
User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
উপসংহার: এমন একটি উপন্যাস যার শুরু হয়েছিল অত্যন্ত চমৎকারভাবে। আবার যার পরিসমাপ্তি হলো চমৎকারের বিপরীত; কিছুটা ঘোর লাগানো বিষাদরূপে! লেখক হয়তো পূর্বপরিকল্পনায় এমনটাই ভেবে রেখেছিলেন৷ ৩৬০° ঘুরে উপন্যাসটা এমন একটা জায়গায় গিয়ে শেষ হবে যেটা পাঠকের কল্পনাতেই আসবে না। পথের পাঁচালী এবং অপরাজিত-এর মধ্যবর্তী এক যুগকে মায়া, মাধুর্য, সুখ-বিষাদ দ্বারা পূর্ণ করে আবার সেই যুগকেই যেন সম্পূর্ণভাবে বিলীন করে দিলেন৷ উপন্যাসের একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হয়েছে, এই পুরো বইটা যেন ভোর’রাতে ঘুম ভাঙার পূর্বমুহূর্তের সু-স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন জগতের হিসেবে অনেক লম্বা একটি যুগ, অথচ বাস্তবের হিসেবে মাত্র কয়েক সেকেন্ড! ভুমিকা: এই উপন্যাসের রিভিউ শুরু করেছি উপসংহার দিয়ে। যদিও রিভিউ লেখার ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, তবুও উপসংহার আসার কথা সবার শেষে! আমার মনে হলো কাহিনি সংক্ষেপ, পাঠ-প্রতিক্রিয়া আগে না দিয়ে বইটা শেষ করার কয়েক পৃষ্ঠা আগে যে অনুভূতি অনুভব করেছি সেখান থেকেই শুরু করি; হোক তা উপসংহার। কাহিনি-সংক্ষেপ: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে তার পথের পাঁচালী শেষ করেছেন, সেই উপসংহারের রেশ টেনে দুর্গাকে ফোকাস করে রচিত হয়েছে দুর্গার পাঁচালী। অমর উপন্যাস পথের পাঁচালীতে দুর্গার মৃ*ত্যু ঘটানো হলেও কিছুটা ‘ফিউশান’ ও ‘ফ্যান্টাসিধর্মী’ উপন্যাস দুর্গার পাঁচালীর দুর্গা জীবন্ত প্রতিমা হয়ে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রথম দৃষ্টিতে মনে হতে পারে পথের পাঁচালীর লাইট ভার্সন বুঝি এটা; কিন্তু না! পথের পাঁচালীর বিনির্মাণবাদ তত্ত্বের আলোকে এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র দুর্গার চরিত্র-চিত্রণ করা হয়েছে বইটিতে। পাঠ-প্রতিক্রিয়া: সমকালীন উপন্যাসে চিরায়িত ভাইব খুব কম বইয়েই পাওয়া যায়৷ সেই সুপরিচিত পথের পাঁচালীর নিশ্চিন্দপুর, অপু-দুর্গা, সর্বজয়া, তাদের গ্রাম, রেলপথ আর উপগ্রহের মতো চারপাশে ঘুরতে থাকা দুঃখ-কষ্ট, দুটানা, লোকের কত কথা। পথের পাঁচালীর রেশ থেকে জন্ম নেওয়া এক স্বতন্ত্র বই যে এতো ভালো লাগবে তা কল্পনাতীত ছিল। পথের পাঁচালী শেষ করার সাথে সাথেই শুরু করেছিলাম দুর্গার পাঁচালী। পথের পাঁচালীতে অপু নিশ্চিন্দিপুর ফেরার যে আকাঙ্ক্ষা মনের মধ্যে জমা করে রেখেছিল সেই আকাঙ্ক্ষার সত্যায়ন ঘটেছে দুর্গার পাঁচালীর প্রথম পরিচ্ছেদেই। “ওই তো দেখা যায় অপু আসচে। সঙ্গে ওটি কে? দুগ্গা?” এই বাক্যটাই ফিরিয়ে এনেছে দুর্গাকে। এখান থেকেই শুরু