পৃথিবীর আধুনিক বিপ্লব ও সংগ্রামের ইতিহাসে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনেক। সংবাদপত্র বা খবরের কাগজ হল একটি লিখিত প্রকাশনা যার মধ্যে থাকে বর্তমান ঘটনা, তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ, সম্পাদকীয়, বিভিন্ন ফিচার এবং বিজ্ঞাপন। এটি সাধারণত স্বল্প-মূল্যের কাগজে মুদ্রণ করা হয় যেমন- নিউজপ্রিন্ট। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের আগে এই উপমহাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশের কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ মেলে না। ১৭৮০ সালে জেমস অগাস্টাস হিকি স্থানীয় ইংরেজদের জন্য বেঙ্গল গেজেট বা ক্যালকাটা জেনারেল অ্যাডভার্টাইজার নামে দুই পাতার একটি সাপ্তাহিক প্রকাশ করেন। কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংস, তার পত্নী ও ইংরেজ বিচারকদের সম্পর্কে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের দরুণ এটিও দ্রুত বাজেয়াপ্ত হয়। ১৮১৮ সালের গোড়ার দিকে রাজা রামমোহন রায়ের সহায়তায় শিক্ষক ও সংস্কারক গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্য প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক বেঙ্গল গেজেট প্রকাশ করেন। পত্রিকার শহর খ্যাত ফেনী থেকে প্রথম কোন পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে এ নিয়ে বিস্তর মতান্তর রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯১২ সালে ফেনীর প্রথম পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। বায়ান্নর ভাষা সৈনিক ফেনীর আলোকিত সন্তান গাজীউল হকের পিতা মাওলানা সিরাজুল হক ছিলেন ওই পত্রিকার সম্পাদক। পাকিস্তান আমলে ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ‘নব নূর’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদক ছিলেন মহিউদ্দিন আহমদ। পত্রিকাটি অর্ধ সাপ্তাহিক ছিল বলে জানা যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে ফেনী থেকে প্রথম পত্রিকা প্রকাশিত হয় এ. অদুদ সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘পথ’। এ বইটিতে সূচিবদ্ধ করা হয়েছে- প্রথম পত্রিকা ও অন্যান্য, পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশ আমল, জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদদাতা ছিলেন যারা, আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা, ঢাকায় কর্মরত যারা, সাংবাদিক সংগঠন ও সাংবাদিক, আরো সাংবাদিক ও সংবাদপত্র, সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নসহ আরো নানা গুরুত্বপূর্ন বিষয়। জাতীয় গণমাধ্যমে এ জনপদের অনেক সাংবাদিক বর্তমানে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁরা যেমন স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে প্রথম সারির মূল্যায়ন পান, তেমনি স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত পত্রিকাসমূহও অনেক সমৃদ্ধ। অর্ধশত এর বেশি পত্রিকা এখান থেকে নিয়মমিত প্রকাশিত হয়ে থাকে। তাই অতীত ও বর্তমান ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে এ বইটি ফেনীবাসীসহ দেশের সংবাদপত্রের গবেষকদের জন্য একটি মূল্যবান বই হিসেবে বিবেচিত হবে। এ বইটির লেখক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন নিজেও একজন এ সময়ের দক্ষ সাংবাদিক। এই কর্মনিষ্ঠ কাজের জন্য অবশ্যই তিনি প্রশংসার দাবিদার।
মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন। সাংবাদিক ও লেখক। জন্ম: ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৫ সাল। পৈতৃক নিবাস: ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার মমারিজপুর গ্রাম। পিতা: আহমদ উল্ল্যা। মাতা: বিবি খাদেজা। ১৯৯৫ সালে চৌমুহনী এস এ কলেজ থেকে স্নাতক এবং পরে ফেনী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০০৫ সালে সাপ্তাহিক ‘আলোকিত ফেনী’ প্রকাশনার মধ্য দিয়ে সম্পাদক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সাল থেকে তাঁরই সম্পাদনায় দৈনিক ‘ফেনীর সময়’ সম্পাদনা করে আসছেন। এছাড়া ‘দৈনিক নয়াদিগন্ত’র ফেনীর স্টাফ রিপোর্টার এবং ‘নতুন বার্তা ডটকম’ এর ব্যুরো চীফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: গবেষণা: ফেনীর সাংবাদিক ও সংবাদপত্র (২০১৫)। পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা: তিনি ২০০৮ সালে দৈনিক নয়া দিগন্ত সেরা রিপের্টার পুরস্কার, ২০০৬ সালে তারুণ্য সম্মাননা, ২০০৯ সালে আইনের দর্পণ স্বর্ণপদক, ২০১০ সালে পরিবর্তন সম্মাননা, ২০১০ সালে পূবালি সম্মাননা ও ২০১৩ সালে বন্ধুর বন্ধন সম্ম্নাননা লাভ করেন। মোহাম্মদ সাঈদুল হক সাঈদ: আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল। পিতা: মো. হাসমত উল্লাহ ও মাতা: শায়রা খাতুন। পৈতৃক নিবাস: দাগনভূঁইয়া উপজেলার চন্ডিপুর গ্রাম। তিনি ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগে সম্মানসহ স্নাতক, ১৯৯৬ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।বর্তমানে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস্ রিভিউ সোসাইটি এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালক। প্রকাশিত গ্রন্থ: কবিতা: বিচারের বাণী কাঁদে (২০০৫), মুক্তির মিছিল (২০০৭) অমানিশি হৃদয় (২০০৫), রংধনুর হাসি (২০০৭), এক সুখ পাখি (২০০৭)। সম্পাদক: মাসিক মানবাধিকার আন্দোলন। পদক, পুরস্কার ও সম্মাননা: তিনি লিও ক্লাব অ্যাওয়ার্ড, লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল পদক, রোটারী ইন্টারন্যাশনাল পদক, জার্নালিষ্ট সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইর্টস এন্ড ওয়েলফেয়ার পদক, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল, নবকল্লোল শিল্প সাহিত্য ও বিজ্ঞান চর্চার সংগঠন, বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন (ভারত) সম্মাননা, সেবা উৎসব (ভারত), উৎসব ললিতকলা একাডেমী সম্মাননা পদক (২০০৭), কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক (২০০৭), সালেহীন মেমোরিয়াল সম্মাননা পদক (২০০৭), শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকর স্বর্ণপদক (২০০৭), ধারা স্বর্ণপদক (২০০৭), সুধিজন সাহিত্য সংঘ সম্মাননা সনদ (২০০৯) লাভ করেন।