ঝুম্পা লাহিড়ী বলেছেন, 'That's the thing about books.They let you travel without moving your feet.' যার মোদ্দা কথা আপনাকে বই পা সরানো ব্যতীত ঘুড়িয়ে আনতে সক্ষম। লেখকের চাকরিজীবনের প্রথমদিকে ১৯৭০ সালের কাছাকাছি থেকে দেখা হয়েছিল তৎকালীন ইরানের মহাপ্রতাপশালী শাহ, রেজা শাহ পাহলভী- যিনি উপহার হিসাবে পারস্য (ইরান) এর সভ্যতার উপরে এক চিত্র সম্বলিত পুস্তিকা দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই তিনি মনে মনে ইরান ভ্রমণে যাবার এক সুপ্ত আশা পোষণ করে আসছিলেন। কিন্তু সামরিক চাকরির কারণে ইরান দেখা সম্ভব হয়ে উঠেনি। প্রায় ৪০ বছর ধারণ করে রেখেছিলেন এই আশা। অবশেষে লেখকের এই সুপ্ত আশা বাস্তবায়িত হয় তাঁর সুহৃদ বন্ধুদের কারণে।
বইটি আমাদের ইরানের সঙ্গে খুবই গভীরভাবে পরিচিত হতে সহায়তা করবে। কারণ, লেখক প্রায় প্রতিটি স্থানেরই বর্ণনা দিয়েছেন। কেন বিখ্যাত হলো, কেনই বা মানুষজন সেই জায়গা দেখতে যায়, কেনই বা হাজার বছর পরেও এসকল স্থান দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় এখনও? এসব কিছুই লেখক এই বইটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
প্রায় ২৫০০ বছরের সভ্যতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ লেখক তাঁর নিজের মতো করে এই বইয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন মাত্র। ইরানের শুধু ঐতিহাসিক সভ্যতাই নয়। এ দেশ শিল্প সাহিত্যে বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছে। সাদী, হাফিজ, ফেরদৌসী আর ওমর খৈয়ামসহ অনেকে বিশ্ব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে রেখেছেন। ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত’, ফেরদৌসীর বিশ্বখ্যাত শাহনামা’, হাফিজের দিওয়ান’, সাদীর গুলিস্তা, বােস্তান বিশ্ব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। পারসেপােলিস’ অথবা ‘পাসারগ্রাড’-এর মত ২৫০০ বছরের আগের স্থাপত্য আজও মােহিত করে বিশ্ববাসীকে। এখানেই বিখ্যাত হয়ে চিকিৎসা শাস্ত্র ও দর্শনকে সমৃদ্ধ করেন ইবনে সিনা। বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে ইরানে।
বিরাট এক দেশ,কিন্তু জনসংখ্যা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক কম। পশ্চিমা বিশ্বের বিরূপ মনোভাবের পরেও, মাথাপিছু আয় ৫০০০ ডলারের বেশি এবং জীবনযাত্রার মান আমাদের দেশের তুলনায় ১৫/২০ গুণ বেশি। একটা সময় ছিলো, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্টের খুবই ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলো ইরান। এরপর শাহ এর পতনের পর আগমন হলো খামেনি অধ্যায়ের। শুরু হলো পশ্চিমা বি/রো/ধ। পারমাণবিক অ/স্ত্র নিয়েই পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ইরানের মতবিরোধের সূত্রপাত। এককথায় বইটি সকলকে ইরানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সক্ষম হবে বলে মনে করি।
লেখকের লেখনী নিয়ে কিছু কথাঃ অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করেছেন লেখক তার অভিজ্ঞতা। প্রতি পাতায় পাতায় অজানা তথ্যের সমাহার। মনে হবে এ যেন এপ স্বপ্নের দেশ। বাহির থেকে যতটা রক্ষণশীল দেশ মনে হয়, আসলে দেশটি ততটা রক্ষণশীল নয়। লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে চোখের সামনে এসকল দৃশ্য ভাসিয়ে উঠাতে সক্ষম হয়েছেন পাঠকমাত্রই তা স্বীকার করবেন!
প্রচ্ছদঃ ইরানের বিখ্যাত 'আজাদী টাওয়ার' দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রচ্ছদ, যেন তা পাঠককে ইরানে স্বাগত জানাচ্ছে।
Brigedier J.M. Sakaoat Hosen Ret. ১৯৪৮ সনের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সনে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় দু’বছর পাকিস্তানের বন্দি শিবিরে কাটিয়ে ১৯৭৩ সনে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭৫ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯-৮১ সনে ঢাকায় সেনাসদরে গুরুত্বপূর্ণ পদে অপারেশন ডাইরেক্টরেট নিয়োজিত হন। পরে তিনি ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে দুটি ইনফেনট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন। লেখক বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে দ্বিতীয়বারের মত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিখ্যাত ইউ এস এ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ জেনারেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স এ ডি সি ইসলামাবাদ ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স এবং ২০১১ সনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্, ঢাকা থেকে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম ও বইয়ের লেখক হিসেবে অধিক পরিচিত। এ পর্যন্ত তার তেইশটি বহুল পঠিত বই প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া দেশী-বিদেশী ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতি এবং নির্বাচন বিষয়ে বিশ্লেষক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ২০০৭ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রয়েছে। ২০০৮ সনের জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের পাঁচ হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা।