রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি। তিনি বাঙালি জাতি ও বাঙালি সংস্কৃতির স্রষ্টা। তাঁর সমসাময়িককালে বাঙালি হিন্দু-মুসলমান সম্রদায় ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সমস্যায় জর্জরিত ছিল। তিনি উভয় সম্প্রদায়কে নিয়ে একটা জাতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তাই ‘নেশন’-এর স্বপ্নও দেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বাঙালি একটি খণ্ডিত ভূখণ্ড পেয়ে একটি রাষ্ট্র ও জাতিসত্তা পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথ সর্ম্পকে মুসলমান বাঙালিরা প্রায় একশত বছর যাবত ক্ষোভ প্রকাশ করছে। উত্থাপিত হয়ে আসছে এমন একপেশে কথাÑযেমন রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি বটে তবে তিনি মুসলমানদের জন্যকী করেছেন? আবার একশ্রেণীর উগ্র মুসলমানদের অভিযোগ-তিনি হিন্দু কবি, তিনি মুসলমানদের নিয়ে কিছু লিখেন নি, বরং মুসলমানদের প্রতি তিনি বিদ্বেষ পোষণ করতেন। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ ‘কোরান’ উলটিয়েও দেখেন নি। একশ্রেণীর রবীন্দ্র-বিরোধীর এ ধরনের ক্ষোভ অভিযোগের সারসত্তা কিছু নেই; রবীন্দ্রনাথ প্রতিবেশী মুসলমানদের নিয়ে চিরজীবন ভাবিত ছিলেন। তাঁর জমিদারির কর্মক্ষেত্র ছিল মূলত মুসলিম প্রধান পূর্ববঙ্গ। পশ্চাৎপদ মুসলমান ক্রমশ শিক্ষিত ও সচেতন হয়ে জানতে পারছে রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে সত্যি কী ভেবেছেন আর কতটুকুই-বা ভেবেছিলেন। পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথ অনাদরে থাকলেও বর্তমান বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ কি উপযুক্ত সমাদর পাচ্ছেন?-এ বিশ্লেষণ এ গ্রন্থে বিশেষভাবে উঠে এসেছে। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে জানার চেষ্টা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কী চিন্তা করেছেন। আশা করি, বর্তমান গ্রন্থটির প্রয়োজনীয় তথ্য ও বিশ্লেষণ রবীন্দ্রনুরাগীসহ পাঠকসাধণের মনে এ বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করে রবীন্দ্রচিন্তায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিবে।
শামসুল আলম সাঈদ, জন্ম ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ইছাখালি গ্রামে। পিতা : সৈয়দুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. এবং চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনায় যােগ দিয়েই। চাকরি ছেড়ে একাত্তরের প্রতিরােধ সংগ্রাম এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আবাল্য সাহিত্য চর্চা করেছেন, ১৯৬৯ সালে প্রথম কবিতার বই প্রকাশ এবং পরে কবিতা, গল্প, উপন্যাস গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ওমর খৈয়াম ও হাফিজের কাব্য ও দর্শন-চর্চা গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে। তার প্রাচীন বাংলা সাহিত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা গ্রন্থও রয়েছে। বিশ্বভারতীর শান্তি নিকেতন থেকে। ১৯৮২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ।