ইসলামের সমুদয় বিধি-বিধানের মধ্যে সালাতই একমাত্র ইবাদাত, যা আদায় করা না করার মধ্যে রয়েছে ঈমান থাকা না থাকার ঝুঁকি, মুসলমান হওয়া না হওয়ার সম্পর্ক। রাসূলুল্লাহ (স)-এর বাণী অনুযায়ী, কোনাে মানুষ মুসলিম আছে কি না তার পরিচয় পাওয়া যাবে কেবল তার সালাত আদায়ের মাধ্যমে। এ কথার মর্মার্থ হলাে, সালাত আদায় করা সত্যিকার মুসলিম হিসেবে গণ্য হওয়ার পূর্বশর্ত। মুসলমানের সন্তান বলে আমি মুসলিম- সালাত আদায় না করা সত্ত্বেও এমন জোরপূর্বক স্বঘােষিত দাবি হাদীসের মর্ম অনুয়ায়ী টেকে না। বেনামাযীদের ব্যাপারে হাদীসে অনেক ভয়ানক দুঃসংবাদ রয়েছে। এমনকি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায না পড়লে অন্য ইবাদাতও কবুল হয় না, এমনকি হজ্জও না। অপরদিকে আরেক দল আছে নামায পড়ে, কিন্তু তার নামায নবীজীর নামাযের মতাে নয়। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র) বলেছেন, আমি সত্তরটিরও বেশি মসজিদে সালাত আদায় করতে গিয়ে দেখলাম, লােকেরা নবীজির মতাে করে সালাত আদায় করছে না। রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর জীবদ্দশায়ও কাউকে কাউকে বলেছেন, তােমার আদায়কৃত নামায হয়নি, তুমি যেন নামায পড়ইনি, তুমি নতুন করে আবার তা আদায় কর। তিনি এটাও বলেছেন যে, এমন বহুলােক আছে, যারা নামায ঠিকই পড়ছে কিন্তু তা যােলাে আনা সঠিক হচ্ছে না। যােলাে আনার মধ্যে কারাে কবুল হচ্ছে মাত্র দু আনা, কারাে কবুল হচ্ছে চার আনা, কারাে বা ছয় আনা বা আট আনা বা দশ আনা, কারাে কারাে বারাে আনা বা চৌদ্দ আনা কবুল হচ্ছে। অর্থাৎ রাসূলের সালাতের মাপকাঠিতে তার নামায পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না। কাউকে কাউকে তিনি নামায চোরও বলেছেন। কিয়ামতের বিভীষিকাময় মাঠে এমন ভাঙাচুড়া অপূর্ণাঙ্গ নামায নিয়ে হাজির হওয়া নিশ্চয়ই কারাে কাম্য নয়। তাহলে এ থেকে উত্তরণের উপায় কী? উত্তর সহজ, পথও সহজ। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, তােমাদের সালাতগুলােকে আমার সালাতের মতাে করে নাও। দ্বিতীয় প্রশ্ন আসে, আমরাতাে হানাফী মাযহাবের গণ্ডির মধ্যে আছি। এ থেকে নড়াচড়া করতে পারব কি না? এ উত্তরও সহজ। আমাদের মাযহাবের ইমাম আবু হানীফা (র) বলেছেন, কেউ যদি সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করে তাহলে এটাও আমারই মাযহাব অনুযায়ী আমল হয়েছে বলে গণ্য হবে। এ কথা দ্বারা বুঝা যায় তিনি শুধু মুখলেসই ছিলেন না; বিজ্ঞও ছিলেন। তাঁর এ উক্তির পর সমস্যার আর
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের সিরাজনগর (নয়াচর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মরহুম মোঃ চান মিয়া ও মরহুমা সালেহা বেগমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। উপজেলার শত বছরের গৌরবোজ্জ্বল আদিয়াবাদ হাইস্কুল থেকে ১৯৭৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ফার্স্ট ডিভিশনে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭৫-৭৬ সেশনে ঢাকা কলেজে অধ্যায়ন এবং পরে ১৯৭৭ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে ফার্স্ট ক্লাশ পেয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথম জীবনে তিনি স্কুল-কলেজের ছাত্র ও গণিতের শিক্ষক ছিলেন। ১৯৮১ সালে সৌদি বাদশাহ’র গৌরবময় শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে মক্কা শরীফের উম্মুলকুরা ইউনিভার্সিটিতে গমন করেন। সেখানে তিনি এরাবিক ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউট ও অনার্স কোর্সে বিভিন্ন দেশের স্কলারদের নিকট দীর্ঘ দশ বছরকাল আরবী ভাষা, নাহু-ছরফ, তাফসীরুল কুরআন, হাদীস ও ফিক্হ শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে সৌদি আরবের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও পবিত্র কাবা’র সম্মানিত ইমাম শাইখ ড. সালেহ বিন হুমাইদ ও কাবা’র আরেক সম্মানিত ইমাম ড. উমর আস্-সুবাইল রাহেমাহুল্লাহ অন্যতম। জনাব নূরুল ইসলাম দেশে ফিরে ১৯৯৬ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনায় রত আছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদানের জন্য তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভারত, আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মিশরসহ অনেক দেশ সফর করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে অদ্যাবধি টিভি-চ্যানেল ‘এটিএন বাংলা’র প্রভাতের দারসে হাদীস অনুষ্ঠানের তিনি একজন নিয়মিত আলোচক। তাঁর সহধর্মিণীর নাম আঁখিনূর বেগম (এমএ ইসলামিক স্টাডিজ)। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ২০টি। তন্মধ্যে উলেখযোগ্য হলো- (১) কুরআন কারীমের মর্মার্থ ও শব্দার্থ (ত্রিশতম পারা), (২) বিশুদ্ধ তিলাওয়াত পদ্ধতি, (৩) বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে ওযূ-গোসল, (৪) যেভাবে নামায পড়তেন রাসূলুলাহ [স] (৫) প্রশ্নোত্তরে জুমুআ ও খুৎবা, (৬) প্রশ্নোত্তরে যাকাত ও সদাকাহ, (৭) প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ, (৮) প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা, (৯) উমরা কিভাবে করবেন?, (১০) প্রশ্নোত্তরে কুরবানী ও আকীকা, (১১) শুধু আলাহর কাছে চাই (দু‘আ-মুনাজাতের বই), (১২) উঁধ ইড়ড়শ রহ অৎধনর ইধহমষধ ঊহমষরংয, (১৩) আকীদা ও ফিক্হ (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী), (১৪) চরিত্র গঠনের উপায়, (১৫) কবর কিয়ামাত আখিরাত।