হয়েছে আনান্নিয়া আন্নির কল্পনায় নবরূপে জন্ম নেওয়া অমর চরিত্র দুর্গার আরেক পাঁচালী। ভালো লাগার দিক: এই বইয়ের ভালো দিকের প্রশংসা করার পূর্বে, লেখিকার মুন্সিয়ানা নিয়ে কিছু লিখা যাক৷ লেখিকার শান্তিনিকেতন পড়েছিলাম বেশ কিছুদিন পূর্বে৷ সামাজিক উপন্যাস হিসেবে সেটাও ছিল দুর্দান্ত। তাই পড়ার পূর্ব থেকেই দুর্গার পাঁচালীর প্রতি বিশ্বাস ছিল। সৌভাগ্যক্রমে সেই বিশ্বাসে কোনোরূপ দাগ পড়েনি৷ এই বইকে পথের পাঁচালী ছাড়া কল্পনা করা হবে বোকামি৷ পথের পাঁচালীর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়াবলিকে অবলম্বন করে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গার পাঁচালী। তাই বলে কি পথের পাঁচালীর সবকিছু এখানে আবার চলে এসেছে? ‘এই অপু… অপু, উঠ না।’ অপু ঘুমের ঘোরে তাকাইয়া বলে— ‘কী রে, দিদি? কী হয়েচে?’ দুর্গা ফিসফিস করিয়া বলে— ‘বলছি রেলগাড়ি দেখতে যাবি?’ পথের পাঁচালী হোক কিংবা দুর্গার পাঁচালী, রেলগাড়ি দেখার যে শখ দুর্গার ছিল তা দুই উপন্যাসেরই সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। দুর্গার পাঁচালীর মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে তার সেই বড়, ইস্পাতের লাইনের উপর চলা, কুঁ ঝিকঝিক করা গাড়িটা দেখার স্বাদ। সেই আগের মতো অপুকে নিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে, মাঠ-বন পেরিয়ে রেলগাড়ি দেখার আনন্দ যে দুই ভাই-বোনের পাশাপাশি পাঠককেও দারুণ নস্টালজিক ভাব এনে দেবে তা সন্দেহাতীত। এই উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল এর সেটিংস। পাঠকমাত্রই প্রশ্ন জাগতে পারে মৃ*ত দুর্গা বিভূতিভূষণের রেশেই আবার ফিরে এলো কীভাবে? কোন দৃষ্টিকোণ থেকে তার ফিরে আসা যৌক্তিক? তবে আবারও বলতে হয় বইটা ফ্যান ফিকশন৷ এবার আরেকটু গভীরে যাওয়া যাক। পথের পাঁচালীতে অপুরা নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে যাওয়ার সময় সে কল্পনা করেছিল তার দিদি বুঝি দূরে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে তাদের চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখছে। অপুর এই কল্পনা থেকে পূণরায় দুর্গার জন্ম নেওয়া কোনো ফ্যান ফিকশনে কঠিন নয়। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হলো যুৎসই বর্ণনার মধ্য দিয়ে কাহিনিতে প্লট ইনক্লুড করে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং পথের পাঁচালীর একটা টোন বজায় রাখা। যদি এই উপন্যাসে সেগুলো পরিলক্ষিত না হতো তবে এতো লম্বা রিভিউ কোনোকালেই লিখতাম না। এই বইটা পথের পাঁচালীর আদলে হয়েও নিজ গুণে-মানে স্বতন্ত্র। পথের পাঁচালীতে দুর্গার মৃ*ত্যু