"ধরণীর পথে পথে" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: মানুষের মনের চেয়ে বেশি রহস্যময় আর কিছু কি এই পৃথিবীতে আছে? কোথাও তাজমহলের শুভ্রতাকেও ম্লান করে মন, আবার কোথায় হিমালয়কেও হার মানায় মনের উচ... See more
"ধরণীর পথে পথে" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: মানুষের মনের চেয়ে বেশি রহস্যময় আর কিছু কি এই পৃথিবীতে আছে? কোথাও তাজমহলের শুভ্রতাকেও ম্লান করে মন, আবার কোথায় হিমালয়কেও হার মানায় মনের উচ্চতা। কোথাও-বা আবার তা মিশরের মমির অজানা রহস্যকেও ছাড়িয়ে যায়। মানুষের মন আটলান্টিকের গভীরতাকেও লজ্জা দেয়। প্রতিটি মানুষেরই একটা করে মন আছে, আছে একটা করে বিচিত্র জগৎ। আমরা কয়টা মন চিনি, কজনকে জানি? যাদের জানি বলে মনে করি, আসলেই কি তাদের জানি? মানুষের মনের গভীরে নামতে পারা, তার গভীরতা মাপতে পারা, সেই গভীরতার চিত্র-বিচিত্র রূপ দেখতে পাওয়া কি এতটাই সহজ? না, সহজ নয়। কারণ, মানুষ বড়োই দুর্বোধ্য আর বড়োই রহস্যময় এক প্রাণী! মন যা দেখায়, তার পেছনেও দেখার অনেক থাকে। যা জানায়, তার পেছনেও জানার অনেক কিছু থেকে যায়। মন তো কখনোই নিজেকে পুরোটা মেলে ধরে না। কারণ, নিজের পৃথিবীর এ সিংহাসনে মন নিজেই রাজা। এখানে আর কাউকেই সে ভাগ বসাতে দিতে রাজি নয়। এ জন্যই সে একা, বড়ো একা! কী বৈচিত্র্যময় বৈপরীত্য দেখুন তো। এই বৈচিত্র্যময় বৈপরীত্যই মানুষকে রহস্যময় করেছে। এখানেই তার আলাদা স্বকীয়তা। এই স্বকীয়তার সে আগলে রাখে পরম যতনে। আর আগলে রাখতে গিয়ে সে নীরবে হাসে, গোপনে কাঁদে। আপনার আশেপাশে যারা আছেন, চেয়ে দেখুন- ভিন্ন কিছু দেখতে পাচ্ছেন? হাসির পেছনে লুকোনো কান্না কিংবা কান্নার পেছনে লুকোনো হাসি? এ এক অপার রহস্যই বটে! এই রহস্যটা ধরতে পারাটাই হলো বিশ্বকে পড়তে পারা। আসনু, বিশ্বটাকে পড়ে দেখি...
কৃষ্টি আর কুষ্টি’র (পাট) জন্য বিখ্যাত কুষ্টিয়ার সন্তান জিয়াউল হক। জন্ম ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০। তৎকালীন পাকিস্থান নৌবাহিনীতে কর্মরত পিতার কর্মস্থল করাচিতেই কেটেছে শৈশব-কৈশোর ও তারুণ্যের দিনগুলো। ১৯৭৪-এ বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরের ফিলিপনগর প্রত্যাবর্তন। মেন্টাল হেলথ্ নার্সিং, মেন্টাল হেলথ, সাইকিয়াট্রিক রিহাবিলিটেশন-এ পড়াশোনা করেছেন তিনি। সর্বশেষ ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি থেকে মেন্টাল হেলথ, ইএমআই ও ডিমেনশিয়া ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করে ইংল্যান্ডেরই একটি বেসরকারি মেন্টাল হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজার ও ক্লিনিকাল লিড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এখন লেখালিখিতেই ব্যস্ত। নাবিকের নোঙ্গর হয় ঘাটে ঘাটে। শৈশবেই খেলাচ্ছলে কলম হাতে নিয়ে লিখতে বসা, একজন নাবিক পিতার সন্তান জনাব জিয়াউল হকও জীবনের তিন-চতুর্থাংশ সময়ই দেশের বাইরে কাটিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পেরিয়ে চাকরির সুবাদে ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে অবস্থান করলেও নিয়মিত লেখালেখি করছেন। এ পর্যন্ত তাঁর তিরিশটি গ্রন্থ ও গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে ‘বই খাতা কলম’, ‘মানব সম্পদ উন্নয়নে আল কুরআন’, ‘ব্রিটেনে মুসলিম শাসক’, ‘বাংলাদেশের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা’, ‘ইসলাম : সভ্যতার শেষ ঠিকানা’, ‘ইসলামি শাসন ব্যবস্থা : মৌলিক দর্শন ও শর্তাবলি’, ‘ধরণীর পথে পথে’, ‘অন্তর মম বিকশিত করো’, ‘একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ ও যুব মানস’, ‘তেইশ : দ্য টাইম টু রাইজ আপ’, ‘মন ও মানসিক স্বাস্থ্য’ ও ‘মুসলমান : এ নেশন অব দ্য বুক, আলোর ফেরিওয়ালা’ এগুলো অন্যতম। ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সমসাময়িক বিষয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিন শতাধিক ফিচার, প্রবন্ধ ও কলাম লিখেছেন। লন্ডন ভিত্তিক বাংলা-ইংরেজি দ্বি-ভাষিক সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ইউরোবাংলা’র তিনি একজন নিয়মিত কলামিষ্ট ছিলেন।
জীবন একটি রঙিন ক্যানভাসের নাম,এই ক্যানভাসে রংতুলির আঁচড়ে তৈরি হয় জীবনের বহুমাত্রিক গল্পের সমাহার। যে গল্পের ভেতরে রয়েছে মানুষের হাসি-কান্না, দুযোর্গ-দুর্বিপাক, ক্ষোভ-হতাশা ও দুঃখ-বেদনার সমরোহ। যে গল্পের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে নানান জানা-অজানা গল্প, রয়েছে কত বিচিত্র সব ভঙ্গিমা,কত উত্থান-পতন আর রহস্যময়তা!
ধরণির পথে পথে বইটির ট্যাগলাইনে বলা হয়েছে 'মুসাফিরের চোখে দিগদিগন্তের জীবন দর্শন',আসলেই তাই। লেখক বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সমাজে উঠা-বসার কারণে তাদের সমাজকে গভীরভাবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের জীবনপদ্ধতি অনেক কিছুই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন। আর তাই সমাজের ভেতরের অজানা, না বলা গল্পগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন। তাদের জীবনের করুণ পরিণতি হওয়ার পিছনে কী কারণ ছিল? তার জন্য সমাজব্যবস্থা কতটুকু দায়ী? এইসব দৃষ্টিকোণ খুব নিখুত করে তুলে ধরেছেন বইয়ের পাতায় পাতায়।
আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, লেখকের চোখে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের পারিবারিক ব্যবস্থা, তাদের সমাজ ব্যবস্থা, জীবন ব্যবস্থা, তাদের সংস্কৃতির চিত্র, মূল্যবোধ বিষয়গুলো উঠে এসেছে 'ধরণির পথে পথে' বইটিতে। লেখক ইংল্যান্ডের একটি মানসিক হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজার হিশেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। কুয়েতের মানসিক হাসপাতালেও ছিলো তার কর্মক্ষেত্র, যার ফলে তিনি মানসিক অসুস্থ রোগীদেরও খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের উপচে পড়া অশ্রুফোঁটার গল্পগুলো গভীর মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। আর তাদের জীবনের এই অব্যক্ত কথাগুলো লেখক চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন 'ধরণির পথে পথে' বইয়ে।
বইটি মূলত বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া একগুচ্ছ গল্পের সংকলন। ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ২৮টি দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন লেখক। যার প্রতিটি দৃশ্যপট আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। যে পশ্চিমা জীবনের অন্ধ অনুকরণে আমরা ব্যস্ত, সে জীবন বাস্তবে কতটা কষ্টের, অসহায়ত্বের আর হাহাকারে পরিপূর্ণ—বাস্তব জীবনে লেখক সেগুলোর প্রতীক্ষদর্শী হয়ে যেমন অবাক হয়েছেন তেমনি বইটি পড়ার সময় পাঠক হিশেবেও অবাক হতে হয়।
📖 বই-এর অন্তর্ভাগ 📖
📜সিক্স সেভেনটি ফাইভ,ওয়েলবেক রোড: ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল শহরে লেখকের প্রতিবেশী নানীর সাথে বাস করা পিতৃ পরিচয়হীন সন্তান জন্ম নেওয়া শিশুর গল্প।
এই ছোট্ট নিষ্পাপ বাচ্চাটা জানে না তার বাবা কে? কে তার জন্মদাতা? জন্মদাত্রী মা পর্যন্ত জানে না তার সন্তানের জন্মদাতা কে? দেড়-দুই বছরের শিশুকে ফেলে স্পেনে চলে যায় তার জন্মদাত্রী মা। ছোট্ট অবুঝ শিশুটি লেখককে বলে, 'জিয়া,উইল ইউ ব্রিং মাই ড্যাড ব্যাক টু মি?'
📜 একজন মুহাম্মাদ তাওফিক: ফিলিস্তিনের এক নাগরিকের সর্বস্ব হারিয়ে মানসিক হাসপাতালে বাসিন্দা হওয়ার করুণ গল্প। কীভাবে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে মুহাম্মাদ তাওফিক মানসিক হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান। যে মানুষটি আজও বিভিন্ন পত্রিকায় তন্নতন্ন করে খুঁজছেন তার স্ত্রী-কন্যার ঠিকানা।
📜 ট্রেসি: "কখনো কি তুমি হয়েছ একা? হয়েছ কি বেদনায় নীল?
এতটা ভালো কি বেসেছো কাউকে,যতটা তোমাতে আমি হয়েছি লীন!"
অবহেলায় জর্জরিত তিরাশি বছরের বৃদ্ধা মায়ের গল্প। নার্সিং হোমে ট্রেসির মুমূর্ষু সিচুয়েশনেও তার সন্তানকে কাছে পায়নি,বিগত নয়টি বছর তার মায়ের একটিবার খোঁজ নিতে পারেনি। মায়ের মৃত্যুতে কেবল একটি শোকবার্তা পাঠিয়ে সেই ছেলেটির দায়িত্ব শেষ করে।
📜 সখি ভালোবাসা কারে কয়: থাইল্যান্ডের একটি মেয়ের ভালোবাসার প্রলোভন গল্প। বর্তমানে তরুণ সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো ভালোবাসার প্রলোভন। এই গল্পে আপনি জানতে পারবেন নোপার জীবন্ত লাশের পরিণত হওয়ার ঘটনা।
📜 এক এডওয়ার্ড হজকিন ও তার ভালোবাসা: প্রেমিকা নিকোলা তার কাছ থেকে পালিয়ে বয়ফ্রেন্ডের কাছে চলে যাওয়ার পরও জনাব এডি হজকিন তার প্রেমিকাকে পাগলের মতো করে সারাটিজীবন ভালোবেসে গিয়েছে শুধু তাই নয় মৃত্যুর পূর্বে তার সকল সম্পত্তি নিকোলার নামে উইল করে দিয়ে গেছেন,যার পরিমাণ তিরাশি হাজার পাউন্ড। সাথে একটি গ্রিটিংস কার্ড,যার ওপরে এডি নিজ হাতে লিখেছেন,
'তোমারে এতটা আমি চেয়েছিনু মনে ভাষাতেও যা যায় না কহন! তাতেও তোমার মন বিষাদে ভরা!জেনে ভুলে যাব ভাবনা তোমার-করেছিনু পণ।'
📜 সে আমার ছোটো বোন,বড়ো আদরের: জন্মের পর থেকে, যে বাবা আদর-সোহাগ দিয়ে সন্তানকে লালন-পালন করে আসছে, তার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে, দীর্ঘদিন সংসার পর হঠাৎ মা দাবি করে সেই সন্তানটি তার নয়!
📜 আমার ও মায়ের মূল্য কত: গল্পটি পড়ার পূর্বে শিরোনাম দেখে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম অনেকক্ষণ যাবত আর মনের ভেতর প্রশ্নসহ ধাক্কা খেয়েছে, "আমার ও মায়ের মূল্য কত।"
কার মূল্য বেশি? ওই জ্যাকপট লটারির, না একটি কুকুরের? না একজন জন্মদাত্রী মায়ের? একটি জ্যাকপট লটারির মূল্য এক পাউন্ড মাত্র, তা জানি। একটি কুকুরের মূল্য আমার জানা নেই। আমার মায়ের মূল্য অবশ্য টাকার অংকে সঠিক জানি না! তবে, এটুকু জানি, সকল সম্পদ তো পরের কথা, আমার পুরো জীবনটাই মায়ের জন্য হাসিমুখে বিলিয়ে দিতে পারি।
হাসপাতালে সেরিব্রাল স্ট্রোক করে মা মারা গেছে। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ তার মেয়ে দিতে গিয়ে ওপাশ থেকে তার মেয়ে জানালো, কিছুক্ষণ পরেই টিভিতে জ্যাকপট লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে! তিনি সেই লটারি টিকিট কিনেছেন এবং লাইভ ড্রটি টিভিতে দেখবেন তাই এখন যেতে পারবে না! বিষ্ময়ে হতবাক হয়েছি করুণ এই ঘটনাটি পড়তে গিয়ে।
📜 আমি যে মা,আমার কি রাগ করে: পারিবারিক বন্ধন কতোটা ঠুনকো সত্তর বয়স্কা জেসি নিকলসনের গল্পতে সেই চিত্র ভেসে উঠেছে। প্রায় এক যুগের চেয়েও বেশি সময় ধরে স্বামীর সঙ্গে ভালোই সংসার চলছিল। একদিন বলা নেই, কওয়া নেই তার স্বামী উধাও! ফোন করে জানালেন- তিনি আদালতে ডিভোর্স চেয়েছেন,একটু একা থাকতে চান! কিছু দিনের মধ্যেই ডিভোর্স হয়ে গেল। এরপরে সাত-আট বছর পর আবার নতুন করে সংসার শুরু করে নিকের সাথে। দুই যুবতি কন্যা, সংসার আর চাকরি নিয়ে জেসি ব্যস্ত কিছুদিনের মাথায় নিকও চলে গেলে তাকে ছেড়ে। একদিন নিক জেসিকে টেলিফোন করে জানেন, বড়ো মেয়ে রিটা নাকি তার ঔরসজাত সন্তান নয় । জেসি তার নিজের কানকেও এ কথা বিশ্বাস করাতে পারছিলো না। বড়ো মেয়ে রিটা লজ্জায়, অনুশোচনায় জেসিকে ফেলে চলে গেলো আর খামে লিখে পাঠালো-'মা,ক্ষমা করে দিও।'
প্রায় কুড়ি বছর পার হয়ে গেলো, একটিবারের জন্যও জেসির সামনে আসলো না বড়ো মেয়ে রিটা। জেসি সারারাত কেঁদে যান,তার কান্না পাশের কেবিনের রোগীরা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে না। আর অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে,কবে তার বড়ো মেয়ে রিটা আসবে, কবে তাকে একনজর দেখবে।
কারণ, তিনি যে মা! মায়েরা কী আর রাগ করে থাকতে পারে।
📜 একা বড় একা: 'বুঝলে বাছা,সময়কে আমি মূল্য দিইনি।
আজ সময় আমার ওপর প্রতিশোধ নিয়ে তার মূল্য আদায় করে নিচ্ছে!
একাকিত্বের জ্বালায় হাঁপিয়ে ওঠা আশি বয়সের জিমির গল্প। নিঃসঙ্গতাও যে একটা অসুখ এবং তার কোনো ওষুধ যে ডাক্তার দিতে পারে না। লেখকের প্রতিবেশী জিমি। একাত্মতার কারণে ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ তিনি যেন এক অন্য জগতের বাসিন্দা।এই রোগটি আস্তে আস্তে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। জিমির ক্ষেত্রে ঠিক এমনটি হয়েছে। জিমি আয়নার দাঁড়িয়ে নিজেকেই নিজে চিনতে পারছেন না। জীবনের অন্তীম সময়েও তার পাশে কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিলো না। তিনি ছিলেন একা, আর এখন মর্গেও পড়ে আছেন একা।
📜 তোমারে করি নমষ্কার: একজন মেয়ে চিকিৎসক ড.শাফিয়া একজন নিরুপায় স্ত্রীর উপকারের গল্প। বাস্তবতার নির্মম পরিহাসে এক বাংলাদেশী যুবতি আরবে আসলে তিনি এখানেও বাড়িওয়ালার শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হন। সে তার প্রতিবাদ করতে গেলে বাড়িওয়ালার ক্ষমতার দাপটে তার সাথে ঘটে যায় আরও উল্টো ঘটনা। মেন্টাল হসপিটাল হয় তার আবাসস্থল। লেখকের সহকর্মী ড. শাফিয়া যিনি তার সর্বস্ব দিয়ে সেই ভুক্তভোগী নারীর প্রাপ্য আদায়ে লড়ে যান। তার সাথে ঘটে যাওয়ার অন্যায়ের প্রতিবাদে এক মহিয়সী নারীর মতো লড়ে গিয়েছেন। যে লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি ঘটে তার চিকিৎসা পেশা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার মাধ্যমে। তাই তো লেখক সেই মহীয়সী নারীকে আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে গেলে, 'তোমাকে করি নমস্কার!'
📜 হাসি-কান্নার কথকতা: মানুষ রূপী কিছু পশু যারা সহজ-সরল মানুষগুলোকে সারা জীবন ধরে কাঁদিয়েছে তাদের কথা তুলে ধরেছে লেখক।
ধর্ষক যখন শততম ধর্ষণ করার পর ঘটা করে সেঞ্চুরি উদযাপন করে, উল্লাসে-উচ্ছ্বাসে,সাফল্যের বিকৃত বিশ্বাসে হেসে লুটিয়ে পড়ে তখন সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে অন্তত একশত ছাত্রীর চাপাকান্না!
যারা কুশলী রাজনীতিক কুটিল চক্রান্তে বাংলাদেশের শত শত গার্মেন্টসে ভাঙচুর আর তান্ডব চালিয়ে কিছু রাজনীতিবিদ,শ্রমিকনেতা হাসছেন বটে,কিন্তু এই ঘটনায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়া হাজারো শ্রমিক পেটের দায়ে নীরবে- নিভৃতে কেঁদে চলেছে!
বিখ্যাত সব হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সামনে কি আমরা বিনা চিকিৎসার মানুষ মরতে দেখিনি? তাদের সামনে কোনো আশা নেই। অতএব, যন্ত্রণায় কাতরানো পাশাপাশি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন ওই 'ওপরওয়ালার' কাছে। এই গোষ্ঠী কান্না-ই ওইসব ক্লিনিকমালিক বা চিকিৎসকদের সারাটা মুখ ছড়ানো হাসির উৎস।
উপরোক্ত আলোচ্য শিরোনামের গল্পগুলোসহ, একজন পাঠক হিসেবে বইটির যে গল্পগুলো আমাকে শিহরিত করেছে, চোখের কোণায় জমতে থাকা অশ্রু ফোঁটার কারণ হয়েছে, বিষ্ময়ে হতবাক করেছে আর আমার বোধের দুয়ারে কড়া নেড়েছে এমনই আরও কয়েকটি গল্প হলো—
• কালের নির্মমতার সাক্ষী • খোকন সোনা বলি শোনো • সখী ভালোবাসা কারে কয় • একা, বড় একা • একজন জাদ আর রাব • হাসি-কান্নার কথকতা • টাইম; দ্যা অ্যাভেঞ্জার • তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয় • শোনো বাহে, জাতিসংঘ তাকেই বলে • গুড লাক পলিন
📚 বইটির নামকরণের সার্থকতা 📚
লেখকের দেখা ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া সেইসব দৃশ্যপটগুলোকে গ্রন্থ আকারে একত্রে মলাটবদ্ধ করেছেন গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স। বর্তমান সময়ের সনামধন্য প্রকাশনী তাই গ্রন্থটির নামকরণের স্বার্থকতার ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই উঠে না।
📚পাঠ-প্রতিক্রিয়া 📚
ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পড়তে গিয়ে কখনো আমার চোখ ভিজেছে,কখনো বিস্মিত চোখে থাকিয়ে ছিলাম বইয়ের গল্পের পাতায় পাতায়। গল্পগুলো কখনো শিহরণ দিচ্ছিল, আবার কিছু ঘটনা পড়তে গিয়ে শরীরটা ঘৃণায় ঘিনঘিন করছিলো। আবার কিছু ঘটনা পড়ে চোখ মুছতে মুছতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম।
📚 বইয়ের অবয়ব 📚
বইয়ের ছাপা, পৃষ্ঠার মান, পৃষ্ঠাসংখ্যা, বাঁধাই, আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুপাতে মুদ্রিত মূল্য নির্ধারণের দিকটি সবার পছন্দ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বইয়ের কাগজের রঙ হালকা হলুদ হওয়াতে আমার কাছে বই পাঠ করতে বেশ ভালো লেগেছে।
📚 প্রচ্ছদ 📚
প্রচ্ছদ যত আকর্ষণীয় হবে পাঠক ততই বইটি পড়তে আগ্রহী হবে। একটি বইয়ের অর্থপূর্ণ প্রকাশ ঘটে সৃজনশীল প্রচ্ছদের মাধ্যমে। 'ধরণির পথে পথে' বইটির প্রচ্ছদ ঠিক তেমনি। একটি প্রচ্ছদই ধারণা দিয়ে দেয় বইয়ের ভেতরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে। প্রচ্ছদে মিশে থাকা গভীর দর্শনই যেন জানান দেয় বইয়ের নামকরণের সার্থকতা।
📓পাঠ পর্যালোচনা📓
পাঠককে আঁকড়ে ধরার জন্য একটা ভালো স্টার্টিং থাকা দরকার। যেটা পড়ে পাঠক নড়েচড়ে বসবে এবং গল্পের প্রতি আগ্রহ পাবে। ''ধরণির পথে পথে'' বইটির গল্পগুলো স্টার্টিং অনেকটা সেরকমই।
.
প্রতিটি চরিত্রকে শুরু থেকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার সময় তাঁর বর্ণনাশৈলী ছিল বেশ শালীন ও শৈল্পিক।
.
লিটারেরি টুলস হচ্ছে সাহিত্যের অলঙ্কার। মূল গল্পটাকে পাঠকের কাছে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য লেখক এখানে তাঁর মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
.
যে বিষয়গুলো অংসগতি মনে হয়েছে তা হচ্ছে, প্রতিটি গল্পের যে জিনিসটা বেশি চোখে পড়েছে তা হলো— লেখকের ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা, যা আমার মতে বাংলা ভাষায় লেখার সময় ইংরেজি শব্দের ব্যবহারও দূষণীয়। . যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অংসগতি মনে হয়েছে তা হলো—গল্পের নামকরণেও গানের লাইন ব্যবহার করা।
.
গল্পে একাধিকবার গানের লাইন এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অনেকটা বেমানান লেগেছিলো আমার কাছে।
এছাড়া ওভারঅল বলতে গেলে—
আমি মনে করি,ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আপনাকে কাঁদাবে আর এরসাথে সেই সমাজে ভেতরের জগতে আপনি ঢুকতে সক্ষম হবেন। প্রতিটি ঘটনা পড়ে আপনার চিন্তার জগতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে নতুন করে ভাবতে শুরু করবে। আমরা যাদের আধুনিক উন্নত সমাজ বলে জানি,তাদের সমাজের করুণ দশা পতনের সীমা ছাড়িয়ে আজ তারা অধঃপতনে কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, বইটির ঘটনাগুলো পড়ার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি তা জানতে পারবেন। আরো জানতে পারবেন মধ্যেপ্রাচ্য ও পশ্চিমের সমাজের সমাজ ব্যবস্থা,জীবন ব্যবস্থা,পারিবারিক ব্যবস্থা, নৈতিক মূল্যবোন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।
📚 সমাপিকা 📚
আমাদের তথাকথিত সমাজের মানুষেরা যে পাশ্চাত্য সভ্যতার গুনোগান গায়, বইটি পড়লে তারা সেই পাশ্চাত্য সভ্যতার স্বরূপটা উপলব্ধি করতে পারবে। আশা করি বইটি পাঠকদের ভালো লাগবে, বইটি পড়ে জানতে পারবেন, মানুষের দুর্বোধ্য ও রহস্যময়ের ইতিহাস, মানুষের জীবন দর্শন। যারা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে উপলব্ধি হয়েছে, সেইসব ভুলগুলো যেনো আমরা না করি,সেই পথে যেনো না যায়। বইয়ের গল্পের নায়কদের যে করুণ পরিণতি হয়েছে, সেই করুণ পরিণতি না যায়, গল্পগুলোর সাথে সেই শিক্ষাও তুলে ধরেছে, 'ধরণির বইয়ে পাতায় পাতায়'।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সম্মানিত লেখক জিয়াউল হক ভাইসহ বইয়ের প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ভাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
||বুক-রিভিউ ও ফটোগ্রাফি || ~মঈন উদ্দীন চৌধুরী সাকিব।
জীবন একটি রঙিন ক্যানভাসের নাম,এই ক্যানভাসে রংতুলির আঁচড়ে তৈরি হয় জীবনের বহুমাত্রিক গল্পের সমাহার। যে গল্পের ভেতরে রয়েছে মানুষের হাসি-কান্না, দুযোর্গ-দুর্বিপাক, ক্ষোভ-হতাশা ও দুঃখ-বেদনার সমরোহ। যে গল্পের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে নানান জানা-অজানা গল্প, রয়েছে কত বিচিত্র সব ভঙ্গিমা,কত উত্থান-পতন আর রহস্যময়তা!
ধরণির পথে পথে বইটির ট্যাগলাইনে বলা হয়েছে 'মুসাফিরের চোখে দিগদিগন্তের জীবন দর্শন',আসলেই তাই। লেখক বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সমাজে উঠা-বসার কারণে তাদের সমাজকে গভীরভাবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের জীবনপদ্ধতি অনেক কিছুই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন। আর তাই সমাজের ভেতরের অজানা, না বলা গল্পগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন। তাদের জীবনের করুণ পরিণতি হওয়ার পিছনে কী কারণ ছিল? তার জন্য সমাজব্যবস্থা কতটুকু দায়ী? এইসব দৃষ্টিকোণ খুব নিখুত করে তুলে ধরেছেন বইয়ের পাতায় পাতায়।
আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, লেখকের চোখে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের পারিবারিক ব্যবস্থা, তাদের সমাজ ব্যবস্থা, জীবন ব্যবস্থা, তাদের সংস্কৃতির চিত্র, মূল্যবোধ বিষয়গুলো উঠে এসেছে 'ধরণির পথে পথে' বইটিতে। লেখক ইংল্যান্ডের একটি মানসিক হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজার হিশেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। কুয়েতের মানসিক হাসপাতালেও ছিলো তার কর্মক্ষেত্র, যার ফলে তিনি মানসিক অসুস্থ রোগীদেরও খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের উপচে পড়া অশ্রুফোঁটার গল্পগুলো গভীর মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। আর তাদের জীবনের এই অব্যক্ত কথাগুলো লেখক চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন 'ধরণির পথে পথে' বইয়ে।
বইটি মূলত বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া একগুচ্ছ গল্পের সংকলন। ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ২৮টি দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন লেখক। যার প্রতিটি দৃশ্যপট আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। যে পশ্চিমা জীবনের অন্ধ অনুকরণে আমরা ব্যস্ত, সে জীবন বাস্তবে কতটা কষ্টের, অসহায়ত্বের আর হাহাকারে পরিপূর্ণ—বাস্তব জীবনে লেখক সেগুলোর প্রতীক্ষদর্শী হয়ে যেমন অবাক হয়েছেন তেমনি বইটি পড়ার সময় পাঠক হিশেবেও অবাক হতে হয়।
📖 বই-এর অন্তর্ভাগ 📖
📜সিক্স সেভেনটি ফাইভ,ওয়েলবেক রোড: ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল শহরে লেখকের প্রতিবেশী নানীর সাথে বাস করা পিতৃ পরিচয়হীন সন্তান জন্ম নেওয়া শিশুর গল্প।
এই ছোট্ট নিষ্পাপ বাচ্চাটা জানে না তার বাবা কে? কে তার জন্মদাতা? জন্মদাত্রী মা পর্যন্ত জানে না তার সন্তানের জন্মদাতা কে? দেড়-দুই বছরের শিশুকে ফেলে স্পেনে চলে যায় তার জন্মদাত্রী মা। ছোট্ট অবুঝ শিশুটি লেখককে বলে, 'জিয়া,উইল ইউ ব্রিং মাই ড্যাড ব্যাক টু মি?'
📜 একজন মুহাম্মাদ তাওফিক: ফিলিস্তিনের এক নাগরিকের সর্বস্ব হারিয়ে মানসিক হাসপাতালে বাসিন্দা হওয়ার করুণ গল্প। কীভাবে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে মুহাম্মাদ তাওফিক মানসিক হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান। যে মানুষটি আজও বিভিন্ন পত্রিকায় তন্নতন্ন করে খুঁজছেন তার স্ত্রী-কন্যার ঠিকানা।
📜 ট্রেসি: "কখনো কি তুমি হয়েছ একা? হয়েছ কি বেদনায় নীল?
এতটা ভালো কি বেসেছো কাউকে,যতটা তোমাতে আমি হয়েছি লীন!"
অবহেলায় জর্জরিত তিরাশি বছরের বৃদ্ধা মায়ের গল্প। নার্সিং হোমে ট্রেসির মুমূর্ষু সিচুয়েশনেও তার সন্তানকে কাছে পায়নি,বিগত নয়টি বছর তার মায়ের একটিবার খোঁজ নিতে পারেনি। মায়ের মৃত্যুতে কেবল একটি শোকবার্তা পাঠিয়ে সেই ছেলেটির দায়িত্ব শেষ করে।
📜 সখি ভালোবাসা কারে কয়: থাইল্যান্ডের একটি মেয়ের ভালোবাসার প্রলোভন গল্প। বর্তমানে তরুণ সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো ভালোবাসার প্রলোভন। এই গল্পে আপনি জানতে পারবেন নোপার জীবন্ত লাশের পরিণত হওয়ার ঘটনা।
📜 এক এডওয়ার্ড হজকিন ও তার ভালোবাসা: প্রেমিকা নিকোলা তার কাছ থেকে পালিয়ে বয়ফ্রেন্ডের কাছে চলে যাওয়ার পরও জনাব এডি হজকিন তার প্রেমিকাকে পাগলের মতো করে সারাটিজীবন ভালোবেসে গিয়েছে শুধু তাই নয় মৃত্যুর পূর্বে তার সকল সম্পত্তি নিকোলার নামে উইল করে দিয়ে গেছেন,যার পরিমাণ তিরাশি হাজার পাউন্ড। সাথে একটি গ্রিটিংস কার্ড,যার ওপরে এডি নিজ হাতে লিখেছেন,
'তোমারে এতটা আমি চেয়েছিনু মনে ভাষাতেও যা যায় না কহন! তাতেও তোমার মন বিষাদে ভরা!জেনে ভুলে যাব ভাবনা তোমার-করেছিনু পণ।'
📜 সে আমার ছোটো বোন,বড়ো আদরের: জন্মের পর থেকে, যে বাবা আদর-সোহাগ দিয়ে সন্তানকে লালন-পালন করে আসছে, তার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে, দীর্ঘদিন সংসার পর হঠাৎ মা দাবি করে সেই সন্তানটি তার নয়!
📜 আমার ও মায়ের মূল্য কত: গল্পটি পড়ার পূর্বে শিরোনাম দেখে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম অনেকক্ষণ যাবত আর মনের ভেতর প্রশ্নসহ ধাক্কা খেয়েছে, "আমার ও মায়ের মূল্য কত।"
কার মূল্য বেশি? ওই জ্যাকপট লটারির, না একটি কুকুরের? না একজন জন্মদাত্রী মায়ের? একটি জ্যাকপট লটারির মূল্য এক পাউন্ড মাত্র, তা জানি। একটি কুকুরের মূল্য আমার জানা নেই। আমার মায়ের মূল্য অবশ্য টাকার অংকে সঠিক জানি না! তবে, এটুকু জানি, সকল সম্পদ তো পরের কথা, আমার পুরো জীবনটাই মায়ের জন্য হাসিমুখে বিলিয়ে দিতে পারি।
হাসপাতালে সেরিব্রাল স্ট্রোক করে মা মারা গেছে। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ তার মেয়ে দিতে গিয়ে ওপাশ থেকে তার মেয়ে জানালো, কিছুক্ষণ পরেই টিভিতে জ্যাকপট লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে! তিনি সেই লটারি টিকিট কিনেছেন এবং লাইভ ড্রটি টিভিতে দেখবেন তাই এখন যেতে পারবে না! বিষ্ময়ে হতবাক হয়েছি করুণ এই ঘটনাটি পড়তে গিয়ে।
📜 আমি যে মা,আমার কি রাগ করে: পারিবারিক বন্ধন কতোটা ঠুনকো সত্তর বয়স্কা জেসি নিকলসনের গল্পতে সেই চিত্র ভেসে উঠেছে। প্রায় এক যুগের চেয়েও বেশি সময় ধরে স্বামীর সঙ্গে ভালোই সংসার চলছিল। একদিন বলা নেই, কওয়া নেই তার স্বামী উধাও! ফোন করে জানালেন- তিনি আদালতে ডিভোর্স চেয়েছেন,একটু একা থাকতে চান! কিছু দিনের মধ্যেই ডিভোর্স হয়ে গেল। এরপরে সাত-আট বছর পর আবার নতুন করে সংসার শুরু করে নিকের সাথে। দুই যুবতি কন্যা, সংসার আর চাকরি নিয়ে জেসি ব্যস্ত কিছুদিনের মাথায় নিকও চলে গেলে তাকে ছেড়ে। একদিন নিক জেসিকে টেলিফোন করে জানেন, বড়ো মেয়ে রিটা নাকি তার ঔরসজাত সন্তান নয় । জেসি তার নিজের কানকেও এ কথা বিশ্বাস করাতে পারছিলো না। বড়ো মেয়ে রিটা লজ্জায়, অনুশোচনায় জেসিকে ফেলে চলে গেলো আর খামে লিখে পাঠালো-'মা,ক্ষমা করে দিও।'
প্রায় কুড়ি বছর পার হয়ে গেলো, একটিবারের জন্যও জেসির সামনে আসলো না বড়ো মেয়ে রিটা। জেসি সারারাত কেঁদে যান,তার কান্না পাশের কেবিনের রোগীরা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে না। আর অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে,কবে তার বড়ো মেয়ে রিটা আসবে, কবে তাকে একনজর দেখবে।
কারণ, তিনি যে মা! মায়েরা কী আর রাগ করে থাকতে পারে।
📜 একা বড় একা: 'বুঝলে বাছা,সময়কে আমি মূল্য দিইনি।
আজ সময় আমার ওপর প্রতিশোধ নিয়ে তার মূল্য আদায় করে নিচ্ছে!
একাকিত্বের জ্বালায় হাঁপিয়ে ওঠা আশি বয়সের জিমির গল্প। নিঃসঙ্গতাও যে একটা অসুখ এবং তার কোনো ওষুধ যে ডাক্তার দিতে পারে না। লেখকের প্রতিবেশী জিমি। একাত্মতার কারণে ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ তিনি যেন এক অন্য জগতের বাসিন্দা।এই রোগটি আস্তে আস্তে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। জিমির ক্ষেত্রে ঠিক এমনটি হয়েছে। জিমি আয়নার দাঁড়িয়ে নিজেকেই নিজে চিনতে পারছেন না। জীবনের অন্তীম সময়েও তার পাশে কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিলো না। তিনি ছিলেন একা, আর এখন মর্গেও পড়ে আছেন একা।
📜 তোমারে করি নমষ্কার: একজন মেয়ে চিকিৎসক ড.শাফিয়া একজন নিরুপায় স্ত্রীর উপকারের গল্প। বাস্তবতার নির্মম পরিহাসে এক বাংলাদেশী যুবতি আরবে আসলে তিনি এখানেও বাড়িওয়ালার শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হন। সে তার প্রতিবাদ করতে গেলে বাড়িওয়ালার ক্ষমতার দাপটে তার সাথে ঘটে যায় আরও উল্টো ঘটনা। মেন্টাল হসপিটাল হয় তার আবাসস্থল। লেখকের সহকর্মী ড. শাফিয়া যিনি তার সর্বস্ব দিয়ে সেই ভুক্তভোগী নারীর প্রাপ্য আদায়ে লড়ে যান। তার সাথে ঘটে যাওয়ার অন্যায়ের প্রতিবাদে এক মহিয়সী নারীর মতো লড়ে গিয়েছেন। যে লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি ঘটে তার চিকিৎসা পেশা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার মাধ্যমে। তাই তো লেখক সেই মহীয়সী নারীকে আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে গেলে, 'তোমাকে করি নমস্কার!'
📜 হাসি-কান্নার কথকতা: মানুষ রূপী কিছু পশু যারা সহজ-সরল মানুষগুলোকে সারা জীবন ধরে কাঁদিয়েছে তাদের কথা তুলে ধরেছে লেখক।
ধর্ষক যখন শততম ধর্ষণ করার পর ঘটা করে সেঞ্চুরি উদযাপন করে, উল্লাসে-উচ্ছ্বাসে,সাফল্যের বিকৃত বিশ্বাসে হেসে লুটিয়ে পড়ে তখন সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে অন্তত একশত ছাত্রীর চাপাকান্না!
যারা কুশলী রাজনীতিক কুটিল চক্রান্তে বাংলাদেশের শত শত গার্মেন্টসে ভাঙচুর আর তান্ডব চালিয়ে কিছু রাজনীতিবিদ,শ্রমিকনেতা হাসছেন বটে,কিন্তু এই ঘটনায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়া হাজারো শ্রমিক পেটের দায়ে নীরবে- নিভৃতে কেঁদে চলেছে!
বিখ্যাত সব হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সামনে কি আমরা বিনা চিকিৎসার মানুষ মরতে দেখিনি? তাদের সামনে কোনো আশা নেই। অতএব, যন্ত্রণায় কাতরানো পাশাপাশি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন ওই 'ওপরওয়ালার' কাছে। এই গোষ্ঠী কান্না-ই ওইসব ক্লিনিকমালিক বা চিকিৎসকদের সারাটা মুখ ছড়ানো হাসির উৎস।
উপরোক্ত আলোচ্য শিরোনামের গল্পগুলোসহ, একজন পাঠক হিসেবে বইটির যে গল্পগুলো আমাকে শিহরিত করেছে, চোখের কোণায় জমতে থাকা অশ্রু ফোঁটার কারণ হয়েছে, বিষ্ময়ে হতবাক করেছে আর আমার বোধের দুয়ারে কড়া নেড়েছে এমনই আরও কয়েকটি গল্প হলো—
• কালের নির্মমতার সাক্ষী • খোকন সোনা বলি শোনো • সখী ভালোবাসা কারে কয় • একা, বড় একা • একজন জাদ আর রাব • হাসি-কান্নার কথকতা • টাইম; দ্যা অ্যাভেঞ্জার • তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয় • শোনো বাহে, জাতিসংঘ তাকেই বলে • গুড লাক পলিন
📚 বইটির নামকরণের সার্থকতা 📚
লেখকের দেখা ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া সেইসব দৃশ্যপটগুলোকে গ্রন্থ আকারে একত্রে মলাটবদ্ধ করেছেন গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স। বর্তমান সময়ের সনামধন্য প্রকাশনী তাই গ্রন্থটির নামকরণের স্বার্থকতার ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই উঠে না।
📚পাঠ-প্রতিক্রিয়া 📚
ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পড়তে গিয়ে কখনো আমার চোখ ভিজেছে,কখনো বিস্মিত চোখে থাকিয়ে ছিলাম বইয়ের গল্পের পাতায় পাতায়। গল্পগুলো কখনো শিহরণ দিচ্ছিল, আবার কিছু ঘটনা পড়তে গিয়ে শরীরটা ঘৃণায় ঘিনঘিন করছিলো। আবার কিছু ঘটনা পড়ে চোখ মুছতে মুছতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম।
📚 বইয়ের অবয়ব 📚
বইয়ের ছাপা, পৃষ্ঠার মান, পৃষ্ঠাসংখ্যা, বাঁধাই, আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুপাতে মুদ্রিত মূল্য নির্ধারণের দিকটি সবার পছন্দ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বইয়ের কাগজের রঙ হালকা হলুদ হওয়াতে আমার কাছে বই পাঠ করতে বেশ ভালো লেগেছে।
📚 প্রচ্ছদ 📚
প্রচ্ছদ যত আকর্ষণীয় হবে পাঠক ততই বইটি পড়তে আগ্রহী হবে। একটি বইয়ের অর্থপূর্ণ প্রকাশ ঘটে সৃজনশীল প্রচ্ছদের মাধ্যমে। 'ধরণির পথে পথে' বইটির প্রচ্ছদ ঠিক তেমনি। একটি প্রচ্ছদই ধারণা দিয়ে দেয় বইয়ের ভেতরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে। প্রচ্ছদে মিশে থাকা গভীর দর্শনই যেন জানান দেয় বইয়ের নামকরণের সার্থকতা।
📓পাঠ পর্যালোচনা📓
পাঠককে আঁকড়ে ধরার জন্য একটা ভালো স্টার্টিং থাকা দরকার। যেটা পড়ে পাঠক নড়েচড়ে বসবে এবং গল্পের প্রতি আগ্রহ পাবে। ''ধরণির পথে পথে'' বইটির গল্পগুলো স্টার্টিং অনেকটা সেরকমই।
.
প্রতিটি চরিত্রকে শুরু থেকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার সময় তাঁর বর্ণনাশৈলী ছিল বেশ শালীন ও শৈল্পিক।
.
লিটারেরি টুলস হচ্ছে সাহিত্যের অলঙ্কার। মূল গল্পটাকে পাঠকের কাছে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করার জন্য লেখক এখানে তাঁর মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
.
যে বিষয়গুলো অংসগতি মনে হয়েছে তা হচ্ছে, প্রতিটি গল্পের যে জিনিসটা বেশি চোখে পড়েছে তা হলো— লেখকের ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা, যা আমার মতে বাংলা ভাষায় লেখার সময় ইংরেজি শব্দের ব্যবহারও দূষণীয়। . যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অংসগতি মনে হয়েছে তা হলো—গল্পের নামকরণেও গানের লাইন ব্যবহার করা।
.
গল্পে একাধিকবার গানের লাইন এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অনেকটা বেমানান লেগেছিলো আমার কাছে।
এছাড়া ওভারঅল বলতে গেলে—
আমি মনে করি,ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আপনাকে কাঁদাবে আর এরসাথে সেই সমাজে ভেতরের জগতে আপনি ঢুকতে সক্ষম হবেন। প্রতিটি ঘটনা পড়ে আপনার চিন্তার জগতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে নতুন করে ভাবতে শুরু করবে। আমরা যাদের আধুনিক উন্নত সমাজ বলে জানি,তাদের সমাজের করুণ দশা পতনের সীমা ছাড়িয়ে আজ তারা অধঃপতনে কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, বইটির ঘটনাগুলো পড়ার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি তা জানতে পারবেন। আরো জানতে পারবেন মধ্যেপ্রাচ্য ও পশ্চিমের সমাজের সমাজ ব্যবস্থা,জীবন ব্যবস্থা,পারিবারিক ব্যবস্থা, নৈতিক মূল্যবোন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।
📚 সমাপিকা 📚
আমাদের তথাকথিত সমাজের মানুষেরা যে পাশ্চাত্য সভ্যতার গুনোগান গায়, বইটি পড়লে তারা সেই পাশ্চাত্য সভ্যতার স্বরূপটা উপলব্ধি করতে পারবে। আশা করি বইটি পাঠকদের ভালো লাগবে, বইটি পড়ে জানতে পারবেন, মানুষের দুর্বোধ্য ও রহস্যময়ের ইতিহাস, মানুষের জীবন দর্শন। যারা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে উপলব্ধি হয়েছে, সেইসব ভুলগুলো যেনো আমরা না করি,সেই পথে যেনো না যায়। বইয়ের গল্পের নায়কদের যে করুণ পরিণতি হয়েছে, সেই করুণ পরিণতি না যায়, গল্পগুলোর সাথে সেই শিক্ষাও তুলে ধরেছে, 'ধরণির বইয়ে পাতায় পাতায়'।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সম্মানিত লেখক জিয়াউল হক ভাইসহ বইয়ের প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ভাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
||বুক-রিভিউ ও ফটোগ্রাফি || ~মঈন উদ্দীন চৌধুরী সাকিব।
Read More
Was this review helpful to you?
By rohim rm,
31 Oct 2022
Verified Purchase
জীবন একটি রঙিন ক্যানভাসের নাম,এই ক্যানভাসে রংতুলির আঁচড়ে তৈরি হয় জীবনের বহুমাত্রিক গল্পের সমাহার। যে গল্পের ভেতরে রয়েছে মানুষের হাসি-কান্না, দুযোর্গ-দুর্বিপাক, ক্ষোভ-হতাশা ও দুঃখ-বেদনার সমরোহ। যে গল্পের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে নানান জানা-অজানা গল্প, রয়েছে কত বিচিত্র সব ভঙ্গিমা,কত উত্থান-পতন আর রহস্যময়তা! ধরণির পথে পথে বইটির ট্যাগলাইনে বলা হয়েছে 'মুসাফিরের চোখে দিগদিগন্তের জীবন দর্শন',আসলেই তাই। লেখক বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সমাজে উঠা-বসার কারণে তাদের সমাজকে গভীরভাবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের জীবনপদ্ধতি অনেক কিছুই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন। আর তাই সমাজের ভেতরের অজানা, না বলা গল্পগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন। তাদের জীবনের করুণ পরিণতি হওয়ার পিছনে কী কারণ ছিল? তার জন্য সমাজব্যবস্থা কতটুকু দায়ী? এইসব দৃষ্টিকোণ খুব নিখুত করে তুলে ধরেছেন বইয়ের পাতায় পাতায়। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, লেখকের চোখে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের পারিবারিক ব্যবস্থা, তাদের সমাজ ব্যবস্থা, জীবন ব্যবস্থা, তাদের সংস্কৃতির চিত্র, মূল্যবোধ বিষয়গুলো উঠে এসেছে 'ধরণির পথে পথে' বইটিতে। লেখক ইংল্যান্ডের একটি মানসিক হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজার হিশেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। কুয়েতের মানসিক হাসপাতালেও ছিলো তার কর্মক্ষেত্র, যার ফলে তিনি মানসিক অসুস্থ রোগীদেরও খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের উপচে পড়া অশ্রুফোঁটার গল্পগুলো গভীর মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। আর তাদের জীবনের এই অব্যক্ত কথাগুলো লেখক চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন 'ধরণির পথে পথে' বইয়ে। বইটি মূলত বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া একগুচ্ছ গল্পের সংকলন। ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ২৮টি দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন লেখক। যার প্রতিটি দৃশ্যপট আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। যে পশ্চিমা জীবনের অন্ধ অনুকরণে আমরা ব্যস্ত, সে জীবন বাস্তবে কতটা কষ্টের, অসহায়ত্বের আর হাহাকারে পরিপূর্ণ—বাস্তব জীবনে লেখক সেগুলোর প্রতীক্ষদর্শী হয়ে যেমন অবাক হয়েছেন তেমনি বইটি পড়ার সময় পাঠক হিশেবেও অবাক হতে হয়। 📖 বই-এর অন্তর্ভাগ 📖 📜সিক্স সেভেনটি ফাইভ,ওয়েলবেক রোড: ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল শহরে লেখকের প্রতিবেশী নানীর সাথে বাস করা পিতৃ পরিচয়হীন সন্তান জন্ম নেওয়া শিশুর গল্প। এই ছোট্ট নিষ্পাপ বাচ্চাটা জানে না তার বাবা কে? কে তার জন্মদাতা? জন্মদাত্রী মা পর্যন্ত জানে না তার সন্তানের জন্মদাতা কে? দেড়-দুই বছরের শিশুকে ফেলে স্পেনে চলে যায় তার জন্মদাত্রী মা। ছোট্ট অবুঝ শিশুটি লেখককে বলে, 'জিয়া,উইল ইউ ব্রিং মাই ড্যাড ব্যাক টু মি?' 📜 একজন মুহাম্মাদ তাওফিক: ফিলিস্তিনের এক নাগরিকের সর্বস্ব হারিয়ে মানসিক হাসপাতালে বাসিন্দা হওয়ার করুণ গল্প। কীভাবে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে মুহাম্মাদ তাওফিক মানসিক হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান। যে মানুষটি আজও বিভিন্ন পত্রিকায় তন্নতন্ন করে খুঁজছেন তার স্ত্রী-কন্যার ঠিকানা। 📜 ট্রেসি: "কখনো কি তুমি হয়েছ একা? হয়েছ কি বেদনায় নীল? এতটা ভালো কি বেসেছো কাউকে,যতটা তোমাতে আমি হয়েছি লীন!" অবহেলায় জর্জরিত তিরাশি বছরের বৃদ্ধা মায়ের গল্প। নার্সিং হোমে ট্রেসির মুমূর্ষু সিচুয়েশনেও তার সন্তানকে কাছে পায়নি,বিগত নয়টি বছর তার মায়ের একটিবার খোঁজ নিতে পারেনি। মায়ের মৃত্যুতে কেবল একটি শোকবার্তা পাঠিয়ে সেই ছেলেটির দায়িত্ব শেষ করে। 📜 সখি ভালোবাসা কারে কয়: থাইল্যান্ডের একটি মেয়ের ভালোবাসার প্রলোভন গল্প। বর্তমানে তরুণ সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো ভালোবাসার প্রলোভন। এই গল্পে আপনি জানতে পারবেন নোপার জীবন্ত লাশের পরিণত হওয়ার ঘটনা। 📜 এক এডওয়ার্ড হজকিন ও তার ভালোবাসা: প্রেমিকা নিকোলা তার কাছ থেকে পালিয়ে বয়ফ্রেন্ডের কাছে চলে যাওয়ার পরও জনাব এডি হজকিন তার প্রেমিকাকে পাগলের মতো করে সারাটিজীবন ভালোবেসে গিয়েছে শুধু তাই নয় মৃত্যুর পূর্বে তার সকল সম্পত্তি নিকোলার নামে উইল করে দিয়ে গেছেন,যার পরিমাণ তিরাশি হাজার পাউন্ড। সাথে একটি গ্রিটিংস কার্ড,যার ওপরে এডি নিজ হাতে লিখেছেন, 'তোমারে এতটা আমি চেয়েছিনু মনে ভাষাতেও যা যায় না কহন! তাতেও তোমার মন বিষাদে ভরা!জেনে ভুলে যাব ভাবনা তোমার-করেছিনু পণ।' 📜 সে আমার ছোটো বোন,বড়ো আদরের: জন্মের পর থেকে, যে বাবা আদর-সোহাগ দিয়ে সন্তানকে লালন-পালন করে আসছে, তার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে, দীর্ঘদিন সংসার পর হঠাৎ মা দাবি করে সেই সন্তানটি তার নয়! 📜 আমার ও মায়ের মূল্য কত: গল্পটি পড়ার পূর্বে শিরোনাম দেখে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম অনেকক্ষণ যাবত আর মনের ভেতর প্রশ্নসহ ধাক্কা খেয়েছে, "আমার ও মায়ের মূল্য কত।" কার মূল্য বেশি? ওই জ্যাকপট লটারির, না একটি কুকুরের? না একজন জন্মদাত্রী মায়ের? একটি জ্যাকপট লটারির মূল্য এক পাউন্ড মাত্র, তা জানি। একটি কুকুরের মূল্য আমার জানা নেই। আমার মায়ের মূল্য অবশ্য টাকার অংকে সঠিক জানি না! তবে, এটুকু জানি, সকল সম্পদ তো পরের কথা, আমার পুরো জীবনটাই মায়ের জন্য হাসিমুখে বিলিয়ে দিতে পারি। হাসপাতালে সেরিব্রাল স্ট্রোক করে মা মারা গেছে। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ তার মেয়ে দিতে গিয়ে ওপাশ থেকে তার মেয়ে জানালো, কিছুক্ষণ পরেই টিভিতে জ্যাকপট লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে! তিনি সেই লটারি টিকিট কিনেছেন এবং লাইভ ড্রটি টিভিতে দেখবেন তাই এখন যেতে পারবে না! বিষ্ময়ে হতবাক হয়েছি করুণ এই ঘটনাটি পড়তে গিয়ে। 📜 আমি যে মা,আমার কি রাগ করে: পারিবারিক বন্ধন কতোটা ঠুনকো সত্তর বয়স্কা জেসি নিকলসনের গল্পতে সেই চিত্র ভেসে উঠেছে। প্রায় এক যুগের চেয়েও বেশি সময় ধরে স্বামীর সঙ্গে ভালোই সংসার চলছিল। একদিন বলা নেই, কওয়া নেই তার স্বামী উধাও! ফোন করে জানালেন- তিনি আদালতে ডিভোর্স চেয়েছেন,একটু একা থাকতে চান! কিছু দিনের মধ্যেই ডিভোর্স হয়ে গেল। এরপরে সাত-আট বছর পর আবার নতুন করে সংসার শুরু করে নিকের সাথে। দুই যুবতি কন্যা, সংসার আর চাকরি নিয়ে জেসি ব্যস্ত কিছুদিনের মাথায় নিকও চলে গেলে তাকে ছেড়ে। একদিন নিক জেসিকে টেলিফোন করে জানেন, বড়ো মেয়ে রিটা নাকি তার ঔরসজাত সন্তান নয় । জেসি তার নিজের কানকেও এ কথা বিশ্বাস করাতে পারছিলো না। বড়ো মেয়ে রিটা লজ্জায়, অনুশোচনায় জেসিকে ফেলে চলে গেলো আর খামে লিখে পাঠালো-'মা,ক্ষমা করে দিও।' প্রায় কুড়ি বছর পার হয়ে গেলো, একটিবারের জন্যও জেসির সামনে আসলো না বড়ো মেয়ে রিটা। জেসি সারারাত কেঁদে যান,তার কান্না পাশের কেবিনের রোগীরা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে না। আর অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে,কবে তার বড়ো মেয়ে রিটা আসবে, কবে তাকে একনজর দেখবে। কারণ, তিনি যে মা! মায়েরা কী আর রাগ করে থাকতে পারে। 📜 একা বড় একা: 'বুঝলে বাছা,সময়কে আমি মূল্য দিইনি। আজ সময় আমার ওপর প্রতিশোধ নিয়ে তার মূল্য আদায় করে নিচ্ছে! একাকিত্বের জ্বালায় হাঁপিয়ে ওঠা আশি বয়সের জিমির গল্প। নিঃসঙ্গতাও যে একটা অসুখ এবং তার কোনো ওষুধ যে ডাক্তার দিতে পারে না। লেখকের প্রতিবেশী জিমি। একাত্মতার কারণে ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ তিনি যেন এক অন্য জগতের বাসিন্দা।এই রোগটি আস্তে আস্তে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। জিমির ক্ষেত্রে ঠিক এমনটি হয়েছে। জিমি আয়নার দাঁড়িয়ে নিজেকেই নিজে চিনতে পারছেন না। জীবনের অন্তীম সময়েও তার পাশে কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিলো না। তিনি ছিলেন একা, আর এখন মর্গেও পড়ে আছেন একা। 📜 তোমারে করি নমষ্কার: একজন মেয়ে চিকিৎসক ড.শাফিয়া একজন নিরুপায় স্ত্রীর উপকারের গল্প। বাস্তবতার নির্মম পরিহাসে এক বাংলাদেশী যুবতি আরবে আসলে তিনি এখানেও বাড়িওয়ালার শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হন। সে তার প্রতিবাদ করতে গেলে বাড়িওয়ালার ক্ষমতার দাপটে তার সাথে ঘটে যায় আরও উল্টো ঘটনা। মেন্টাল হসপিটাল হয় তার আবাসস্থল। লেখকের সহকর্মী ড. শাফিয়া যিনি তার সর্বস্ব দিয়ে সেই ভুক্তভোগী নারীর প্রাপ্য আদায়ে লড়ে যান। তার সাথে ঘটে যাওয়ার অন্যায়ের প্রতিবাদে এক মহিয়সী নারীর মতো লড়ে গিয়েছেন। যে লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি ঘটে তার চিকিৎসা পেশা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার মাধ্যমে। তাই তো লেখক সেই মহীয়সী নারীকে আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে গেলে, 'তোমাকে করি নমস্কার!' 📜 হাসি-কান্নার কথকতা: মানুষ রূপী কিছু পশু যারা সহজ-সরল মানুষগুলোকে সারা জীবন ধরে কাঁদিয়েছে তাদের কথা তুলে ধরেছে লেখক। ধর্ষক যখন শততম ধর্ষণ করার পর ঘটা করে সেঞ্চুরি উদযাপন করে, উল্লাসে-উচ্ছ্বাসে,সাফল্যের বিকৃত বিশ্বাসে হেসে লুটিয়ে পড়ে তখন সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে অন্তত একশত ছাত্রীর চাপাকান্না! যারা কুশলী রাজনীতিক কুটিল চক্রান্তে বাংলাদেশের শত শত গার্মেন্টসে ভাঙচুর আর তান্ডব চালিয়ে কিছু রাজনীতিবিদ,শ্রমিকনেতা হাসছেন বটে,কিন্তু এই ঘটনায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়া হাজারো শ্রমিক পেটের দায়ে নীরবে- নিভৃতে কেঁদে চলেছে! বিখ্যাত সব হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সামনে কি আমরা বিনা চিকিৎসার মানুষ মরতে দেখিনি? তাদের সামনে কোনো আশা নেই। অতএব, যন্ত্রণায় কাতরানো পাশাপাশি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন ওই 'ওপরওয়ালার' কাছে। এই গোষ্ঠী কান্না-ই ওইসব ক্লিনিকমালিক বা চিকিৎসকদের সারাটা মুখ ছড়ানো হাসির উৎস। 📚পাঠ-প্রতিক্রিয়া 📚 ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পড়তে গিয়ে কখনো আমার চোখ ভিজেছে,কখনো বিস্মিত চোখে থাকিয়ে ছিলাম বইয়ের গল্পের পাতায় পাতায়। গল্পগুলো কখনো শিহরণ দিচ্ছিল, আবার কিছু ঘটনা পড়তে গিয়ে শরীরটা ঘৃণায় ঘিনঘিন করছিলো। আবার কিছু ঘটনা পড়ে চোখ মুছতে মুছতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। 📓 পাঠ পর্যালোচনা 📓 আমি মনে করি,ধরণির পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আপনাকে কাঁদাবে আর এরসাথে সেই সমাজে ভেতরের জগতে আপনি ঢুকতে সক্ষম হবেন। প্রতিটি ঘটনা পড়ে আপনার চিন্তার জগতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে নতুন করে ভাবতে শুরু করবে। আমরা যাদের আধুনিক উন্নত সমাজ বলে জানি,তাদের সমাজের করুণ দশা পতনের সীমা ছাড়িয়ে আজ তারা অধঃপতনে কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, বইটির ঘটনাগুলো পড়ার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি তা জানতে পারবেন। আরো জানতে পারবেন মধ্যেপ্রাচ্য ও পশ্চিমের সমাজের সমাজ ব্যবস্থা,জীবন ব্যবস্থা,পারিবারিক ব্যবস্থা, নৈতিক মূল্যবোন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে। 📔 বইটি কেন পড়বেন 📔 আমাদের তথাকথিত সমাজের মানুষেরা যে পাশ্চাত্য সভ্যতার গুনোগান গায়, বইটি পড়লে তারা সেই পাশ্চাত্য সভ্যতার স্বরূপটা উপলব্ধি করতে পারবে। আশা করি বইটি পাঠকদের ভালো লাগবে, বইটি পড়ে জানতে পারবেন, মানুষের দুর্বোধ্য ও রহস্যময়ের ইতিহাস, মানুষের জীবন দর্শন। যারা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে উপলব্ধি হয়েছে, সেইসব ভুলগুলো যেনো আমরা না করি,সেই পথে যেনো না যায়। বইয়ের গল্পের নায়কদের যে করুণ পরিণতি হয়েছে, সেই করুণ পরিণতি না যায়, গল্পগুলোর সাথে সেই শিক্ষাও তুলে ধরেছে, 'ধরণির বইয়ে পাতায় পাতায়'। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সম্মানিত লেখক জিয়াউল হক ভাইসহ বইয়ের প্রত্যক্ষও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল ভাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। •বই: ধরণির পথে পথে। •লেখক: জিয়াউল হক। •প্রকাশনী: গার্ডিয়ানপাবলিকেশন্স। •ক্যাটাগরি: দর্শন বিষয়ক বই। •মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০টাকা। •পৃষ্ঠা: ২০৮। রেটিং: ৯/১০
Read More
Was this review helpful to you?
By kobir ,
31 Oct 2022
Verified Purchase
‘বলো, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, তোমাদের আগের লোকদের কী পরিণাম হয়েছিল! তাদের বেশির ভাগই ছিল মুশরিক।’ — সূরা রুম, আয়াত : ৪২ শুধু এই আয়াত ই নয়, পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের প্রতি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ভ্রমণ শুধু আনন্দ ই দেয় না, এটি একইসাথে ইবাদত ও। ভ্রমণের মাধ্যমে যেমন শিক্ষা লাভ করা যায় তেমনি অভিজ্ঞতাও অর্জন করা যায়। সৃষ্টি জগতের অপার রহস্য সম্পর্কে জানার একমাত্র মাধ্যম হলো ভ্রমণ। ধরনীর পথে পথে বইয়ের লেখক জিয়াউল হক পেশাগত কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। তার সেইসব ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে লেখা গল্পগুলো পুস্তক আকারে প্রকাশ করেছেন 'ধরনির পথে পথে' নামে। ◾বিষয়বস্তু:- মানুষের মন এক অপার রহস্যের নাম। এই রহস্যকে পড়তে পারলে বিশ্বজগতকে পড়া যায়। বিশ্ব জগতকে পড়তে হলে ধরনির পথে পথে পা বাড়াতে হয়। লেখক জিয়াউল হক তাই করেছেন। তবে তিনি মানুষের মনকে পড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, বরং মেন্টাল হসপিটালের ম্যানেজার হয়ে দীর্ঘসময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেছেন। পেশাগত কারণেই হসপিটালের রোগীদের সাথে কথোপকথন ও ভাব আদান প্রদানের মাধ্যমে তিনি জেনে নিয়েছেন তাদের জীবনীতিহাস, গোপন দুঃখ, কষ্ট ও সমস্যার কথা। তিনি এমন সব গল্প জেনেছেন যা কখনো কখনো রবীন্দ্রনাথ, শরৎ বা নজরুলের গল্পকে ও হার মানিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাগুলোই তিনি লিখতেন - সাপ্তাহিক 'যায় যায় দিন' পত্রিকায়। পাঠকের অনুরোধে সেই লেখাগুলো 'ধরনির পথে পথে' নাম নিয়ে গ্রন্থাকারে প্রকাশ হয়। ধরনীর পথে পথে বইয়ের গল্পগুলো মূলত বাস্তব গল্পের সংকলন। লেখক জিয়াউল হক নিজেই উল্লেখ করেছেন, এ গ্রন্থে স্থান পাওয়া লেখাগুলোর সব কটিই সত্য এবং বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া। স্মৃতির ডায়েরির পাতা হাতড়িয়ে লেখক লিখেছেন ছোট বড় মোট ২৮ টি ঘটনা। কিছু ঘটনা খুবই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। আবার কিছু ঘটনা শিহরণ জাগায় ! কিছু ঘটনায় আপনার মন পুলকিত হবে আবার কিছু ঘটনায় আপনি চোখের জলে ভাসবেন। লেখকের বর্ণনায় এসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ডেভিড পার্কার ও তার স্ত্রী ন্যান্সি পার্কারের কথা। আলজেইমারস ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত এই দম্পতির দুই ছেলে অগাধ সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের এতোটুকু ফুসরত মিলে না নার্সিংহোমে অবস্থান করা বাবা মায়ের খোঁজ নেওয়ার। এসেছে অর্ধ শতাব্দী ধরে মানসিক হাসপাতালে থাকা মুহাম্মদ তাওফিক নামের এক হতভাগ্য ফিলিস্তিনি বাবার করুণ পরিনতির কথা। যে নিজে পাগল না হয়ে ও পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে হাসপাতালের চিকিৎসার প্রভাবে একসময় পরিপূর্ণ পাগল হয়ে যান। সে মানুষটা কুয়েতের হাসপাতালে বসে আজ ও পত্রিকার পাতায় খুঁজে ফিরছে হারিয়ে যাওয়া স্ত্রী কন্যার ছবি! 'সখি ভালোবাসা কারে কয়' এবং 'এক এডওয়ার্ড হজকিন ও তার ভালোবাসা' গল্প দুটো যেন একই মেরুর দুটি দিক। মেরুটি হচ্ছে ভালোবাসা। একজন এক প্রতারক ছেলেকে ভালোবেসে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে সম্পূর্ণ পাগল হয়ে যায়! আর অন্যজন প্রেমিকের কাছ থেকে পালিয়ে তার বন্ধুর সাথে চলে যাওয়ার পরও — তাকে ভালবেসে মরার আগে সব সম্পত্তি উইল করে যায় ৭৪ বছর বয়সী হতভাগ্য সেই প্রেমিকটি। লেখকের বর্ণনায় পর্যায়ক্রমে এসেছে অভাগী রিটা হবসন আর তার কন্যা মিসেস ডেভিডসনের কথা। মায়ের মৃত্যু সংবাদের চেয়ে যার কাছে জ্যাকপট লটারির ড্র দেখা অনেক বেশি দামী। একটা কুকুর বিড়ালের অসুস্থতা তাদের কাছ গুরুত্ব পায় বৃদ্ধ বাবা মায়ের মৃত্যু সংবাদের চেয়ে বেশি! আসলেই তো! আমার মায়ের মূল্য আসলে কত!!! জেসি আর তার মেয়ে রিটার গল্প পড়ে ঘৃণায় মন বিষিয়ে উঠেছে। অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে ছিহঃ! মানুষ এতো খারাপ হয় কি করে! 'হাসি কান্নার কথকতা' গল্পে লেখক সেসব মানুষ রুপী পশুদের কথা বলেছেন যারা হাজার হাজার মানুষের চোখের পানির বিনিময়ে নিজেরা হাসি কিনে। বইয়ের সবগুলো গল্পই মোটামুটি এমন। মানুষের গোপন দুঃখ কষ্ট, পশ্চিমের আধুনিকতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বর্বরতা, বৃদ্ধ বয়সের নিঃসঙ্গতা, সন্তানদের অবহেলা এসব কিছু প্রতিটি ঘটনার উপজিব্য বিষয়। যা পড়লে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের চোখ দিয়ে জলের ধারা প্রবাহিত হতে বাধ্য। পাঠকের সুবিধার্থে নিচে আমি কয়েকটি ঘটনার শিরোনাম তুলে দিচ্ছি। - সিক্স সেভেনটি ফাইভ, ওয়েলবেক রোড - কালের নির্মমতার সাক্ষী - একজন মুহাম্মদ তাওফিক - সখি ভালবাসা কারে কয় - এক এডওয়ার্ড হজকিন ও তার ভালোবাসা - সে আমার ছোট বোন, বড়ো আদরের - আমার ও মায়ের মূল্য কত - একা, বড় একা - হাসি কান্নার কথকতা - খেলা ভাঙার খেলা - শোনো বাহে, জাতিসংঘ তারেই কহে - নো দাইসেলফ, ইত্যাদি। প্রতিটি গল্পের শিরোনাম আগ্রহ জাগায়, ভেতরে কি আছে তা পড়ে দেখবার। পড়া শেষে অবশ্য একটা শিক্ষামূলক বার্তা ও দিয়ে যায়। অনেকটা আমাদের ছোটোবেলায় পড়া ঈশপের নৈতিক গল্পের মতো। পার্থক্য শুধু একটাই। ঈশপের গল্পগুলো ছিলো কাল্পনিক আর ধরনীর পথে পথে বইয়ের গল্পগুলো বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখিত। ◾পাঠ প্রতিক্রিয়া:- আমরা অনেক বই পড়েই বলি— বইটি সুখপাঠ্য। সেগুলো বাস্তবিকই সুখপাঠ্য হয়। কিন্তু সত্যিকারের সুখপাঠ্য বই যে কি তা এই বইটি পড়ে বুঝতে পেরেছি। এতো সহজ সরল ভঙ্গিমায় উপস্থাপন যে পড়া শেষ না করে উঠতেই ইচ্ছে করছিলো না। বইটিতে নেই কোনো কঠিন কঠিন শব্দের ব্যবহার, নেই কোনো ঘটনার ঘনঘটা অথবা টান টান উত্তেজনা। অথচ গল্পগুলো একনাগাড়ে পড়ে যেতে ইচ্ছে করে। মৃত্যুর দুইঘন্টা পূর্বে লেখা নিহত সৈনিকের কবিতা — I wish the world would crash apart in flames, before this mother hears her son is dead. “আমি আশাকরি এই বিশ্বটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাক, তারপরও মায়ের কাছে তার ছেলের মৃত্যুসংবাদ না পৌঁছাক।” এই কবিতা পড়ে লেখকের মনে যে ঝড় উঠেছে, সেই একই ঝড় আমার হৃদয়ে ও উঠেছে। কষ্ট পেয়েছি কুয়েতের 'মুসতাশফা শুউন' পুনর্বাসন সেন্টার সম্পর্কে জেনে। এ যেন সমাজের ভেতরেই গড়ে উঠা আরেকটি সমাজ। চাম্পার দূর থেকে হাত নাড়িয়ে "আমার ছেলেকে বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হতে বলিও" কথাটা যেন পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে ট্রেসি নামে অবহেলায় জর্জরিত এক দুর্ভাগা মায়ের মেন্টাল হসপিটালে আত্নীয় স্বজনহীন একাকী মৃত্যুর খবর আমাদের চোখ দুটোকে জলে ভাসিয়ে দেয়। অথচ তার সন্তান মৃত্যুর খবর শুনে শুধু একটি 'শোকবার্তা' পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করে! এই পৃথিবী কত নিষ্ঠুর! বইটা পড়লে আসলে আবেগী না হয়ে থাকা যায়না। বইয়ের শুরুতে লেখক উল্লেখ করেছেন কিছু জায়গায় তিনি আবেগের আশ্রয় নিয়েছেন। বইয়ের ঘটনাগুলোই তো এমন। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ আবেগাপ্লুত হয়ে যাবার মতো। ◾পাঠ পর্যালোচনা:- বইয়ের নাম পড়ে কেউ কেউ এই বইকে ভ্রমণ কাহিনি ভাবতে পারেন। আবার কেউ কেউ এটিকে গল্প গ্রন্থও ভাবতে পারেন। তবে বইটি মূলত একটি স্মৃতিচারণ মূলক গ্রন্থ। এই বইয়ের প্রতিটি ঘটনা বাস্তব। লেখকের সমগ্র জীবনে প্রত্যক্ষ করা কিছু মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা এতে স্থান পেয়েছে। তাই পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে এটিকে গল্পগ্রন্থ মনে হতে পারে। বইটি পড়ে নতুন করে অনেক কিছুই জানলাম। যেমনঃ- 📌 আমরা বাঙালিরা-ই যে একমাত্র শ্বেতাঙ্গদের কদর করি, তা কিন্তু না। সম্ভবত শ্বেতাঙ্গ ছাড়া গোটা পৃথিবীর সব মানুষই তাদের কদর করে। লেখকের কুয়েত এয়ারপোর্টে চেক ইনের বর্ণনায় তা স্পষ্ট। সেখানে আমেরিকান, ইউরোপীয়ান যাত্রীরা প্রথম শ্রেণীর টিকেট না কেটেও প্রথম শ্রেণীর সম্মান পায়। অথচ বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের যাত্রীরা যথাযথ দামে টিকিট কেটেও প্রাপ্য সম্মান পায় না। 📌 বাংলাদেশ সহ প্রায় সব এশিয়ান কান্ট্রির আইডল হচ্ছে পশ্চিমা সভ্যতা। অর্থনীতিতে তাদের ঈর্ষনীয় সাফল্য, জ্ঞানে বিজ্ঞানে দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাওয়া, সুগঠিত সরকার ব্যবস্থা সবকিছুই আমাদেরকে টানে। তাইতো প্রতি বছর কানাডার বেগম পাড়ায় আমাদের দেশ থেকে পাচার হয় প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এমপি মন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সব ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের পড়াশোনা, চিকিৎসার জন্য পশ্চিমে পাড়ি জমান। কিন্তু যেই পশ্চিমা সভ্যতা এতো উন্নত, সেই পশ্চিমের মানুষেরাই একটা সময় পর নিঃসঙ্গতার মতো এক অনিরাময় যোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটায়। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে তারা গায়— Have you ever been lonely, have you ever been blue. কখনো কি তুমি হয়েছো একা? হয়েছো কি বেদনায় কখনো নীল? পাশ্চাত্যের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য আর আধুনিকতার আড়ালে এ এক অন্য জীবন! পারিবারিক বন্ধন, স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা আজ কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, পাশ্চাত্য সমাজের নিঃসঙ্গ মানুষগুলো কে দেখলে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। তো পাঠক, আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলে পড়ে ফেলতে পারেন লেখক জিয়াউল হক এর 'ধরনির পথে পথে' বইটি। আশাকরি বইটির সাথে সুন্দর সময় কাটবে। বই : ধরণির পথে পথে লেখক : জিয়াউল হক পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২০৮ মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০টাকা প্রকাশনা : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
Read More
Was this review helpful to you?
