আন্তর্জাতিক রাজনীতি,সাম্রাজ্য,ইতিহাস নিয়ে গভেষণা কর্মে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন ব্রি জে এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.)।দীর্ঘ সময় ধরে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন এইসকল বিষয়ে। এই গুণী লেখকের চতুর্থ বইটি হলো-'তেল গ্যাসঃনব্য উপনিবেশবাদ-কাবুল হতে বাগদাদ'।তেল,জ্বালানি এসব সম্পদ নিয়ে রাজার রাজত্ব আর দাসদের 'সাক্ষী গোপাল' হয়ে থাকা নিয়ে বইটি রচিত।
অনুন্নত অনেক দেশ প্রাকৃতিক সম্পদ দ্বারা আশীর্বাদপুষ্ট। কিন্তু,শুধু সম্পদ থাকলেই হবে না;তা সংগ্রহ করে যথাযথ ভাবে ব্যবহার এবং বাজারজাত করার প্রক্রিয়াও রপ্ত করতে হবে।এক কথায়,যেসকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এসকল প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ করতে হয় সেসকল যন্ত্রের খোঁজ খুবই কম মিলে ওইসকল আশীর্বাদপুষ্ট দেশগুলোতে।এজন্যই,অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়।আর সেখান থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ!
কার্লোস বুলঘোরেনী নামক স্বপ্নবাজ এক চরিত্রের সাথে আমরা প্রথমেই পরিচিত হবো।যে কিনা সূদুর লাতিন আমেরিকান দেশ আর্জেন্টিনা থেকে এশিয়ায় এসেছিলো নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবার লক্ষ্যে।অগণিত পয়সা খরচ করা লাতিন আমেরিকার তিন নাম্বার এই কোম্পানির হর্তাকর্তারা নিজেদের ওজন তখনও বুঝতে সক্ষম হয় নি যতক্ষণ না "বিগ ব্রাদার" অর্থ্যাৎ আমেরিকার ইউনোকলের ব্যাঘাত ঘটায় তাদের ব্যবসায়! সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত আগমনে ওই লাতিন আমেরিকার কোম্পানিটি বুঝে ফেলে যে,তল্পিতল্পা ঘোটানোর সময় অতি সন্নিকটে।
যেকোনো দেশ সর্বদাই চায় নিজেকে সম্পদশালী হিসেবে তৈরি করতে।চায় নিজের সম্পদগুলোকে বাড়াতে।আর এ নিয়েই বিশ্বের অধিকাংশ ঝামেলার সৃষ্টি হয়।স্বপ্ল শক্তিসম্পন্ন দেশগুলো এক্ষেত্রে নিজেদের ট্রাকে উঠিয়ে আনতে ব্যর্থ হলেও বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো এই বিষয়ে যুদ্ধের দামামা বাজাতেও কার্পণ্য করে না।এসব বিষয়ে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর কর্মপরিধি নিয়ে বইটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
যদিও পরিমাণে কম তারপরেও একেবারে ফেলনা নয় আমাদের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক জ্বালানি সম্পদ গ্যাস নিয়ে কিছুটা হলেও সীমিত আকারে চলছিলো আন্তর্জাতিক রাজনীতি।কেনই বা এসব? সেই কাহিনীও স্থান পেয়েছে বইটিতে।
অসাধারণ কিছু অধ্যায়ের সঙ্গে ইরাক-ইরান যুদ্ধ নিয়ে নাতিদীর্ঘ একটি অধ্যায় এবং সেই সঙ্গে ইরাক সম্বন্ধে বেশ কিছু সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রবন্ধের সংকলনও রয়েছে বইটিতে।
যাদের এইসকল বিষয়ে নূন্যতম আগ্রহ রয়েছে তারা চোখ বন্ধ করে 'তেল গ্যাসঃনব্য উপনিবেশবাদ-কাবুল হতে বাগদাদ' বইটি হাতে তুলে নিতে পারেন।
Brigedier J.M. Sakaoat Hosen Ret. ১৯৪৮ সনের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সনে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় দু’বছর পাকিস্তানের বন্দি শিবিরে কাটিয়ে ১৯৭৩ সনে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭৫ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯-৮১ সনে ঢাকায় সেনাসদরে গুরুত্বপূর্ণ পদে অপারেশন ডাইরেক্টরেট নিয়োজিত হন। পরে তিনি ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে দুটি ইনফেনট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন। লেখক বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে দ্বিতীয়বারের মত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিখ্যাত ইউ এস এ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ জেনারেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স এ ডি সি ইসলামাবাদ ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স এবং ২০১১ সনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্, ঢাকা থেকে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম ও বইয়ের লেখক হিসেবে অধিক পরিচিত। এ পর্যন্ত তার তেইশটি বহুল পঠিত বই প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া দেশী-বিদেশী ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতি এবং নির্বাচন বিষয়ে বিশ্লেষক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ২০০৭ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রয়েছে। ২০০৮ সনের জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের পাঁচ হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা।