ড. আবদুল ওয়াহাব রচিত "বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: রাষ্ট্রতত্ত্ব ও বাঙালির স্ব-শাসন" বইটি একটি গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণ, যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, রাষ্ট্রচিন্তা এবং স্বাধিকার আন্দোলনের দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। নিচে বইটির একটি সারমর্ম দেওয়া হলো:
📘 বইয়ের সারমর্ম:
এই বইয়ে লেখক বিশ্লেষণ করেছেন কিভাবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুধুমাত্র একটি তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক ভাষণ ছিল না, বরং একটি সুদূরপ্রসারী রাষ্ট্রতাত্ত্বিক রূপরেখা ছিল যা বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণার পথে অন্যতম প্রধান মাইলফলক।
🔹 ১. ভাষণের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য:
লেখক তুলে ধরেছেন ৭ মার্চ ১৯৭১ সালের ভাষণটি একটি উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশে প্রদত্ত হয়, যখন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিল। এই ভাষণ ছিল এক ধরনের অঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণা।
🔹 ২. রাষ্ট্রতত্ত্ব ও রাজনৈতিক দর্শন:
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ফুটে উঠেছে জনগণের সার্বভৌমত্ব, ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের অভিলাষ। লেখক রাষ্ট্রতত্ত্বের আলোকে ভাষণটির বিশ্লেষণ করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে এতে একটি আধুনিক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের চেতনা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
🔹 ৩. বাঙালির স্বশাসন ও জাতীয়তাবোধ:
ভাষণটি বাঙালির জাতীয় পরিচয়, আত্মমর্যাদা ও অধিকারবোধের বহিঃপ্রকাশ ছিল। লেখক ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং একটি আত্মনিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দৃঢ় করেছে।
🔹 ৪. আন্তর্জাতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
বইটিতে আলোচিত হয়েছে, কেন ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর "Memory of the World" হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং কিভাবে এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হয়েছে।
✅ মূল বার্তা:
বইটির সারমর্মে বলা যায়, ৭ মার্চের ভাষণ কেবল রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল না—এটি ছিল বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রামের ফসল, একটি সুসংগঠিত জাতির স্বপ্ন, এবং একটি আধুনিক, স্বশাসিত রাষ্ট্রের রূপরেখা। ড. আবদুল ওয়াহাব এই ভাষণের প্রেক্ষাপট, রাষ্ট্রতাত্ত্বিক গুরুত্ব এবং এর মাধ্যমে গড়ে ওঠা বাঙালির জাতীয় চেতনার গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন।
Title
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ রাষ্ট্রতত্ত্ব ও বাঙালির স্ব-শাসন
আবদুল ওয়াহাব ১৯৫৫ সালের ২৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার উলাপাড়া থানার চরতারাবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি। ২০০৫ সালে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য কয়েকটি প্রকাশনা : বাংলাদেশের লােকগীতি, বাংলার লােকবাদ্য, বাংলাদেশের লােকগীতি : একটি সমাজতাত্ত্বিক অধ্যয়ন (তিন খণ্ড), লালন-হাসান : জীবন-কর্ম-সমাজ, ফোকলাের। মানবতাবাদ ও বঙ্গবন্ধু, ছােটদের বঙ্গবন্ধু, মহাত্মা। লালন : মানবতাবাদ ও সংগীত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : রাষ্ট্রতত্ত্ব ও বাঙালির স্ব-শাসন। বর্তমানে তিনি রেজিস্ট্রার, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। ইতিপূর্বে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগে অতিথি শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলাের বিভাগে ও উত্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। তৎপূর্বে বাংলা একাডেমির পাঠ্যপুস্তক বিভাগের পরিচালক এবং বাংলা একাডেমি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী জেবুন নাহার একটি বেসরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সংগীত শিল্পী। তাদের দুই সন্তান। ছেলে আবু মােহাম্মদ জুবেরি জ্যোতি সহকারী ইঞ্জিনিয়ার, ডিপিডিসি, মেয়ে নুজহাত জাহান জয়িতা লেদার টেকনােলজি ইনিস্টিটিউটে অধ্যয়নরত।