“বাংলা ও বাংলাদেশ : সমাজ ও ইতিহাস” — মাহবুবুল হক রচিত এই গ্রন্থটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাজ ও ইতিহাসভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী বই। এতে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং বাংলাদেশের উদ্ভব ও বিকাশের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নিচে বইটির একটি সারমর্ম তুলে ধরা হলো:
📘 বইয়ের সারমর্ম:
এই বইটিতে লেখক বাংলার সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন, ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব, এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম– এই তিনটি মূল ধারার মধ্য দিয়ে আলোচনা করেছেন। বইটি মোটামুটি নিচের কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত:
🧩 ১. বাংলার প্রাক-ঔপনিবেশিক সমাজ ও সংস্কৃতি:
বাংলার কৃষিনির্ভর সমাজব্যবস্থা এবং গ্রামের ভূমিকা।
সমাজের শ্রেণিবিন্যাস, হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।
প্রাক-মধ্যযুগীয় ও মধ্যযুগীয় রাজ্যব্যবস্থা ও স্থানীয় ক্ষমতার কেন্দ্র।
⚙️ ২. ঔপনিবেশিক শাসন ও সমাজ পরিবর্তন:
ব্রিটিশ শাসনের ফলে বাংলার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর ভাঙন।
জমিদারি প্রথার সূচনা এবং এর মাধ্যমে কৃষকের শোষণ।
শিক্ষার প্রসার, মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং জাতীয়তাবাদের বীজ।
📢 ৩. পাকিস্তান পর্ব ও বাংলাদেশের জন্ম:
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পেছনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য ও সাংস্কৃতিক নিপীড়ন।
ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ।
🌱 ৪. স্বাধীন বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো:
স্বাধীনতার পর সমাজের রূপান্তর, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং রাজনৈতিক উত্তালতা।
রাষ্ট্র গঠনে মধ্যবিত্তের ভূমিকা এবং গণতান্ত্রিক চর্চার উত্থান-পতন।
🔍 বইয়ের বিশেষত্ব:
ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের আন্তঃসম্পর্কের ব্যাখ্যা।
বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গিতে শোষণ, শ্রেণি সংগ্রাম এবং জাতীয় মুক্তির বিশ্লেষণ।
সহজ ভাষা, বিশ্লেষণধর্মী রচনাশৈলী এবং সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যার সমন্বয়।
✅ সারাংশ:
মাহবুবুল হকের "বাংলা ও বাংলাদেশ : সমাজ ও ইতিহাস" বইটি বাংলাদেশের ইতিহাসকে শুধু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নয়, বরং সমাজ ও অর্থনীতির ধারাবাহিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করেছে। এটি ছাত্র, গবেষক এবং আগ্রহী পাঠকদের জন্য একটি মূল্যবান গ্রন্থ।