বই পরিচিতি: সেই রাতে হৃদির কী জানি হলো; বারবার ওই ছেলের কথাটি মাথায় ঘুরঘুর করতে থাকল! সে যখন কথাটি বলছিল, তখন তার চোখে ছিল প্রিয় মানুষ হারানোর ভয়; হৃদি তা স্পষ্ট দেখেছে। ছেলেটি হয়তো ওকে অনেকদিন থেকেই অনুসরণ করছে। একজন মানুষকে কল্পনা করতে করতে একেবারে হৃদয়ের আসনে বসিয়ে না দিলে এত বড় কথা হুট করে বলা সম্ভব না। অনেকদিন ধরে তিল তিল করে স্বপ্নকে পরিচর্যা না করলে চোখের তারায় প্রিয় মানুষ হারানোর ভয় তৈরি করা যায় না। ‘অপ্সরা’ নামের এই উপন্যাসটিই আসিফ মেহ্দীর লেখা প্রথম জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাস। উপন্যাসের হৃদি তথা অপ্সরা চরিত্রটি লেখকের এক অনন্যসাধারণ সৃষ্টি। ‘অপ্সরা’ পড়ে অপ্সরার জন্য কাঁদেননি, এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কাহিনির জীবনঘনিষ্ঠতা পাঠকের মন জয় করেছে বলেই বইটি ছিল বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায়। অনন্যা থেকে প্রকাশিত ‘অপ্সরা’ চরিত্রের দ্বিতীয় বই ‘অপ্সরার স্পর্শ’ও ইতিমধ্যে পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অপ্সরার বৈচিত্র্যপূর্ণ পথচলা নির্বিঘœ হোক-এই প্রত্যাশা করছি।
ভূমিকা (লেখকের কথা): কিছু মানুষ পরম আস্থা নিয়ে আমাকে তাদের জীবনের ঘটনা বলেন। ভালোবেসে দাবি করেন, আমি যেন গল্পের ছলে তাদের কাহিনিগুলো পাঠকদের শোনাই। মানুষমাত্রই ভালোবাসার দাবির কাছে অসহায়! আমিও অসহায় হয়ে পড়ি। উপরন্তু ব্যস্ততার কারণে লিখতে বসতে না পারায় আমার অসহায়ত্ব অস্বস্তিতে রূপ নেয়। বেশিদিন অস্বস্তি নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না! হঠাৎ অস্বস্তি কমানোর জন্য খানিকটা অবসর পেয়ে গেলাম। ভাবলাম, আদা-চা খেয়ে লেগে পড়ি! বেশ কয়েকজনের জীবনের ঘটনা আমার পরিচিত পরিম-লের ছাঁচে ফেলে লিখে ফেললাম ‘অপ্সরা’। এটি আমার লেখা প্রথম জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাস। মানুষ হিসেবে এতে আমার ভুল-ত্রুটি থাকাই স্বাভাবিক। বইটি কারও অস্বস্তির কারণ না হলেই আমি খুশি। তবে এটি যদি কারও মন বিন্দুমাত্র ছুঁতে পারে, তাহলে আমার হৃদয় আনন্দোচ্ছ্বাসে ভেসে যাবে! আসিফ মেহ্দী শ্যামলী, ঢাকা।
সাহিত্যের প্রতি আসিফ মেহ্দীর ঝোঁক ছাত্রজীবন থেকেই। দেশসেরা দুই ফান ম্যাগাজিন উন্মাদ ও `রস+আলো`তে লেখার সুবাদে আসিফ মেহ্দী পেয়েছেন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা। ব্যঙ্গ আর হাস্যরসের সঙ্গে গভীর জীবনবোধের প্রতিফলন রয়েছে তাঁর কাহিনিগুলোতে। ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের বেগ ও মানবিক আবেগের সমন্বয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানা উপকরণ আছে তাঁর লেখা কল্পবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলোতে। বেস্ট সেলারের তালিকায় রয়েছে মায়া, বধির নিরবধি, অপ্সরা, তরু-নৃ, অদ্রির অভিযান, আড়াল। এখন তিনি লিখছেন কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা ও `বিজ্ঞান আনন্দ`তে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছত্রিশ। অর্জন করেছেন ঢাকা ব্যাংক-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার, আর্টলিট সেরা বই পুরস্কার, ডিজি অ্যাওয়ার্ড, শ্রেষ্ঠ উপস্থাপক অ্যাওয়ার্ড, বিমানবাহিনী প্রধানের শ্রেষ্ঠ মেধা ট্রফি, অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্সসহ নানাবিধ পদক ও সম্মাননা। তিনি বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত। এসএসসি ও এইচএসসিতে বোর্ড-স্ট্যান্ড এবং গ্রাজুয়েশন করেছেন বুয়েটে। যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন এমএসসি। আসিফ মেহ্দী বাংলাদেশ বেতারের উপ-স্টেশন প্রকৌশলী। তাঁর সহধর্মিণী মৌবীণা জ্যাকলিন বারি পেশায় ডাক্তার।