প্রথমেই লেখক সম্পর্কে একটু বলে নিতে চাই। বইটি লিখেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড.এম. সাখাওয়াত হোসেন, এনডিসি, পিএসসি(অবঃ)। সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত প্রতিভাবান অফিসার হিসেবে নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন তিনি। স্বাধীনতার পরবর্তী বিপ্লবগুলোর সময় ঢাকাতে এবং সেনাসদরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেছেন সকল ঘটনাবলী।নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে অধিক পরিচিত এই সুপরিচিত লেখক ২০০৭-১২ সাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে আমেরিকার বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ারে হা"ম"লা"র ঘটনা এবং এর পেছনের এক লম্বা ইতিহাস নিয়েই মূলত বইটি রচনা করেছেন তিনি।
প্রতিদিনের মতোই দিনটি শুরু হয়েছিলো ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক তথা বিশ্ববাসীর জন্য। কেউ ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করে নি যে, কিছুক্ষণ পরের আমেরিকাকে কেন্দ্র করে ঘটা কিছু ঘটনা সমগ্র বিশ্বকে সবকিছু আবার ঢেলে চিন্তা করতে বাধ্য করবে। ১১ ই সেপ্টেম্বর,২০০১ সালে আমেরিকার অভ্যন্তরীন ৪ টি বিমান ছি"ন"তা"ই হয়। যার ৩ টি বিমান দিয়ে আ"ঘা"ত হানা হয় টুইন টাওয়ার এবং পেন্টাগনে এবং আর একটি ভূ"পা"তি"ত হয়। ভূ"পা"তি"ত হওয়া বিমানটি নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ জেগেছিল যে, সেটা দিয়ে হয়তোবা হোয়াইট হাউসে আ"ক্র"ম"ণ করবে স"ন্ত্রা"সী"রা।বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা দেশটির প্রেসিডেন্ট এই হামলার খবর শুনে বা"ক"হা"রা হয়ে গেলেন। কিছু না ভেবেই একপ্রকার মুসলমানদের দা"য়ী করে বসলেন তিনি। যদিও,পরে বারংবার বলা হয়েছিলো এই হামলা স"ন্ত্রা"সী গো"ষ্ঠী করেছে। আমেরিকা উঠে পরে লাগে এর পাল্টা জ"বা"ব দেয়ার জন্য।
বইটি মূলত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত হলেও,লেখক এখানে এর পেছনের লম্বা ইতিহাস টেনে এনেছেন। তিনি দেখাতে চেষ্টা করেছেন কীভাবে ওসামা বিন লাদেন, আল কায়েদা এবং সমসাময়িক সময়ের আফগানিস্তানে ক্ষমতার দ্ব"ন্দ নিয়ে আফগান সরকারের সঙ্গে এবং জনগণের সঙ্গে যে বিশাল হা"ঙ্গা"মা"র সৃষ্টি হয়েছে তার নেপথ্যে যে তালেবান রয়েছে তার কীভাবে উত্থান হয় বিশ্বে। কীভাবে তারা যু"দ্ধে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। একজন পাঠক মাত্রই এরকম অজানা অগণিত ইতিহাস জানতে পারবেন এই বইটির মাধ্যমে।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দ"খ"ল করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই তা সহ্য হচ্ছিল না। দ্বিতীয় বি"শ্ব"যু"দ্ধে"র পরে জেগে ওঠা দুটি শক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। একটি হলে পুঁজিবাদী সমাজের নেতৃত্বে এবং অপরটি সমাজতান্ত্রিক। দু'পক্ষই নিজেদের পাল্লা ভারী করতে গিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে জন্ম দিয়েছে অসংখ্য মীমাংসিত, অমীমাংসিত ঘ"টনার। মূলত পা"র"মা"ন"বি"ক যু"দ্ধে"র ভ"য়া"ব"হ"তা উপলব্ধি করতে পেরে দেশ দুটি আর সরাসরি যু"দ্ধে না জড়ালেও,যু"দ্ধাং"দে"হী মনোভব পরিত্যাগ করে নি। তাদের এই অবস্থাই শীতল যু"দ্ধ বা cold war নামে পরিচিত।
তো,সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তান থেকে তল্পিতল্পাসহ হ"টা"তে পরিকল্পনা শুরু করে আমেরিকা। যার প্রথম ধাপ হিসেবে আরব দেশগুলোর সহায়তা কামনা করে মার্কিনীরা। এতে তারা সকলে এগিয়ে আসে আর যার মাধ্যমে শুরু হয় অ"স্ত্রে"র ঝনঝনানি! যেই অ"স্ত্রে"র ঝ"ন"ঝ"না"নি অনেক হিসেব নিকেশ পাল্টে দিয়েছে। প্রচুর পরিমাণ অ"স্ত্রে"র সরবরাহ আফগানিস্তানে, একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নও পিছু হটতে বাধ্য হলো। আমেরিকাও তাদের স্বভাব অনুযায়ী কার্যসিদ্ধির পরে পত্রপাঠ বিদায় হলো। কিন্তু,রয়ে গেলো অগণিত অ"স্ত্রে ভান্ডার! ধ্বং"সে"র দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা আফগানিস্তানে ১৯৯২-৯৪ সাল পর্যন্ত চললো গৃহ"যু"দ্ধ। এই বিপুল পরিমাণ অ"স্ত্র নিয়ে আমেরিকা তখন চিন্তিত ছিলো না,যতদিন পর্যন্ত না এই অ"স্ত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিলো। ধারণা করা হয়, যে গো"লা"বা"রু"দ ছিলো, সেগুলো দিয়েই জোড়া টাওয়ারে আ"ক্র"ম"ণ করা হয়েছিলো একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের ওই ভয়াবহ হা"ম"লা"য়! এক সময় নিজেদর অতি কাছের সৌদি ধনকুবের ওসামা বিন লাদেন,আফগানিস্তান হয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শ"ত্রু! পাশার দান উল্টে গেলো! যা যা হবার তাই তাই হতে শুরু করলো আফগানিস্তান ঘিরে!
শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা,আফগানিস্তানের যু"দ্ধে"র দা"মা"মা, স"ন্ত্রা"সী সংগঠনগুলো কিভাবে কার্যক্রম চালায়, কীভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বারংবার উঠে আসে সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে হলে এই বইটিই হতে পারে পাঠকের জন্য প্রধান আকর্ষণ!