By musahid vai,
31 Oct 2022
Verified Purchase
বই: ধরণীর পথে পথে লেখক: Zia Ul Haque রিভিউ লেখিকা: ফারহানা আমিন লেখক জিয়াউল হক: শৈশব কৈশোর কেটেছে পাকিস্তানে। তার বাবা ছিলেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কর্মরত। তিনি মেন্টাল হেলথ্ নার্সিং, মেন্টাল হেলথ, সাইকিয়াট্রিক রিহাবিলিটেশন-এ শিক্ষাজীবন শেষ করে,মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বৈচিত্র্যময় ক্যরিয়ার শুরু করেন।পেশাগত দক্ষতায় তিনি অসাধারণ পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন,কর্মসূত্রে মহাদেশের অনেক দেশে ঘুরেছেন,স্হায়ী বাসিন্দা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীন কবিতা লেখা দিয়ে শুরু করেছিলেন,আজও অনবরত লিখে চলেছেন প্রকাশিত বইয়ের ত্রিশের কোঠা ছাড়িয়ে অনেক আগেই।ব্যক্তি হিসেবে তিনি সর্বভুক পাঠক,পড়ুয়া হিসেবে তিনি অনন্য তার স্বাক্ষর ইতিমধ্যেই দিয়েছেন তার লেখনীর মাধ্যমে, ইতিহাস,দর্শন,মুক্তিযুদ্ধ,মুসলিম রেনেসা,শিক্ষাব্যবস্হা, ইসলামী শাসনব্যবস্থা, তারুণ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ে।গার্ডিয়ান পাবলিকেশন থেকে লেখকের প্রকাশিত অন্যান্য বই হলো,'ইসলাম সভ্যতার শেষ ঠিকানা','ধরণির পথে প্রান্তে'(৩৬তম গ্রন্থ)।ধরণীর পথে প্রান্তে বইটা আলেচ্য বইটির ঘরানারই নানা দেশের মানুষের সাথে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতা,ভ্রমণকাহিনী গোছের।ফেসবুকে "একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ ও মুসলিম যুবমানস" সিরিজটিও দারুণ সাড়া ফেলে, যেটিও পরবর্তীতে বই আকারে সংকলিত হয়।তরুণদের নিয়ে আরেকটি বই 'তেইশ দ্যা টাইম টু রাইজ আপ'!বর্তমান তরুণসমাজের প্রতি একটা দায়িত্ববোধ থেকে এমন সুন্দর লেখনী উৎসারিত হয়েছে।সর্বশেষ "সিজদাহর বিজ্ঞান" বইটিও ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।বর্তমানে তিনি একাডেমী টুয়েন্টি ওয়ান (Academy 21) পরিচালনা করছেন, সেখানে শিশুর বিকাশ,মনস্তত্ত নিয়ে প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।এছাড়া তাঁর তত্ত্বাবধানে সাফীর একাডেমী (Safeer academy) চট্টগ্রামে স্কুল পরিচালনা করছে। বইয়ের বিষয়বস্তু : শিল্পবিল্পবের পর পাশ্চাত্যের উন্নয়ন,জীবনযাত্রা,সংস্কৃতির ঢেউ প্রাচ্যেও আঁচড়ে পরে।ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে তরুণ,যুবা,পৌঢ় সকলেই কেমন সভ্যতার চমকে উন্নতির মাপকাঠি ধরে নিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোকে।ব্রিটিশ শাসনের দু'শবছরের ইতিহাস এখনো ছেড়ে যায়নি আমাদের।মিডিয়ারও এক্ষেত্রে একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে যেন নদীর ওপারে সর্বসুখ এমনটাই। কিন্তু সভ্যতা, উন্নতির মাঝেও যে আরো একধাপ উন্নত সংস্কৃতি নীতিবোধের চর্চা প্রাচ্য বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে সেটা না-বলাই রয়ে যায় বারবার।পরিবার,পারিবারিক মূল্যবোধ,মা,বাবা,ভাইবোন, আত্মীয় স্বজনের উপর পারস্পারিক দায়িত্ববোধ অসাধারণ এক শক্তি।সভ্যতার ভীত টিকে থাকতে হলেও পরিবার,রিপ্রোডাক্টশন ব্যবস্হায় স্বচ্ছতা বিশাল একটা ফ্যাক্ট।লেখকের কর্মজীবনের বড়ো অংশ মানসিক হসপিটালে কেটেছে যার অভিজ্ঞতা থেকে উঠে এসেছে পাশ্চাত্যের বিলীয়মান পরিবার ব্যবস্হা,হতাশা,বিশ্বাসহীনতার গল্প!কতোটা কষ্টে একজন ব্যক্তি বোধ শক্তি হারিয়ে শিশুর মতো হয়ে যেতে পারে,নিজেকে বিস্মৃত করতে পারে!এই অসুস্থ মানুষগুলো হয়তো সুন্দর একটা জীবন পেতো পরিবারের মধ্যে থেকে।গল্পগুলো পরলে নিজেরা সন্তান হিসেবে আরেকটু দায়বোধের জন্ম নেবে।বাবা,মা আরেকটু ইতিবাচক হবেন সন্তানের কল্যাণকামীতার ব্যাপারে।বইটিতে লেখকে যুক্তরাজ্যে মানসিক হাসপাতালের ঘটনার স্মৃতিচারণের পাশাপাশি কুয়েতের কর্মরত জীবনের কিছু বিবরণ রয়েছে।সেখানেও অবাক করা ঘটনা,নানা অজানা তথ্যের সমাবেশ আমাদের সামনে অজানার দুয়ার খুলে দিয়েছে।মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শ্রমিকের কষ্ট,নারী শ্রমিকের অবর্ণনীয় দুঃভোগের কথা উঠে এসেছে,এশীয় নিম্ন-আয়ের দেশের মানুষের প্রতি অন্যের ধারনা। **নারী পাঠকের অবশ্য পাঠ্য বই এটি,কেনো..? সভ্যতার পালাবদলে আমরা কতো সংস্কৃতি-সভ্যতার বিকাশ হতে দেখি,আবার হারিয়েও যায় কালের গহ্বরে।মিডিয়ার আলোক ধাধার জগত যে সবসময় সঠিক তথ্য দেয় না,বরং বুজরুকি আর মিথ্যায় প্রলুব্ধ করে সেটা লেখকের সত্য অভিজ্ঞতার বয়ানে উঠে এসেছে। "নো দাইসেলফ" শিরোনামে অধ্যায়ের কিছু তথ্য হাইলাইট করছি,আমেরিকায় শতকরা ৩৩জন, অথাৎ তিনজন কুমারী মেয়ে মা হয়েছে,যাদের সন্তানের পিতৃত্ব পরিচয় কেউ নেয়নি!পরিত্যক্ত শিশুদের আবার ধনী দেশগুলো পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। নারী স্বাধীনতা,প্রগতির নামে পাশ্চাত্য তাদের এমন জীবন দিয়েছে যে,প্রতি দশজনের একজনের ব্রেস্টক্যানসারে আক্রান্ত। "সেক্সস্লেভ" এর নাম করে প্রতি বছর লাখ লাখ তরুনীদের পাচার করা হচ্ছে। ব্রিটেনের সভ্যতা নিয়ে এতো বড়াই করা হয়,সেই নাগরিকদের বিরাট অংশ শেষবয়সে বৃদ্ধাশ্রম আর সরকার চালিত সমাজকেন্দ্র এ কাটাতে হয়,পরিবারহীন হয়ে।কিংবা পরিবার পরিজন ফেলে আসা বোনদের মধ্যপ্রাচ্যের মাটিতে চরম ভোগান্তির গল্প! বইটির বাহ্যিক গঠন: বইটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য দারুণ লেগেছে প্রাসঙ্গিক কবিতা,উদ্ধৃতি, যা কখনো লেখকের ভাষ্যে কখনো উপজীব্য মানুষটির জীবনের গল্পে উঠে এসেছে দারুণ প্রানবন্তভাবে।বইটিতে ২৮টি অধ্যায়ে লেখকের অভিজ্ঞতার বয়ান ,সাথে লেখকের পক্ষ থেকে "আমার দুটি কথা," "এই দায় আমার,কেবল আমারই " শিরোনামে দুটি অধ্যায়।গল্পগুলো সারাংশ এখানে উল্লেখ করে পাঠকের পাঠের মজা নষ্ট করতে চাই না,ঘটনার ইতিবৃত্ত জাানিয়ে স্পয়লার নাই দিলাম।আমি চাই প্রতিটা পাঠক একান্তভাবে এ বইটি উপলব্ধি করুক।প্রতিটা অধ্যায় শেষে প্রশান্তির আবেশে স্নাত হোক।এক নজরে উল্লেখযোগ্য কিছু অধ্যায়ের শিরোনাম: ১.সখী,ভালোবাসা কারে কয় ২.আমার ও মায়ের মূল্য কতো ৩.আমি যে মা,আমি কি রাগ করে ৪.একা,বড়ো একা ৫.মাইন্ড ইয়োর বিজনেস ৬.টাইম : দ্যা অ্যাভেঞ্জার ৭.খেলার ভাঙার খেলা বুক রিভিউ—এ বই সিলেকশন এ বইটি প্রথম সারিতে রাখব।বইটির বা লেখকের সমালোচনা নয় অনুযোগ আছে সামান্য ,উপরন্তু লেখক "এই দায় আমার,কেবল আমারই শিরোনামে সবটুকু ভুল-ত্রুটি নিজ স্কন্ধে চাপিয়েছেন।আসলে বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা দুইশত তিন মাত্র, পাঠক হিসেবে আরো আকাঙ্ক্ষা কাজ করে।বইটির প্রতি গল্পই একেকটা অনুভূতি জাগ্রত করে,বিবোক নাড়িয়ে দেয়।নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।একবার পাঠ করেই এর আবেদন শেষ হয়ে যায় না,দুনিয়াবী ব্যস্ততা পুঁজিবাদী সমাজ আমাদের আবেগ,ভালোবাসা,বিশ্বাসের অনুভূতি প্রায় ভোতা করে ফেলে,সেই নিস্পন্দিত তনুমনে একটু ইতিবাচকতার আবাদ করতে এই বইটিই সকলের জন্য মাস্টার রিড একটা বই।লেখকের কাছে শুধু আবেদন এমন অসাধারণ বই আরো লিখে পাঠকদের ঋদ্ধ করবেন।গার্ডিয়ান পাবলিকেশনকে কৃতজ্ঞতা বুক রিভিউ আয়োজনের জন্য না হলে এমন সুন্দর বইটা পড়া হতো না(শীঘ্র স্যারের সকল বইগুলো পড়ে ফেলতে চাই,ইনশাআল্লাহ) আফসোস হচ্ছে বইটা ২০১৯ এ প্রকাশিত হলেও, ২০২২ এ পড়ছি। বইটি ক্যাটাগরি হিসেবে ফিকশন-দর্শন জনরার, কিন্তু বর্ননার পরিপাট্যে পাঠককে বিমুগ্ধ করে রীতিমত প্রায় গল্পের শেষে অশ্রুসজল হতে হয়।চিন্তাশীল পাঠকের জন্য বিস্তর খোরাক রয়েছে বইটিতে,লেখকের পর্যবেক্ষনশীল দৃষ্টির সাহায্যে নিজেদের উপলব্ধির দ্বার প্রসারিত হয়। ঝরা পাতার কান্না:পাঠক মহলে জনপ্রিয়তা,অভিনন্দন বার্তায় লেখকের উপচে পরা মেইল বক্সেই জানান দেয় বইটির সার্থকতা। বই আকার প্রকাশের সময় লেখক বইটির নাম প্রস্তাব করেছিলেন 'ঝরা পাতার কান্না', বইটি এক অর্থে জীবনের পাতা ঝরা মৈাসুমের কথা উঠে এসেছে,বিধবা মায়ের একাকিত্বের কান্নাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।বইটি যেমন সুখপাঠ্য আবার বর্ননার গভীরতায় ঘটনার ব্যাপ্তিতে বিষাদগ্রস্ত করে বইকি।সকলকে বইটি পড়ার জন্য আমন্ত্রণ,হ্যাপি রিডিং! বই:ধরণীর পথে পথে (মুসাফির চোখে দিগ-দিগন্তের জীবন দর্শন) লেখক: জিয়াউল হক প্রকাশকাল: ২০১৯ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২০৩ প্রকাশক:গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স বাধাই: (হার্ডকভার) ক্যাটাগরি :দর্শন
Read More
Was this review helpful to you?
By Mostafizar,
31 Oct 2022
Verified Purchase
লেখক পরিচিতি: স্যার জিয়াউল হক পুরোদস্তুর লেখক এবং একইসাথে মানসিক কনসালটেন্ট। মেন্টাল হেলথ, মেন্টাল হেলথ নার্সিং ও সাইক্রিয়াট্রি নিয়ে দেশের বাহিরে পড়াশোনা করেছেন। বাবার ও নিজের পেশাগত কারণে ঘুরে বেড়িয়েছেন নিজের দেশ ছাড়াও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সর্বশেষ তিনি ইংল্যান্ডের একটি বেসরকারি মানসিক হাসপাতালে ডেপুটি ম্যানেজার ও ক্লিনিক্যাল লিড হিসেবে কাজ করেছেন। তাই থিউরিটিক্যাল জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাস্তব গল্পগুলোকে লেখনীর মাধ্যমে প্রাণবন্ত ও সতেজ করে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন৷ এ সবেরই বাস্তব ফল হলো লেখকের এই গ্রন্থটি। বইটি এক কথায় : ইউরোপ ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মানুষের মনের বিচিত্র জগৎ, স্মৃতিচারণমূলক ও বাস্তবমুখী জীবন-দর্শন নিয়ে নির্মিত। প্রেক্ষাপট: সভ্যতা, আধুনিকতা, সংস্কৃতির জন্য এবং নারী স্বাধীনতার স্বর্গভূমি হিসেবে ইউরোপ ও পশ্চিমাদের জীবন প্রেক্ষাপটে গ্রন্থটি রচিত। সারমর্ম: শিল্পবিপ্লবের পর পাশ্চাত্য ও ইউরোপের পরিবার-কাঠামো তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। পরস্পরকে বেঁধে রাখার শক্তি তারা হারিয়েছে, যার ফলস্বরুপ মেয়ে তার ডিভোর্সী মায়ের স্বামী ( আপন বাবা না)-কে নিয়ে পালিয়ে যায় , বাবা তার সন্তানদের অবহেলায় মানসিক রোগী হয়। হঠাৎ একদিন আদালতের কল্যাণে সন্তান জানতে পারে, সে তার মায়ের সন্তান না; এমনকি তার জন্মদাতা বাবা কে-সে তা জানে না। পরিত্যক্ত সন্তানের মনে বাবার জন্য কত হাহাকার! বয়স আঠারো হবার পর মেয়েকে তার নিজ দায়িত্ব নিতে হয়; এমনকি মাথার ওপর বটগাছসদৃশ অভিভাকত্ব পর্যন্ত সে হারায়। বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর সন্তানের যাওয়ার সময় হয় না। কারণ, সে বস্তুবাদিতার এই জগৎ নিয়ে কঠিন ব্যস্ত। শেষ বয়সে বাবা-মায়ের শেষ ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। পৈশাচিক কারও সুখের পেছনে, বিলাসিতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে অনেক মানুষের দুঃখ, যন্ত্রণা আর জুলুম। কিছু গল্প আছে মুসলিম নামক হায়েনাদের নিয়ে, যারা এই পাশ্চাত্য সভ্যতাকে নিজেদের জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আসলে পরিবার হলো রাষ্ট্রের ফাউন্ডেশন, আর সেই পরিবারেই যদি এত অনৈতিকতা থাকে এবং মূল্যবোধহীন হয়ে পড়ে, তাহলে হতাশা আর বিশ্বাসহীনতা তাদের নিত্য সাথি হয়ে যায়। কিছু গল্পের রিভিউ: →সিক্স সেভেনটি ফাইভ ওয়েল বেকরোড : বিল এক মুহূর্তের জন্য কাছে পেয়ে বলে ফেলল- জিয়া! উইল ইউ ব্রিং মাই ড্যাড ব্যাক টু মি?" এই কথা শোনার পর আমার (লেখকের) মুখ থেকে কোনো কথা সরছে না। বিলের গাড়িটি দূর থেকে দূরে দৃষ্টির শেষ সীমানায় চলে যায় । আরেক দিন আমার (লেখকের) বাবার ছবি দেখে বিল বলল- জিয়া! তুমি কি জানো, আমার বাবা কোথায়?" সেদিন আমি বিরাট এক ধাক্কা খেলাম। হ্যাঁ, বিল তার বিধবা বৃদ্ধা নানি জিলিয়ানের সাথে থাকে। তারা লেখকের প্রতিবেশী। বিলের মা নিজেও জানে না বিলের বাবা কে। কী বীভৎস! শেষ অব্দি বিলের মা অন্য একজনের সাথে চলে যায় । এই গল্পে আপনি জানবেন একটা শিশুর একা, একা বেড়ে উঠার যন্ত্রণার কথা, বাবা কে না দেখার আকুতি। বিলের নানির ,বিলের মা ব্যতীত আরও দুটো সন্তান আছে তবুও কেনো তিনি একা থাকেন । হ্যাঁ পাঠক! এই সব প্রশ্নের উওর গল্পটি পড়ার পর জানতে পারবেন৷ আর লিখে আপনাদের গল্প পড়ার রুচি নষ্ট করতে চাই না। →ন্যান্সি ও লায়লার সঙ্গে এক প্রহর : মানসিক রোগী ডেবিট পার্কারের স্ত্রী হলো ন্যান্সি পার্কার। তাদের চার ছেলে মেয়ে। তারা যে যার মতো সিদ্ধান্ত নিল জীবন নিয়ে । পাড়া প্রতিবেশীর মতো তারা খবর শুনেছিল; বাবা-মা হিসেবে না। প্রত্যেকে বাবা মাকে ছেড়ে চলে গেল। বাবা-মা হিসেবে বেশি কিছু বলতে পারেনি সেদিন তারা। কারণ, বেশি কিছু বললে মেয়ে উলটো বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেই চাইল্ড এবিউজড-এর মামলা করে দেবে। পাঠক! এই হলো নারী স্বাধীনতার স্বর্গভূমি ইউরোপ। একপর্যায় ডেবিট পার্কার চার সন্তানের বিরহে মানসিক রোগী হয়ে যান। তবে পাঠক! এই গল্পটা কিন্তু পজিটিভ দিকে গিয়েছে। তাদের ছোট মেয়ে লোরা একসময় মুসলিম হয়ে লায়লা নাম গ্রহণ করে এবং অবশেষে পিতা-মাতার কাছে ফিরে আসে। ছোট মেয়ের মুসলিম হওয়ার গল্প, বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসের গল্প, মুসলিম হওয়ার পিছনে লেখকের পরোক্ষ অবদান ইত্যাদি গল্পটি পড়ে জানুন। →একজন মুহাম্মদ তাওফিক : আমি (লেখক) তাকে বললাম, তোমাকে মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে; নতুবা বাবার সাথে দেখা করতে পারবে না। সে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল- আমি ঠিক পারব। বাবাকে দেখার জন্য আমি আমার ফেরেস্তাসম স্বামীকে তালাক দিয়েছি। বাবাকে দেখার জন্য পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট এক জর্ডানিকে বিয়ে করে আট বছর সংসার করেছি শুধু একটি পাসপোর্টের জন্য। পাসপোর্ট পাওয়ার পর ভিসা পাইনি রাজনৈতিক কারণে। এরপর আরও ১০ বছর অপেক্ষা করেছি ভিসার জন্য, এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত কাটা কবুতরের মতো ছটপট করেছি। জানো? ফিলিস্তিনি না হলে আমাদের জীবনটা এমন হতো না! পাঠক! কল্পনা করুন তো, বাবাকে দেখার জন্য একজন মেয়ের ত্যাগ! জানেন, তার বাবাও কিন্তু হাসপাতালের করিডোরে, পত্রিকার পাতায় এভাবেই প্রাণপ্রিয় স্ত্রী ও কন্যাকে খুঁজে ছিলেন প্রতিনিয়ত। বাবার গল্পটি নাহয় বইটি পড়ে জানুন। বাবার সাথে বিচ্ছেদের গল্প, বাবার মানসিক রোগি হওয়ার পিছনের গল্প, ইজরাইলিদের হামলার কাহিনি বইটি পড়লে জানতে পারবেন৷ যে গল্পটি বেশি মনে ধরেছে : তোমাকে করি নমস্কার। কারন এখানে একজন মিশরী মুসলিম মহিলা ডাঃ একজন বাংলাদেশি ধর্ষিতা তরুণীর জন্য বিদেশের মাটিতে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েছন, ত্যাগ দিয়েছেন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন, চাকুরী পর্যন্ত ছেড়েছেন। বাংলেদেশের তরুণী ধর্ষিতা হয়েছিল গৃহকর্তীর স্বামী, ছেলে, শশুরের কাছে। যে গল্পগুলো আমার বেশি ভালো লেগেছে- →খোকন শোনা বলি শোনো →সে আমার ছোট বোন বড় আদরের →আমার ও মায়ের মূল্য কত। →টাইম : দা অ্যাভেঞ্জার →শোনো বাহে জাতিসংঘ তারেই কহে →গুডলাক পলিন। →মাইন্ড ইউর বিজনেস। বাস্থবজীবন নিয়ে রচিত ২৮টি গল্প আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে। তবে পাঠকের রুচিভেদে কিছু গল্পের ক্ষেত্রে ভালোলাগার তারতম্য হতেই পারে। আমার অন্তরে বেশি দাগ কেটেছে যেগুলো, আমি সেগুলোর লিস্ট দিলাম। বইটি কেন পড়বেন : →দুঃখ, ব্যথা ও বেদনার যে কত শাখা-প্রশাখা এবং তার যে কত গভীরতা থাকে, তা জানতে হলে ধরণির পথে পথে অবশ্য পাঠ্য। →নারী স্বাধীনতার স্বর্গভূমি ইউরোপে নারীকে তার অধিকারসহ কতটা মূল্যায়ন করা হয়, কতটুকু ভালোবাসে- তা জানতে হলেও অন্তত বইটি পড়বেন। →পশ্চিমা ও ইউরোপের পারিবারিক ও সামাজিক কালচারকে পারিবারিকভাবে জানার জন্যও বইটি পড়তে পারেন। বইটি কাদের জন্য : যে কোনো রিলিজিয়ন ও মতের মানুষ পড়তে পারবেন, তবে স্পেশালি আমি মুসলিম উইমেনদের সাজেস্ট করব- যারা পশ্চিমা কালচারের আলোকে নিজেদের জীবনধারণ করতে চায়। রিভিউ লেখার উদ্দেশ্য : অন্যের জীবন দেখে নিজের জীবনবোধকে জাগ্রত করে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য। ভাষা : সহজ, সরল, প্রাঞ্জল। সমালোচনা : → ১০৭ পেইজে someone বানানটি ভুল। → সাহিত্যিক মান আরও বৃদ্ধি করা যেত। →একটি বইয়ের দায় শুধু লেখকের না; প্রকাশনীরও। উপসংহার : পরিবার-পরিজনের সাথে আত্মার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যৌবনে আত্মার সাথে আত্মীয় না করলে, এড়িয়ে গেলে বৃদ্ধ বয়সে তার খেসারত দিতে হবে। সম্পর্কে মধ্যে দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতাবোধ তৈরি করা তাই সময়ের দাবি।
Read More
Was this review helpful to you?
By Sahadhot,
31 Oct 2022
Verified Purchase
বইয়ের নাম: ধরণির পথে পথে। লেখকের নাম: জিয়াউল হক। প্রকাশনী: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স মুদ্রিত মূল্য: হার্ডকভার ৩৫০ টাকা, পেপারব্যাক ৩২৫ টাকা। ধরণির পথে পথে নামটা দেখলেই মনে হয় বইটি পড়লে জীবনে পথ চলতে গিয়ে খুঁজে পাওয়া কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে। বাস্তবেও হয়েছে তাই। আলোচ্য বইয়ের লেখক "জিয়াউল হক" তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটিয়েছেন দেশের বাইরে। ইংল্যান্ডের একটি মেন্টাল হসপিটালে চাকরি করার সুবাধে খুব কাছ থেকে দেখেছেন জীবনের শেষ বেলায় পৌঁছে যাওয়া, নিঃসঙ্গতায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষদের নিদারুণ কষ্ট! তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে লেখক খুঁজে বের করেছেন তাদের অতীত। লেখকের সেইসব পরিচিত বিভিন্ন মানুষ নিয়ে ২৮টি হেডলাইনের মাধ্যমে তিনি লিখেছেন জীবনের কথা, মানুষের কথা। প্রত্যেকটি গল্পে দিতে চেয়েছেন শিক্ষনীয় কিছু বার্তা। লেখকের ২৮টি বাস্তব গল্প থেকে আমি কয়েকটি গল্পের মূলভাব তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ** সিক্স সেভেনটি ফাইভ, ওয়েলবেক রোড** ইংল্যান্ডে লেখকের পাশের বাসায় নানীর সাথে বাস করা পিতৃ পরিচয়হীন এক শিশুর গল্প। তার মা পর্যন্ত জানেনা ছেলেটির বাবা কে! সেই ছোট্ট শিশুটি যখন লেখককে প্রশ্ন করে, "জিয়া, উইল ইউ ব্রিং মাই ড্যাড ব্যাক টু মি?" তখন স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে কি? ** কালের নির্মমতার সাক্ষী** মি. ডেভিস নামের আশি বছর বয়স্ক একজন মানুষের গল্প। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর এই সদস্যের আক্ষেপ, "উপরের মহল যুদ্ধ লাগিয়ে চুপ করে সুখনিদ্রায় থাকে আর মরে যায় সাধারণ মানুষ"। উনার সাথে জ্ঞানগর্ভ আলোচনার চমৎকার কথোপকথন উল্লেখ হয়েছে বইতে। ** ন্যান্সি ও লায়লার সঙ্গে এক প্রহর ** সন্তান থেকেও না থাকার মতো এক দম্পতির গল্প। অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে মা বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ডে স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে সঠিক বুঝ পেয়ে মা-বাবার কাছে ফিরে আসার স্বর্গীয় অনুভূতি পাওয়া যাবে এটা পড়লে। ** খোকন সোনা বলি শোনো** কুয়েতের একটি কর্মজীবী মহিলা জারজ সন্তান জন্ম দেওয়ায় সে সন্তানকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মা'কে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ায় মায়ের আকুতি লেখকের কাছে, " আমার ছেলেটাকে মানুষ হতে বলো"। কি হৃদয়বিদারক! ** একজন মুহাম্মদ তাওফিক ** ফিলিস্তিনি এক নাগরিকের সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানসিক হাসপাতালের বাসিন্দা হয়ে যাওয়ার মর্মান্তিক কাহিনী! যে মানুষটা কুয়েতের হাসপাতালে বসে পত্রিকার পাতায় আজো খুঁজে ফিরে তার স্ত্রী কন্যার ছবি! ** ট্রেসি ** অবহেলায় জর্জরিত একজন মায়ের গল্প। মৃত্যুর খবর শুনেও যার সন্তান একটি "শোকবার্তা" পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করে! ** সখি ভালবাসা কারে কয় ** থাইল্যান্ডের একটা মেয়ের কথা, যে মেয়েটি বাংলাদেশী এক প্রতারক ছেলের প্রেমে পড়ে সম্পূর্ণ পাগল হয়ে যায়! ** এক এডওয়ার্ড হজকিন ও তার ভালোবাসা ** প্রেমিকা তার কাছ থেকে পালিয়ে বন্ধুর কাছে চলে যাওয়ার পরও তাকে ভালবেসে গেছেন আজন্ম! মরার আগে তার সব সম্পত্তিও উইল করে গেছেন সেই বিশ্বাসঘাতক প্রেমিকার নামে! ** সে আমার ছোট বোন, বড়ো আদরের ** দীর্ঘদিন সংসার করে তেরো এবং ষোলো বছর বয়সী দুই সন্তানকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় স্ত্রী জানিয়ে গেলেন ষোলো বছরের সন্তানটি তার বর্তমান স্বামীর নয়! কি অবস্থা হতে পারে তখন ভাই-বোন হয়ে বেড়ে উঠা কিশোর কিশোরী দু'টির? ** আমার ও মায়ের মূল্য কত ** জ্যাকপট লটারির ড্র হবে বলে মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনেও মা'কে না দেখে, মায়ের লাশের কোন ব্যবস্থা না করে সন্তান কিভাবে চলে যেতে পারে তার চিত্র! এই বইয়ের প্রতিটি গল্পই এমন! মানবতা, স্নেহ, মায়া, মমতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে পশ্চিমা দেশগুলোতে তা সহজেই বুঝা যাবে এই বইটি পাঠ করার মাধ্যমে।
Read More
Was this review helpful to you?
By Nasrin Nahar,
31 Oct 2022
Verified Purchase
বই: ধরণির পথে পথে লেখক: জিয়াউল হক প্রকাশনী: গার্ডিয়ান পাবলিকেশনস প্রকাশকাল: নভেম্বর ২০১৯ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২০৮ মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০ টাকা গত দুইদিনে "ধরণির পথে পথে" বইটি পড়ে শেষ করেছি। এটি একটি গল্পের বই। তবে এটি কোন লেখকের মন-মগজে জন্ম নেয়া নিছক কোন গল্পের বই নয়। এই গল্পগুলো মানুষের যাপিত জীবন থেকে জন্ম নেয়া গল্প। দিক-দিগন্তে চলতে ফিরতে লেখকের মুসাফির চোখ এই গল্পগুলো কুড়িয়ে পেয়েছে। সেই কুড়িয়ে পাওয়া গল্পগুলো লেখকের কলমের জাদুতে এতটাই চমৎকার হয়ে উঠেছে যে আপনিও গল্পের চরিত্রগুলোর হাসি-কান্নার সঙ্গী হয়ে যাবেন। জীবনের তাগিদে লেখক ছুটে বেড়িয়েছেন দেশ থেকে দেশে। এই ছুটে চলার সময় লেখক যে মানুষগুলোর সাথে মিশেছেন এই গল্পগুলো তাদেরই জীবনের গল্প। অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকায় গল্পগুলো প্রকাশিত হলে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। অনেক পাঠক-পাঠিকা গল্পগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করে। সেই গল্পগুলো থেকে ২৮ টি গল্প এই বইয়ে ঠাঁই পেয়েছে। বড় অদ্ভুত ও বৈচিত্রে ভরা এই গল্পগুলো। একটি গল্পে পাঠক পরিচিত হবেন একজন অদ্ভুত মায়ের সঙ্গে। যে মা জানে না তার গর্ভে ধারণ করা সন্তানের পিতা কে। তারপর সেই মা ছোট্ট শিশু সন্তানকে ফেলে চলে যায় আরেক বয়ফ্রেন্ডের সাথে। আবার আরেকটি গল্পে পাঠক দেখা পাবেন আরেকজন মায়ের, যে মায়ের সন্তান তার সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে ফেলে চলে গেছেন কিন্তু তবুও সেই মা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সেই সন্তানের ফিরে আসার প্রতিক্ষায় থেকেছেন। অন্য আরেকটি গল্পে উঠে আসে একজন প্রেমিকের অকৃত্রিম ভালবাসার উপাখ্যান। আট বছর একসাথে ঘর করার পরেও তার প্রেমিকা অন্য পুরুষের হাত ধরে তাকে ছেড়ে চলে যায়। তবুও ঐ প্রেমিক তার প্রেমিকাকে নিরবে ভালবেসে যায়। শুধু তাই নয় মৃত্যুর আগে তার সমূদয় সম্পত্তি প্রেমিকার নামে লিখে দিয়ে যায়। কয়েকটি গল্পে পাঠক দেখতে পাবে ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে উদ্ভাস্তু হয়ে আশেপাশের আরব দেশে ছড়িয়ে পড়া ফিলিস্তিনিদের নিদারুণ কষ্টের চিত্র। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারে একটু স্বচ্ছলতা আনার জন্য স্বামী সন্তান ছেড়ে দূর পরবাসে এসে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়া এক বাংলাদেশী নারীর কথা উঠে এসেছে একটি গল্পে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই নির্যাতিতা নারীর সাহায্যে এগিয়ে আসা এক সাহসী আরব মহিয়সীর দেখা পাবো এই গল্পে। এই বইয়ের প্রতিটি গল্পই এইরকম চমকপ্রদ। প্রতিটি গল্পের প্রতিটি চরিত্রের হাসির আড়ালে লুকানো কান্না অথবা কান্নার আড়ালে লুকানো হাসির অজানা গল্পগুলো আপনার জন্য দারুণ শিক্ষনীয় হয়ে উঠতে পারে। খুলে দিতে পারে আপনার হৃদয়ের জানালা। খুলে দিতে পারে আপনার বোধের দুয়ার। তাই আর দেরী না করে বইটি সংগ্রহ করে ঝটপট পড়ে ফেলুন।
Read More
Was this review helpful to you?
