দুনিয়াতে মানুষের আগমনের উদ্দেশ কেবল আল্লাহর দাসত্ব করা। আল্লাহর বিধানের সামনে আত্মসমর্পণ করা৷ আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তাঁর বান্দা হয়ে যাওয়া। তবে কেউ নিজেকে আল্লাহর বান্দা বলে পরিচয় দিলেই সে তাঁর বান্দা হয়ে যাবে না। আল্লাহর দাস হতে চাইলে বান্দাকে অবশ্যই সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিতে হবে। কেউ যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদ দিয়ে সৃষ্টির সঙ্গে তার অন্তর জুড়ে দেয় এবং অন্তরে এই বাসনা লালন করে যে, এ সকল সৃষ্টিজীবই বুঝি তাকে সাহায্য করবে, তাকে জীবিকা দেবে কিংবা তাকে সঠিক পথ দেখাবে, তবে সে আর আল্লাহর দাস থাকে না, বরং সৃষ্টির সেবকদাসে পরিণত হয়। যে তার শির আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে নত করে না, যে তার হাত আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে প্রসারিত করে না, যে তার চাওয়াগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে পেশ করে না, যে আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কোনোকিছুর আধিপত্য মেনে নেয় না, যে ফয়সালা দেওয়ার সময় আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কিছুর দিকে ঝুঁকে পড়ে না, যে আদর্শিকভাবে আল্লাহর দ্বীন ছাড়া অন্য কোনো ইডিওলজিকে গ্রহণ করে না---সে-ই প্রকৃত অর্থে আল্লাহর দাস। . দাসত্বের মর্মার্থ নিয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব লিখেছেন। আরবিতে যার নাম "আল উবুদিয়্যাহ"৷ আলহামদুলিল্লাহ, আমরা কিতাবটি বাংলায় অনুবাদ করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলা অনুবাদে এর নাম রাখা হয়েছে "দাসত্বের মহিমা"। শাইখুল ইসলাম সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। ইসলামের প্রতিটি মৌলিক শাখায় তিনি ঈর্ষণীয় অবদান রেখেছেন। তিনি যে বিষয়েই কলম ধরেছেন, সে বিষয়েই বিরল কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। "আল উবুদিয়্যাহ" তাঁর বিরল কৃতিত্বের অন্যতম নিদর্শন। এটি এমন একটি কিতাব, যেটি পাঠককে দাসত্বের সঠিক রূপরেখা সম্পর্কে ধারণা দেবে। আল্লাহর দাসের কী কী গুনাবলি থাকা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে মৌলিক দিকনির্দেশনা দেবে। অনেকদিন ধরেই আপনারা কিতাবটির জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। আর অপেক্ষা নয়, এবার চলছে প্রি অর্ডার।
ইবন তাইমিয়া ছিলেন মধ্যযুগের একজন বিশিষ্ট হাম্বলী ফকিহ, মুহাদ্দিস, ধর্মতাত্ত্বিক ও যুক্তিবিদ। তাঁর পুরো নাম তকিউদ্দিন আবুল আব্বাস আহমদ ইবন আব্দুল হালিম ইবন মাজদুদ্দিন আব্দুস সালাম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আবুল কাসিম আল খিদর ইবন মুহাম্মদ ইবন আল খিদর ইবন আলি ইবন আব্দুল্লাহ ইবন তাইমিয়া আন নুমায়রী আল হাররানি আদ দিমাশকি।তিনি দামেস্কের নিকটবর্তী হাররান শহরে সোমবার ১০ রবিউল আউয়াল ৬৬১ হি:/ ২৩ জানুয়ারি, ১২৬৩ খ্রি. ধর্মীয় জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যবাহী এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা মাজদুদ্দীন আব্দুস সালাম ও বাবা শিহাবুদ্দীন আব্দুল হালিম উভয়েই হাম্বলী মাজহাবের বিশিষ্ট ফকীহ ছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ একজন বিশিষ্ট বুযুর্গ ও যাহিদ ছিলেন। ইবন খাল্লিকানের মতে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট আবদাল ও যাহিদদের অন্যতম। ইমাম যাহাবির মতে, তিনি পরিণত বয়সে আসার আগেই ফাতওয়া দান, ধর্মীয় বিতর্ক ইত্যাদিতে অসাধারণ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। ইবন কাসিরের মতে তিনি সতেরো বছর বয়সে গ্রন্থ রচনা শুরু করেছিলেন।