গাঙডুবি; লেখক- বায়েজিদ বোস্তামী _ ডিকোডিং এর চেষ্টায় ___________________
অনেক বছর পর গল্পের বই হাতে নিয়েছিলাম।
বইটা হাতে নিয়েই আরাম লাগলো - ছোট্ট, কিউট একটা বই। ছোটবেলার ঈদ কার্ডের কথা মনে পড়ে গেল।
কিউট হওয়াতেই বিপত্তিটা বেঁধেছিলো। তৃতীয় হাত গল্পটা শেষ করে গাঙডুবিতে যাওয়ার আগে ছোট বোন পড়তে নিয়েছিলো বইটা। ছোট কন্যা বইটা দেখে, আমি পড়া অবস্থাতেও দেখেছিলো অবশ্য, কিন্তু যেই না বইটা অন্য হাতে গেল সে ওটাকে আর তার বাবার এখতিয়ারভুক্ত মনে করেনি। তার ফুপীর পড়ার এক ফাঁকে ওটা নিয়ে নেয়, পাতা উল্টিয়েছিলো, হয়তো ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলো, তারপর আর গাঙডুবিকে পাওয়া যায়নি। দুদিন ঘরের ভেতরে আঁতিপাতি করে খুঁজেছি, পাই নি,,,,
গল্প উপন্যাস পড়ার আগ্রহ আগেই হারিয়েছি। আমার মনে হয়, আমি নিজেই তো একটা গল্প; অন্য গল্প পড়ে কী হবে। তারপরও পড়ি। কারণ একজন লেখক যখন গল্প বলেন বা লিখেন তখন তিনি কারো না কারো জীবনের কথাই বলেন, সাথে আরো কিছু বলতে চান; ভিন্ন কিছু। সেই ভিন্ন কিছুর খোঁজেই পড়া।
জানি না লেখকের মগজের ভেতরে চলা ভিন্ন বিক্রিয়ার স্বরুপ বুঝতে পেরেছি কিনা, কিন্তু চেষ্টা করেছি নিজের মতো করে।
পারাপার______________ মৃত্যু একটা উন্মোচন; ক্ষণিকের। আমরা যাকে বেঁচে থাকা বলি, সেটা একটা মিথ্যে গল্প; অথবা অনেকগুলো মিথ্যে গল্পের সত্যিকারের গল্প হয়ে ওঠা। মৃত্যু এসব গল্পের ঢাকা পড়ে থাকা অংশকে এক ঝটকায় সামনে নিয়ে আসে; সামনে এনে ফের মুছে দেয়।
সকল সাকিজলই জীবনের বিরল রহস্য ভেদ করে, মগজের শেষ মুহূর্তের বেঁচে থাকার স্বল্প সময়টাতে। আসলে ভেদ করতেই হয়, না চাইলেও।
সাকিজলও দেখেছিলো তার মমেনার স্তনে পিয়ারু ও আরো অনেকের লেগে থাকা কামনার দাগ; সমাজ পিয়ারুদের মস্তিষ্কে বছরের পর বছর ধরে যেসব মহার্ঘ আব্রু তৈরি করেছিলো সেসব ভেদ করে তাদের সম্মুখে প্রকট হয়ে উঠতে থাকে জীবন ও শরীর।
ঘাঘরপাড়ের জীবন পারাপারের চিন্তায় বিষন্ন থাকে না। তাই সাকিজলের বুবু ঘাটের এ-পাড়ের হাসিঠাট্টায় সাড়া দিতে পারে। ভরহীন সাকিজলেরও সাধ জাগে মমেনার রসালো দেহের অন্তঃপুরে দেহ ডুবাতে; অভ্যাসের নাসারন্ধ্রে পায় সদ্যকাটা ধানগাছের না-শুকোনো কষ-কষ ঘ্রাণ আর শেরালি মোয়াজ্জিনের খোনা স্বরের আযান।
জীবন আসলে আমাদেরকে সবটুকু দেখায় না, তাই হয়তো আমরা এটাকে ভালোবাসি। আর সবটুকু যখন উন্মোচিত হয় তখন শুন্যতা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। ফেরার__________________ জুয়েলের গল্প। যে জুয়েল মায়ের সেই অপরাধ আর মনে রাখেনি। আচ্ছা, তার মা কী "অপরাধ" করেছিলো? সহায় সম্বলহীন একজন বিধবা আশ্রিতা নারীর ছমির সর্দারদের কাছে দেহ বিলিয়ে দেয়া ছাড়া আর কীই বা করার থাকে? কিঙবা অপরাধ কাকে বলে?
জুয়েল। খুব সাধারণ একটা ছেলে। দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করাই ছিলো যার ভাবনা; আর ছিলো বিউটির সাথে ঘর বাঁধার সাধ।
নিয়তি তা হতে দেয়নি। নিয়তি অনেকেরই অনেক কিছু হতে দেয় না। রাস্তার তেমাথায় সে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, যার সাথেই দেখা হয় হাসিমুখে তাকেই ধরিয়ে দেয় শেষ পানপাত্র।
অথবা নিয়তি কি পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মের অধীন? গল্পটা অন্যরকম কি অন্যরকম হতে পারতো, হলে সেটার সাপেক্ষে মূল্যায়ন কেমন হতো?
নিয়তি হোক আর পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম হোক, আমরা কি আসলেই আমাদের নিয়ন্তা!
তৃতীয় হাত__________________ "কতো আর ভাল্লাগে এই ধাঁধার ইঁদুরের মতোন ঘুরপাক খেতে থাকা অতীত কিংবা বর্তমানের পূনরাবৃত্তির গলিতে গলিতে।" _____ বর্তমান বলে কি কিছু আছে? এটা শুধুই বয়ে চলা; সময় নামক চতুর্থ মাত্রা একে কোথাও দাঁড়ানোর সুযোগ দেয় না! আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি নামক অংশটি আমাদের চোখের সামনে বর্তমানের এক অত্যাশ্চর্য ইল্যুশন তৈরি করে রাখে।
অতীত, সে তো আমার নয়; আমার অতীত আমার একার না; সেখানে মিশে আছে ওই মুহূর্তের পৃথিবীর কোটি মানুষের চিন্তার মিথস্ক্রিয়া; তাকে আমি অস্বীকার করি!
ভবিষ্যতেও নিজেকে আমি খুঁজে পাই না, হাতড়ে বেড়াই। আগামিকাল আমি কি করবো সে সিদ্ধান্ত কী আমি "আমার" জন্যই নিচ্ছি? নাকি অন্ধভাবে চলতে থাকা সময় তার নিজের ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য আমাকে দিয়ে করাচ্ছে!
রাফিন, তনিমা, জেনি, সিনু , আরো যারা আছে সবাই মস্তিষ্কের সাথে সময়ের দ্বন্ধের বলি। হোর্ডের জীবন ছেড়ে এরা এক নারী আর এক পুরুষে জীবন কাটানোর ব্রত নিয়েছিলো; তৃতীয় হাতের খোঁজে আবার সেই যেন হোর্ডেই ফিরে যাওয়া, ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন স্বাদে। ___________________
লেখক কয়েকটি গল্পের চরিত্রকে উত্তরবঙ্গের ভাষায় কথা বলিয়েছেন।
না শোনা অনেক শব্দ ফিসফিস আওয়াজ তুলে মানুষের আলাপে ছড়িয়ে গেছে গল্পের পাতায়।
ওখানকার গ্রামীন আবহটাকে এঁকেছেন একেবারে জীবন্ত করে। যখন পড়ছি, মনে হচ্ছে খুব কাছ থেকেই ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো দেখছি। অবশ্য সব গ্রামই বোধ হয় একই রকম।
লিখায় কোন মেদ নেই। ঝরঝরে আর সাবলীলভাবে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আর যা ঘটার তাই ঘটিয়েছেন, কোন নাটকীয়তাকে টেনে আনেননি। এক্ষেত্রে লেখককে স্বৈরাচারী মনে হয়নি একটুও। আর এজন্যেই চরিত্রগুলো অতোটা জোরালো ছিলোনা, যেন তারা স্বাভাবিকভাবেই জীবন অতিবাহিত করছে। আর চরিত্রের চেয়ে চারপাশের আবহটা মাথায় কাজ করেছে বেশি। ________________ শহুরে জীবনও উঠে এসেছে গল্পে। তবে লেখক সম্ভবত শহরের চেয়ে গ্রামকে বেশি আদর করেন। __________________ সংলাপের চেয়ে চরিত্রের চারপাশের স্ট্রাকচার অনেক বেশি স্থান জুড়ে ছিলো। তাই চরিত্রগুলো হয়ে পড়েছিলো অনেকটা গৌণ। এটা ভালো লাগেনি। __________________
প্রচ্ছদের কথা আলাদা করে বলছি কারণ এটা অনেক সুন্দর ছিলো!
ভাবটা আমার কাছে এমন ছিলো,, ধূসর হয়ে জীবনের প্লাবনে একজন নিঃসঙ্গ একাকী মানুষ বেঁচে বা মরে ভেসে আছে!