By Md Jakaria Hossain,
13 Oct 2021
Verified Purchase
পাঠ-প্রতিক্রিয়া এসব সংস্কৃতি বাঙ্গালী মুসলিমের জীবনে বেমানান প্রতিটি গল্পের শুরু হয় স্বর্গীয় সুখময়তায় আর শেষ হয় নরকের বিভিষিকায়। জুলিয়ান আর বিলের ঘটনা পাঠ শেষে আমার মনে হয়েছিলো, জীবনে যতদিন বেঁচে থাকি কারো জন্মদিন কিংবা ম্যারেজ এনিভার্সারিতে আর উইস করবো না! ট্রেসির ঘটনায় মার্টিনের ই-মেইলের পর পশ্চিমের স্বর্গ সুখ আমার চেতন প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এতো আমার সংস্কৃতি না! বাঙ্গালী মুসলিমের পরিবারিক মূল্যবোধ-দায়দায়িত্ব এতো ঠুনকো নয়। প্রতিটি গল্প পড়ে শেষ করে আবার পৃষ্ঠা উল্টে গল্পের শুরুতে এসে শিরোনামটি পড়ি। লেখকের প্রতি খুব জিদ আসে! ডেভিস কিংবা তওফিকের শেষ পরিণতি কী? চম্পার ছেলেটিকে লেখক কি খুঁজে পেয়েছিলেন? ন্যান্সি এবং নিকোলাকে নিয়ে আরো কিছু জানবার ছিলো। ঝড়-ঝাপটার পর রর্বাট, পিটার ও আ্যনিরা পারিবারিক কাঠামোটা কি ধরে রেখেছিলেন? লেখক জিয়াউল হক ‘ধরণির পথে পথে’ বইটিতে ভেঙ্গে পড়া পরিবার ব্যবস্থার আটাশটি বাস্তব অভিজ্ঞতার চিত্র একেঁছেন। পাঠক কখনোও কখনোও ঢুকরে কেঁদে উঠতে পারেন বিষাদে-বিমর্ষে। পশ্চিমের জীবন-দর্শনের ব্যর্থতা চিত্র-ই যেনো পুরো বই জুড়ে। লেখকের মুসাফির জীবনে একেকটি বাস্তব ঘটনা কল্প-কাহিনীকে হার মানায়! সভ্যতার চাকচিক্যে লুকায়িত ব্যাথার অনুরণ তিনি কেবল পাঠকের জন্য শব্দ-বাক্যে রূপান্তর করেছেন। লেখক সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো দিবেন না। কারণ এটা তৃতীয় নয়নের কাজ। আর তিনি কেবল পৃথিবীকে দেখবার জন্য তৃতীয় নয়ন উম্মোচন এবং সে দৃষ্টিতে দেখাবার চেষ্ঠা করেছেন। উন্নত জীবন নিয়ে তরুণদের অনেক চিন্তা। পশ্চিমের চাকচিক্য আর বিলাসিতা তাদের ধ্যান-জ্ঞানে প্রভাব ফেলে। মুসলিম সমাজে বসবাস করে নিজেদের সংস্কৃতি-সুন্নাহ বুঝার সামর্থ অনেক তরুণের হয় না। এ বইটি একজন মুসলিমকে জীবন-দর্শনে, পরিবার-পারিবারিক কাঠামোতে, সংসার-সম্ভ্রমে অন্যান্য সংস্কৃতি থেকে নিজেদের সুন্নাহর সুনির্দিষ্ট তফাৎ চিহ্নিত করে দিবে। তরুণদের এ বইটির ব্যাপক পাঠ প্রত্যাশা করি।
Muhammad Tazammol Hoque স্যার Associate Professor at Jagannath University - জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
Read More
Was this review helpful to you?
By asar alo,
31 Oct 2022
Verified Purchase
বিষয় বস্তু:__ঘুরতে কেই না ভালোবাসে।আনাচে-কানচে আছে কত শত গল্প ,কাহিনী ও রহস্য।আর এসব রহস্য ভেদ করার ক্ষমতা মানুষের আর কতটুকুই বা আছে ।তেমনি মানুষের হাসি -কান্না ,দুঃখ-আনন্দের ভিতরও লুকিয়ে আছে হাজারও রহস্যের বেড়াজাল।যা ভেদ করা অনেকের কাছেই দুর্ভেদ্য ব্যাপার ।মানুষের অনুভূতিকে অভিজ্ঞতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় বটে তবে তার পিছনের আসল রহস্যটা কেউ কি অনুমান করে বলতে পারব?কয়জনই বা পারবে মনের অন্তরালে,গহীনে রহস্যে উন্মোচন করতে।হয়তোবা গুটি কতেক লোক! মর্মকথা:_আর "ধরণির পথে পথে" বইয়ের লেখক এমনই সব রহস্যের উন্মোচন করেছেন ।মানবজীবন যে কতটা রহস্যের তা তিনি তুলে ধরেছেন ২০৩ পৃষ্ঠার এ ছোট্ট বইটিতে।তিনি যেসব বাস্তব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন সেসবের প্রমাণচিত্র ওরোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তিনি।একজন মানুষ পৃথিবীতে কতটা একা হতে পারে তা এই বইটি না পড়লে হয়তোবা কখ্খোনো জানতেই পারতাম না। ইতিকথা:__বাবা-মা হারা সন্তানেরা কতটা ধৈর্য্য ধরে ছুটতে পারে দূর দূরান্তে সেসব চিত্র ফুটে উঠেছে এ বইয়ে।সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো পশ্চিমা সমাজের একে অন্যের প্রতি বৈপারীত্ব ও মা -বাবার প্রতি অবহেলার চিত্র তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতায় হাস্যরসাত্মকভাবে বর্ণনা করেছেন।বইটি পড়ে পাঠক যেমন কাদঁতে বাধ্য হবেন তেমনি পৃথিবীটাকে আবিষ্কার করতে পারবেন খানিকটা ভিন্নভাবে। বাস্তব ও পাঠক অভিজ্ঞতা:__পড়াশুনা থাকায় বইটি বেশ সময় নিয়ে ও ধীরে ধীরে পড়তে হয়েছে।বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় পাবেন লেখকের জ্ঞানের ছাপ।বইটি পড়ে আমি সত্যিই মুগ্ধ ও বিমোহিত।চাইলে আপনারাও পড়তে পারেন।আশা করি ভালোলাগবে।ইন শা আল্লাহ।
Read More
Was this review helpful to you?
By Md Eyasin Arafat,
28 Apr 2022
Verified Purchase
বই: ধরণির পথে পথে লেখক: জিয়াউল হক ধরন: ছোট গল্প প্রকাশণি: গার্ডিয়ান পাবলিকেসন্স মূল্য: ৩৫০ (মুদ্রিত)
কোন নতুন স্থানে বেরাতে যাওয়ার পর ফিরে এসে সবার সাথে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা শেয়ারে ব্যাস্ত হয়ে পরি আমরা সবাই-ই।
তেমনি পৃথিবীতে আমাদের বসবাসও একটি সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের সাথে তুলানা করা হয়। লেখক সেই দৃষ্টিকোণ হতেই তার দেশ বিদেশের বর্ণাঢ্যময় জিবনের কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা করেছেন। হ্যা গল্প! জিবনের গল্প। বাস্তব গল্প। কাল্পনিক নয়।
কিন্তু গল্পগুলো আপনাকে হাসাবে, আবার কল্পনার রাজ্যে নিয়ে আঁখিজলে চক্ষু ঝাপসা করাবে। বইটিতে মোট ২৮ টি ছোট গল্প আছে। প্রত্যেকটা গল্পই একেকটা মাস্টার পিচ।
লেখক জিয়াউল হক পেশায় একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (Psychiatrists)। জিবনের দুই-তৃতীয়াংশ দেশের বাইরে কাটিয়েছেন। এখন ইংলান্ডে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে। গল্পগুলো একসময় কলাম আকারে ধারাবাহিক ভাবে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল সাপ্তাহিক 'যায়যায় দিন ' পত্রিকায়। ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পাওয়ায় বই আকারে সংকলন করা হয়েছে।
পৃথিবীর কত প্রান্তে কত রকমের মানুষ! প্রত্যেকেই আলাদা। কত বিচিত্র তাদের আচার আচরন!
পিতা মাতা সন্তান ও পরিবারের গল্পগুলো অনেক হৃদয়স্পর্শী ছিল। উঠে এসেছে প্রেম ভালবাসা, পরিবার সংসার, প্রবাসী শ্রমিক, বার্ধক্য আরো কত কি।
প্রত্যেকটা গল্পই স্বতন্ত্র মন্তব্যের দাবীদার। তবে প্রত্যেকটি গল্পই আপনাকে আরো মানবিক করবে, পরিচয় করিয়ে দিবে বিচিত্র সাংস্কৃতির বিচিত্র মানুষের সাথে।
রেটিং: ৯/১০
Read More
Was this review helpful to you?
By kalimulla,
31 Oct 2022
Verified Purchase
ধরণির পথে পথে মানুষের মনের চেয়ে বেশি রহস্যময় আর কিছু কি এই পৃথিবীতে আছে? কোথাও তাজমহলের শুভ্রতাকেও ম্লান করে মন, আবার কোথাও হিমালয়কেও হার মানায় মনের উচ্চতা। কোথাও বা আবার তা মিশরের মমির অজানা রহস্যকেও ছাড়িয়ে যায়। মানুষের মন আটলান্টিকের গভীলতাকেও লজ্জা দেয়। প্রতিটি মানুষেরই একটা করে মন আছে, আছে একটা করে বিচিত্র জগৎ। আমরা কয়টা মন চিনি, কজনকে জানি? যাদের জানি বলে মনে করি, আসলেই কি তাদের জানি? মানুষের মনের গভীরে নামতে পারা, তার গভীরতা মাপতে পারা, সেই গভীরতার চিত্র-বিচিত্র রূপ দেখতে পাওয়া কি এতটাই সহজ? না, সহজ নয়। কারণ, মানুষ বড়োই দুর্বোধ্য আর রহস্যময় এক সত্তা! মন যা দেখায়, তার পেছনেও দেখার অনেক কিছু থাকে। যা জানায়, তার পেছনেও অনেক কিছু থেকে যায়। মন তো কখনোই নিজেকে পুরোটা মেলে ধরে না। কারণ, নিজের পৃথিবীর এ সিংহাসনে মন নিজেই রাজা। এখানে আর কাউকেই সে ভাগ বসাতে দিতে রাজি নয়। এ জন্যই সে একা, বড়ো একা। কী বৈচিত্র্যময় বৈপিরীত্য দেখুন তো! এই বৈচিত্র্যময় বৈপিরীত্যই মানুষকে রহস্যময় করেছে। এখানেই তারা আলাদা স্বকীয়তা। এই স্বকীয়তাই সে আগলে রাখে পরম যতনে। আর আগলে রাখতে গিয়ে সে নীরবে হাসে, গোপনে কাঁদে। আপনার আশেপাশে যারা আছেন, চেয়ে দেখুন- ভিন্ন কিছু দেখতে পাচ্ছেন? হাসির পেছনে লুকোনো কান্না কিংবা কান্নার পেছনে লুকোনো হাসি? এ এক অপার রহস্যই বটে। এই রহস্যটা ধরতে পারাই হলো বিশ্বকে পড়তে পারা। আসুন, বিশ্বটাকে পড়ে দেখি…
Read More
Was this review helpful to you?
By Ayesha Khanam Tinu ,
24 Oct 2022
Verified Purchase
ঘুরতে কেই না ভালোবাসে।আনাচে-কানচে আছে কত শত গল্প ,কাহিনী ও রহস্য।আর এসব রহস্য ভেদ করার ক্ষমতা মানুষের আর কতটুকুই বা আছে ।তেমনি মানুষের হাসি -কান্না ,দুঃখ-আনন্দের ভিতরও লুকিয়ে আছে হাজারও রহস্যের বেড়াজাল।যা ভেদ করা অনেকের কাছেই দুর্ভেদ্য ব্যাপার ।মানুষের অনুভূতিকে অভিজ্ঞতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় বটে তবে তার পিছনের আসল রহস্যটা কেউ কি অনুমান করে বলতে পারব?কয়জনই বা পারবে মনের অন্তরালে,গহীনে রহস্যে উন্মোচন করতে।হয়তোবা গুটি কতেক লোক! মর্মকথা:_আর "ধরণির পথে পথে" বইয়ের লেখক এমনই সব রহস্যের উন্মোচন করেছেন ।মানবজীবন যে কতটা রহস্যের তা তিনি তুলে ধরেছেন ২০৩ পৃষ্ঠার এ ছোট্ট বইটিতে।তিনি যেসব বাস্তব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন সেসবের প্রমাণচিত্র ওরোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তিনি।একজন মানুষ পৃথিবীতে কতটা একা হতে পারে তা এই বইটি না পড়লে হয়তোবা কখ্খোনো জানতেই পারতাম না। ইতিকথা:__বাবা-মা হারা সন্তানেরা কতটা ধৈর্য্য ধরে ছুটতে পারে দূর দূরান্তে সেসব চিত্র ফুটে উঠেছে এ বইয়ে।সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো পশ্চিমা সমাজের একে অন্যের প্রতি বৈপারীত্ব ও মা -বাবার প্রতি অবহেলার চিত্র তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতায় হাস্যরসাত্মকভাবে বর্ণনা করেছেন।বইটি পড়ে পাঠক যেমন কাদঁতে বাধ্য হবেন তেমনি পৃথিবীটাকে আবিষ্কার করতে পারবেন খানিকটা ভিন্নভাবে।
Read More
Was this review helpful to you?
By Marzia Tabassum,
29 Oct 2022
Verified Purchase
লেখক জিয়াউল হক ‘ধরণির পথে পথে’ বইটিতে ভেঙ্গে পড়া পরিবার ব্যবস্থার আটাশটি বাস্তব অভিজ্ঞতার চিত্র একেঁছেন। পাঠক কখনোও কখনোও ঢুকরে কেঁদে উঠতে পারেন বিষাদে-বিমর্ষে। পশ্চিমের জীবন-দর্শনের ব্যর্থতা চিত্র-ই যেনো পুরো বই জুড়ে। লেখকের মুসাফির জীবনে একেকটি বাস্তব ঘটনা কল্প-কাহিনীকে হার মানায়! সভ্যতার চাকচিক্যে লুকায়িত ব্যাথার অনুরণ তিনি কেবল পাঠকের জন্য শব্দ-বাক্যে রূপান্তর করেছেন। লেখক সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো দিবেন না। কারণ এটা তৃতীয় নয়নের কাজ। আর তিনি কেবল পৃথিবীকে দেখবার জন্য তৃতীয় নয়ন উম্মোচন এবং সে দৃষ্টিতে দেখাবার চেষ্ঠা করেছেন। উন্নত জীবন নিয়ে তরুণদের অনেক চিন্তা। পশ্চিমের চাকচিক্য আর বিলাসিতা তাদের ধ্যান-জ্ঞানে প্রভাব ফেলে। মুসলিম সমাজে বসবাস করে নিজেদের সংস্কৃতি-সুন্নাহ বুঝার সামর্থ অনেক তরুণের হয় না। এ বইটি একজন মুসলিমকে জীবন-দর্শনে, পরিবার-পারিবারিক কাঠামোতে, সংসার-সম্ভ্রমে অন্যান্য সংস্কৃতি থেকে নিজেদের সুন্নাহর সুনির্দিষ্ট তফাৎ চিহ্নিত করে দিবে। তরুণদের এ বইটির ব্যাপক পাঠ প্রত্যাশা করি।