ফ্ল্যাপে লিখা কথা প্রেম ও প্রকৃতির কাছে যিনি সমর্পিত তিনিই তো কবি, কবিতার অক্লান্ত কারিগর- এই কথা উচ্চারিত হলেই চলে আসে শাহীন রেজার নাম। আশির দশকের এই কবি সমকালীন বাংলা কবিতায় নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন অনায়াসেই। এক চন্দ্রালোকিত রাত যেন তার কবিতা, মায়াবী জোছনার মতই পাঠকের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়। আধনিক জীবন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কখনো কখনো নস্টালজিক হয়ে ওঠে, ন্যাপথলিনের মত দূর থেকে গন্ধ ছড়ায়।
বেন জনসনের মত প্রাঞ্জলতা রয়েছে শাহীন রেজার কবিতায়। এখানে পাওয়া যাবে এক সরলসহজ মানুষকে-এই মানুষই তো কবিতার আরাধ্য হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। জীবনকে তিনি যেভাবে বুঝেছেন অথবা বুঝতে চান।সেভাবেই কবিতার শরীরকে বিকশিত করেন।তিনি উচ্চারণে যতোটা সাহসী কবিতার গতিতেও ততোটা সাবলীল।
কবিতা ও ছড়ায় শাহীন রেজার হাতেখড়ি শৈশবেই। উনিশশ বাহাত্তর, মাত্র ষষ্ট শ্রেণীতে পড়েন তখন; সদ্য পাওয়া স্বাধীনতার মতোই উচ্ছল উদ্দাম সেই বালকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। সেটা ছিল ছড়া। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় পঁচাত্তরে। কখনো তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোননি, সবে নবম শ্রেণীতে পা রেখেছেন।
সূচিপত্র * সত্যনগর * অনুতাপ ঝড় * বালিকা আকাশ মেঘ এবং বৃষ্টি * পাখি চলে গেলে কবি বড় একা * প্রেমকাব্য-১ * প্রেমকাব্য-২ * প্রেমকাব্য-৩ * পথ এবং ঋতুবতী নারীদের গল্প * নীল চোখ * খিচু মেঘ কিছু রোদ * তৃষ্ণাবৃক্ষে গোলাপ ফোটে না * তেত্রিশে বড্ড দেরি * জলস্রোতে কালস্রোতে * ভালবাসা * ডাকবে যদি * বলেছি তোমাকে * নীল ফাগুনে হরিৎ পোকা * মেঘবতী হও * তোমার জন্য দুপুর * রাত্রির মেয়ে * তুমি পাখি হেল আমি নিশ্চিত রাতের ঠিকানা * পথশেষে বৃষ্টিস্নাতা * অথৈ জলের হাত * শ্রাবণের শোক * কোলাহল * মাঝরাতে জল * দ্বিতীয় দরজা * ভেসে ওঠার প্রার্থনা * ন্যুমার্কেট থেকে নীলক্ষেত * কবি এবং বাজার যাত্রা * বাতাসকন্যা * কাঠ পোড়ানো মেয়ে * নুনের স্রোতে ঝুমুর * কবি কিংবা শালিক কিংবা জোছনাভেজা হেমন্ত * আকাশবিহীন বিবর্ণতা * ঘাসফুলে নীল ব্রা * একজনমের ঋণ * বৃষ্টিতে ঘরে ফেরা * লখিন্দর * তিন টুকরো পদ্য * জোছনা কাব্য * যেতে যেতে হতাশায় * বিরহের পদাবলী * মোহর * অবগাহন * আরেক জীবন * উল্টোরথ * শাদা জোছনায় শাদা ঘরে * সীমাবিচ * জলের নিশানা * বর্ষণ কর্ষণ এবং সাপ বিষয়ক * চাওয়া এবং * পরীবৃত্তান্ত * শরৎ এবং ভেঙ্গে পড়া * হেমলক * ইলিশ আশ্রয় * ছায়া কার্তিক স্নান * মাঝরাতে শব্দদূষণ * বিকিকিনি * সরলপদ্য * জলের আগুন * কি চাই তোমার * জলের বেদনা * বীজের নূপুর * মধ্যাহ্বে ধুলোঝড় * মিস্ট্রিয়াস * পাখারিয়া * মেঘে মেঘে ভালবাসা * বৈশাখ আমার রমণী * স্নেহলতা
কবি শাহীন রেজা বাংলা সাহিত্যের একজন সংবেদনশীল ও মননশীল কণ্ঠস্বর। তাঁর কবিতায় ধ্বনিত হয় হৃদয়ের গভীরতম নিঃসঙ্গতা, সমাজের নিঃশব্দ বেদনা, প্রেম ও প্রতিবাদের জটিল ভাষ্য। কবিতার প্রতি তাঁর অনুরাগ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সময়ের দর্শন এবং জীবনের অন্তরঙ্গ অনুভূতির সংমিশ্রণে নির্মিত। তার কবিতার ভুবনে ফিরে ফিরে আসে নিঃসঙ্গতা, সময়ের নির্জনতা, নারীর অন্তর্লোক, ভালোবাসার চিরন্তন আকুতি এবং মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। ‘বাতাসে নদীর ঘ্রাণ’, ‘অসতর্ক জ্যোনায়’, ‘নারীকাব্য’, ‘পাখি চলে গেলে কবি বড় একা’, ‘চরাচরে তীব্র নির্জনতা’, ‘জাতিষ্ণর যিশু’, ‘নির্বাচিত ৫০ কবিতা’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ তাঁর সৃষ্টিশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত। শাহীন রেজার কবিতায় শব্দের গভীরে লুকিয়ে থাকে মানবিকতা ও জীবনের নরম কঠিন রূপান্তর। প্রেম ও দ্রোহ, নিঃসঙ্গতা ও উচ্চারণহীন আর্তনাদের ভাষা হয়ে ওঠে তাঁর কবিতা। তিনি শব্দের অন্দরমহলে প্রবেশ করে তৈরি করেছেন এক ধরনের গভীরতাসম্পন্ন অনুভব-ভাষা, যা পাঠকের হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী অভিঘাত সৃষ্টি করে। বাংলা কবিতার ভুবনে তিনি এক নিবেদিতপ্রাণ স্রষ্টা, যাঁর কলম নিরবধি প্রশ্ন তোলে, কাঁদে, ভালোবাসে এবং প্রতিটি ছত্রে পাঠককে ভাবনায় ডোবায়। সাহিত্যের দায়বদ্ধতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁর কবিতার চালিকা শক্তি। তিনি একজন সক্রিয় ও নিবেদিত কবি, যার সাহিত্যকর্ম চলমান।