শাহ্রিয়ার তকী আফিন্দীর পরিচয় সে এখন লন্ডনের বাসিন্দা। আমি হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম, এই ভদ্রলোক এখন ইংল্যান্ডে থাকেন। যদিও পরিচয়ের শুরু থেকেই স্বচ্ছ দৃষ্টির এই যুবকটিকে আমি সিলেটের জলবায়ুতে বেড়ে উঠা এক দূরন্ত প্রাণ হিসেবেই চিনি। এই পরিচয়ের পর তার আরেকটি পরিচয়ে আমার মনে শঙ্কা জাগে। তিনি লেখালেখি করেন। এই কালে সবাই লেখালেখি করেন। কিন্তু লেখা হয়ে উঠে কয়টা সেই প্রশ্ন কেউ করে না। তাই আগ্রহ নিয়েই তাঁর একটা ছোট গল্প পড়ি। আমার আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়।
ছোট গল্প লেখার নানা ধরণের ব্যাপার স্যাপার আছে। আমি গল্প পড়ে আরাম পাচ্ছি কিনা সেই বিষয়টাকেই বিবেচনায় রাখি, লেখার সময়ও সেই ব্যাপারটা নজরে থাকে। আফিন্দী সাহেব আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেন প্রথম গল্পটাতেই। গল্পের নাম ‘জুতা’। আমি সিলেটে যাইনি, কিন্তু ক্ষুধার্ত দুই চরিত্রের সাথে আমিও সিলেটের পথে নেমে পড়ি। ছোট গল্পের শেষ থাকতে হবে কিংবা হবে না, এ নিয়ে বিস্তর আলাপ-সালাপ আছে। আমি সেইসব আলাপে যেতে চাই না। তবে গল্পের শেষটায় পাঠক ধাক্কা খাবেন, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
এরপর একে একে গল্প এলো। দ্বিতীয় গল্প ‘গৌরা’। গল্প নিয়ে নিরীক্ষা অনেকেই করেন। নতুন লেখকদের অনেকে ঝুঁকি নেন, অনেকে নেন না। আফিন্দী সাহেব ঝুঁকি নিয়েছেন। চরিত্রদের নামকরণ ছাড়াই একটা গল্প কিভাবে এগিয়ে যায় এবং পরিণতি পায়, এই গল্পটা তার চমৎকার একটা উদাহরণ।
এরপর একে একে আছে আরও চারটি গল্প। গল্পগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল। আফিন্দী সাহেব অল্প কথায় অনেক কিছু বলেন। বাক্যগুলো মনের মধ্যে চাপ তৈরি করতে থাকে, এবং একসময় সেই চাপটা দূরে কোথায় মিলিয়ে যায়, পাঠক হিসেবে এই অনুভূতিটা আনন্দের।
আগেই বলেছি আমি সিলেটে যাইনি, কিন্তু গল্পে গল্পে আম্বরখানা জিন্দাবাজার শাহী ঈদগাহ, মীরবক্সটুলা, চন্দনটুলা, চৌহাট্টা পয়েন্ট, মদিনা মার্কেট সব চিনে ফেলেছি এরকম বোধ হচ্ছে। আবার একই সাথে লেখক যে তার বৃটিশ আবহাওয়াটাও ধীরে ধীরে রপ্ত করে নিচ্ছেন তার চিহ্ন একটি গল্পে বেশ অনুভূত হয়েছে।
এই সংকলনটি ই-বুক হিসেবে লেখক প্রকাশ করতে যাচ্ছেন। এটাও একটা বড় ব্যাপার। আমাদের প্রকাশনা জগতে ছোট গল্প প্রকাশ করার ঝুঁকি নেয়ার ক্ষেত্রে প্রকাশকরা হয়তো লেখকদের প্রোফাইল দেখেন, তাঁর সামাজিক মাধ্যমের অনুসারিদের হিসাব করেন। নতুনদের নিয়ে কাজ করার মানসিকতা হয়তো অনেকেরই থাকে না। আফিন্দীর এই ই-বুক প্রকাশ নতুন একটা বার্তাই দেয়। লেখক লিখে সেটা ফেলে রাখবেন না। প্রকাশ করবেনই। সেটা তখন পাঠকের। আমি আশা করি, সময় এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়াই বলে দেবে শাহ্রিয়ার তকী আফিন্দী লেখালেখিতে দীর্ঘস্থায়ী একটা স্থান দখল করে নেবেন।
আমাদের ছোট গল্পের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। আফিন্দী'র ছোট গল্পে যাত্রাটা মসৃণ হোক, আরও অনেক ছোট গল্প তাঁর কলম থেকে একে একে প্রকাশ হতে থাকুক এই কামনা করি।