বর্ণটি হলো বহুরুপি বর্ণ ‘অ’। মানব সমাজের বিচিত্রময় বহুরুপি ঢং যেনো এই বর্ণের মাঝে লুকিয়ে আছে। আজন্মকাল ভালোবাসে ও ভালোবাসা দিয়ে কাজ করে যেতে চান। কারণ, কর্মের মাঝে লুকিয়ে থাকে জীবনের সুখ।