যেমন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সার্থকতা; দুর্গার পাঁচালীতে দুর্গাকে ফিরিয়ে আনা আনান্নিয়া আন্নির সার্থকতা। পথের পাঁচালীর দুরন্ত কিশোরীর কত অপূর্ণ ইচ্ছাকে এত বছর পরে এসে কেউ আবার নতুন করে পূরণ করবে তা হয়তো অনেক পাঠকই এখনো জানে না৷ “এখনো মানুষটার কত স্মৃতিচিহ্ন জড়াইয়া আছে ঘরখানাতে। যা ছিল, যেটুকু ছিল তাও আজ ভাঙ্গিয়া চুরিয়া, উরাইয়া নিয়া গেল এই কালবৈশাখী ঝড়। এভাবেই নিজের হাতেগড়া কত স্মৃতিচিহ্ন ঘুণে ধরিয়া, রোদ্দুরে পুড়িয়া, বৃষ্টিতে ভিজিয়া, ঝড়-ঝাপটায় এলোমেলো হইয়া একসময় দাঁতের তলার সুপুরির মতো নিঃশেষ বিভাজ্য হইয়া যায়।” চরিত্রায়ন: চরিত্রায়ন নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অপুর কৌতুহলী ভাবনা আর দুর্গার দুরন্তপনা উভয়ই ছিল বইটিতে। তবে দুর্গার দুরন্তপনা কিছুটা কম ছিল বলা যায়। সে বড় হচ্ছে, শান্ত হচ্ছে এমন একট ভাব ছিল বইয়ে। তারপর নীরেনের সাথে বিয়ের মধ্য দিয়ে কিশোরী দুর্গাকে পরিণত করা হয়েছে কনে দুর্গায়। খেয়ালের বিষয়: দুর্গার পাঁচালী একটি স্বতন্ত্র বই কিন্তু পথের পাঁচালী ছাড়া কল্পনা করা কঠিন৷ পথের পাঁচালী না পড়লে এটা পড়ে পাঠক পুরোপুরি বইয়ের স্বাদ নিতে পারবে না৷ সুতরাং সবচেয়ে ভালো হয় পথের পাঁচালী পড়ার পর এটা শুরু করা। এই বইয়ের সেটিংস, প্লট, বাক্য সবকিছু ঠিকঠাক তবে প্রকৃতির বর্ণনা মিসিং। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে নিশ্চিন্দিপুরের প্রকৃতিকে তুলে ধরতেন, সেটা দুর্গার পাঁচালীতে ততোটা হাইলাইট হয় নি। তাছাড়া আরেকটা বিষয় আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে আগত, আমি খুব একটা সরাসরি প্রেমের প্লট পড়তে পারি না৷ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইছামতী ও বিপিনের সংসারে প্রেম ছিল এবং তিনি তা ডিফাইন করেছেন অত্যন্ত চমৎকার; রূপকভাবে। কিন্তু দুর্গার পাঁচালীতে নীরেন-দুর্গার প্রেমকে আমার কিছুটা নাটুকেপনা কিংবা আহ্লাদী মনে হয়েছে। যদিও কোনোপ্রকার শ্লীলতালঙ্ঘন হয় নি তবুও এদিকটায় কিছুটা সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। আবার বইয়ের প্রাইসটা বেশি। তবে আমি বলব বেশি দাম দিয়ে অখাদ্য না কিনে একবার এগুলা কিনে পড়া ভালো। পাঠ শেষে বইটা শান্তি দেবে; কিংবা ঘোর। পরিশেষে আমি যদি বলি এটা কোনো রিভিউ না তাহলে প্রশ্ন আসবে এতক্ষণ কি লিখলাম? লিখেছি একটা ভোররাতের স্বপ্ন যা উল্লেখ করেছি উপসংহারে। একেবারে শেষের দিকে গিয়ে মনে হবে এমন কোনো বই ছিল না; যা ছিল সব স্বপ্ন৷ স্বপ্ন কেন বললাম সেটা নাহয় উল্লেখ না-ই করলাম। এটা অনেক চমৎকার, সেই সাথে আন্ডাররেটেড একটা বই। বইটা পড়ে নিয়েন ভালো লাগবে নিঃসন্দেহে!




