রহস্য, ভূত, অলৌকিক বা অ্যাডভেঞ্চার-যে কোনো ধারাতেই সমান তালে কলম চলত হেমেন্দ্রকুমার রায়ের। তাঁর সৃষ্ট জয়ন্ত-মানিক গোয়েন্দা জুটির কথা তো সকলেই জানেন। কিন্তু যখনই কোনো অভিযানের ব্যাপার আসত, সেখানেই ডাক পড়ত বিমল-কুমার জুটির। সেখানে প্রায়শই দেখা যেত অন্ধকার রাতে, অচেনা জায়গায় হাতে 'বিজলী-মশাল' নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে বিমল-কুমার। তবে তারা নিজেদের গোয়েন্দা বলে পরিচয় দেয় না, গোয়েন্দাগিরি করতে বললেও তাদের ভারী অনীহা।
বিমল-কুমার কাহিনি 'অগাধ জলের রুই-কাতলা'-য় সুন্দরবাবু এক রহস্যভেদের পরামর্শ চেয়ে বিমলকে ফোন করলে বিমল পরিষ্কার বলে: "আপনার ডিটেকটিভ বন্ধু জয়ন্তবাবুর কাছে যান না!...কারণ গোয়েন্দাগিরিতে আমরা হচ্ছি নিতান্ত গোলা ব্যক্তি।" তবে এই কথাটি কিন্তু শ্লেষমাখানো কথা নয়। জয়ন্ত-মানিক জুটির সঙ্গে বিমল-কুমারের সম্পর্ক খুবই ভালো। এক-দুটো অভিযান নয়, বরং আটখানা অভিযানে তারা একত্র হয়েছে।
আর শুধু তো জয়ন্ত-মানিক-বিমল-কুমার নয়, তাদের সঙ্গী হয়েছেন সুন্দরবাবু, রামহরি, আর কোনো কিছুকেই না ডরানো পোষা কুকুর বাঘা। এই খণ্ডে সেই অষ্টাভিযানের মধ্যে তিনটি সংকলিত হল।
বিমল-কুমার জুটি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল 'যখের ধন' উপন্যাসের জন্য। কিন্তু যখের ধনের সন্ধান সেখানেই শেষ হওয়ার নয়। সম্রাট লেনানার গুপ্তধন সন্ধানে বিমল-কুমার পাড়ি জমিয়েছিল আবার। এবার সুদূর আফ্রিকা। ঘটোৎকচদের সঙ্গে মোকাবিলায় সঙ্গী হয়েছিল সতেরোখানা সিংহকে যমের বাড়ি পাঠানো সিংহদমন গাটুলা সর্দার।
সেই 'আবার যখের ধন' সংকলিত হল বিমল-কুমার সমগ্র দ্বিতীয় খণ্ডে। প্রকাশকাল হিসেবে তার পরবর্তী আরও ন'খানা বিমল-কুমার কাহিনি সংকলিত হল, যার মধ্যে তিনটি ছোটগল্প।
'সূর্যনগরীর গুপ্তধন' বই আকারে ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হলেও মৌচাক পত্রিকায় ১৩৪১ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ থেকে ১৩৪২ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাস অবধি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই কাহিনিতে অ্যাবোমিনেবল স্নোম্যান বা ইয়েতির নাম না থাকলেও ইয়েতির মতো মনুষ্য-সদৃশ না-মানুষ, না-বানর কুকুর-উপাসক এক প্রজাতির কথা রয়েছে। কুকুর-পূজারি হিসেবে নিয়োজিত হন কোনো নারী যাঁকে অপহরণ করে আনা হয় এবং কুকুর উপাসনায় লাগে নরবলি।
'মেঘদূতের মর্ত্যে আগমন' ও 'ময়নামতীর মায়াকানন' কাহিনিখ্যাত বিনয়বাবুর মেয়ে মৃণু অপহৃত হয়। বিনয়বাবুর ডাকে কলকাতা থেকে দার্জিলিংয়ে হাজির হয় কুমার-বিমল- বাঘা-রামহরি। এই কাহিনিতে বাঘার ভূমিকা বিশাল। প্রসঙ্গক্রমে বলা ভালো, এই কাহিনিতে সুগ্রীবপিথেকাস ও রামাপিথেকাস নামে দুটি বিশেষ এপ প্রজাতির কথা রয়েছে, যাদের করোটির অংশবিশেষ ওই সময়ের মধ্যেই
জন্ম ১৮৮৮, কলকাতা। সাহিত্যচর্চার শুরু মাত্র ১৪ বছর বয়সে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। খেয়ালি জীবন, ঘুরে বেড়িয়েছেন সাহিত্য সংস্কৃতির নানান স্রোতে। ‘ভারতী’ গােষ্ঠীর সাহিত্যিক হিসেবেই প্রথম পরিচয়। ‘বসুধা’ পত্রিকায় প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। বহু গান লিখেছেন, নাচ শেখাতেন, নাটকও লিখেছেন। সম্পাদনা করেছেন নাটক বিষয়ক সাময়িকপত্র ‘নাচঘর’। পরবর্তী সময়ে সম্পাদক ছিলেন ছােটদের বিখ্যাত পত্রিকা রংমশাল-এরও। কিশাের সাহিত্যের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। লিখেছেন অজস্র বই। বয়স্ক পাঠকদের জন্য কাব্য-অনুবাদে ‘ওমর খৈয়ামের রুবায়ত’ বা ছােটদের জন্য ‘যকের ধন, ‘দেড়শাে খােকার কাণ্ড’, ‘ঝড়ের যাত্রী’, ‘কিং কং’ সমান আদৃত। বিখ্যাত প্রবন্ধের বই ‘বাংলা রঙ্গালয় ও শিশিরকুমার। জীবনাবসান ১৮ এপ্রিল ১৯৬৩।