পাঁচটি নাটকের দৃশ্যপট ভিন্ন ভিন্ন হলেও কাহিনীগুলোর বৈশিষ্ট্য ও অন্তর্গত ভাবনার সূত্র এক। সন্তোষের চশমা পরে রাজা পরিচালনা করে রাজা। অন্যের চোখে দেখে মানুষকে, রাজাকে। এক সময় রাজা বুঝতে পারেন রাজনেত্র নামের চশমা তাকে প্রজাদের আসল চেহারা, জীবনের স্বাভাবিকতা দেখতে দেয় না। রাজা এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চান। খালি চোখে দেখতে চান সবকিছু। কিন্তু কোনো রাজা কি পারেন রাজনেত্র ছাড়া রাজাকে মানুষকে দেখতে? বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যাওয়া সালমা, মেহের, বিউটি আর অদ্রাদের উদ্ধার করে আনা হয়। কিন্তু পিশাচের ঘেরাটোপ থেকে ফিরিয়ে আনা মেয়েগুলোর ঠাঁই হয় না তাদের পরিবারে- সমাজে। রাষ্ট্রের হেফাজতের নামে তাদের জায়গা হয় জেলখানায়। দু'একজন বাইরের পৃথিবীতে ফিরে গেলেও অনিশ্চিত জীবন ছাড়া আর কিছুই জোটে না তাদের ভাগ্যে। মহাসড়কের দীর্ঘ যানজটে হাসফাঁস অবস্থা মানুষের। এই যানজটের মধ্যেও দৃশ্যমান হয় নানা অব্যবস্থাপনা, নৈরাজ্য আর মানুষের জীবনবিমুখ ও স্বার্থপর চেহারা। এক কিশোর অসুস্থ মাকে নিয়ে আটকা পড়ে যানজটে। এক সময় জট ছুটে যায়। যানবাহনের সারি- মানুষ এগিয়ে চলে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে। কিন্তু অসুস্থ মাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ফিরে চলে উল্টোপথে। কারণ, তুচ্ছ কারণে লেগে থাকা দীর্ঘ সময়ের যানজট কেড়ে নিয়েছে গুরুতর অসুস্থ মায়ের জীবন। গভীর রাতে ঢাকা শহরের এক ফ্ল্যাটবাড়িতে প্রবেশ করে দুই চোর। ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী আর বাসিন্দা তরুণ দম্পতির মুখোমুখি হয় তারা। রাতের অতিথি আর ফ্ল্যাটবাসীদের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে সমাজের নানা অসংগতি, বিশৃঙ্খলা ও বিভেদ। প্রত্যন্ত এক গ্রামে নবাব সিরাজদ্দৌলা নাটক মঞ্চায়নকে কেন্দ্র করে ঘটে যায় নানা ঘটনা। আর সেসব ঘটনায় দৃশ্যমান হয়। কিছু কিছু মানুষের আমরিকা। স্পষ্ট হয়ে ওঠে ধনী আর গরিবের বিভেদ। কিন্তু শেষ অবধি জয় হয় শিল্পের। পরাভব মানে অসুন্দর। যাবতীয় বিভাজন দূর করে দেয় মানুষের সৃজনশীল আকাঙ্ক্ষা।
হারুন রশীদ এর জন্ম ২০ জানুয়ারি ১৯৬২, সিরাজগঞ্জে। পিতা- এস. এম. শাহজাহান। মা- বীণা খানম। লেখাপড়া করেছেন সিরাজগঞ্জের বি. এল. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশাগত জীবন শুরু হয় সাংবাদিকতা দিয়ে। কাজ করেছেন 'বাংলাদেশ অবজারভার'-এ। যুক্ত ছিলেন চিত্রালী, আগামী, তারকালোক, কিশোর তারকালোকসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীর সাথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। ১৯৮৬ সালে যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে। অবসর নিয়েছেন সরকারের গ্রেড-১ কর্মকর্তা হিসেবে। লেখালেখির পাশাপাশি শৈশব থেকে নাটকের সাথে যুক্ত তিনি। বাংলাদেশের বহুল আলোচিত আরণ্যক নাট্যদলের সদস্য। অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক। সিরাজগঞ্জের খ্যাতনামা নাট্য সংগঠন 'তরুণ সম্প্রদায়'-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। জাতীয় পর্যায়ের আবৃত্তি সংগঠন 'স্বরশ্রুতি'র প্রতিষ্ঠাতাদেরও একজন তিনি। নাট্যকার হিসেবে পেয়েছেন টেনাশিনাস পদক। কাহিনী ও সংলাপের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার লেখা উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম- উপন্যাস: যুদ্ধে যাবোই, ১৪ই আগস্টের বাগানপার্টি, তিনি, শেষ বিকেলের রোদ, শোকের শহরে, ক্যায়ফা হাল; কাব্যগ্রন্থ: ইচ্ছেঘুড়ি; গল্পগ্রন্থ: পুতুলের ঘর ও প্রান্তজনের প্রভু এবং আত্মজীবনীমূলক লেখা: আমলাবেলা। হারুন রশীদ-এর লেখা উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটক: রাজনেত্র, স্বপ্নপথিক, জট, জলদাস, হেফাজত, পঞ্চনারী আখ্যান, নিশিকুটুম্ব, সখিপুরপালা, বোধ, যা ছিল অন্ধকারে ইত্যাদি। বেশ কিছু পথনাটক লিখেছেন। লিখেছেন অসংখ্য টেলিভিশন নাটক।