গণমানুষের মুক্তিসংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের কারণে পৃথিবীতে যে কজন কবি কায়েমি শোষকদের অধীনে কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম তাঁদের অন্যতম। এই গ্রন্থে কাজী নজরুলের কারাজীবনের ঘটনাবলি ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের কৃত কয়েকটি ফৌজদারি মামলা, একটি দেওয়ানি মামলা এবং এ সংক্রান্ত সমসাময়িক পত্রপত্রিকার নানা তথ্য ও উপাত্ত রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও কর্ম অনুধাবনে যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার সম্পাদক। এ পত্রিকায় ১৯২২ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বরের ১২শ সংখ্যায় তাঁর লেখা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ ৭৯ লাইনের একটি দীর্ঘ প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক কবিতা ও ১৯২২ সালের ২০শে অক্টোবরের ১৫শ সংখ্যায় ১১ বছরের ছোট মেয়ে শ্রীলীলা মিত্রের ‘বিদ্রোহীর কৈফিয়ৎ’ প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ রাজ সরকারের রাজ মর্যাদাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার এ সংখ্যা দুটি বাজেয়াপ্তসহ পত্রিকার সম্পাদক কাজী নজরুলের বিরুদ্ধে তৎকালে প্রচলিত ভারতীয় বিধি, ১৮৬০-এর ১২৪ক ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়। এ ধরনের মামলা করার জন্য সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রেও তদানীন্তন ভারতের ভাইসরয় অথবা গভর্নর জেনারেলের দপ্তর কিংবা বাংলা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে এই মামলা করা হয়েছিল। এই মামলার সঠিক নাম পাওয়া না গেলেও মামলাটি ‘ধূমকেতু’র মামলা কিংবা দঞযব ঊসঢ়বৎড়ৎ ঠং কধুর ঘধুৎঁষ ওংষধস’ নামে পরিচিতি। ভারতবর্ষে সেই সময়ে ইংল্যান্ডের রাজার নামে শাসন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল। সেই হিসেবে মামলার ফরিয়াদি ছিলেন স্বয়ং রাষ্ট্র বা রাজা। ‘ধূমকেতু’র মামলায় ১৯২৩ সালের ১৬ই জানুয়ারি কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট মি. সুইন হো রায় প্রদান করেন। এই রায়ে কাজী নজরুলের এক বছরের সশ্রম কারাদÐাদেশ হয়। তিনি কারাজীবনের দিনগুলি প্রেসিডেন্সি জেল, আলিপুর জেল, হুগলি জেল ও বহরমপুর জেলে অতিবাহিত করেন। এ গ্রন্থে কাজী নজরুলের কারাজীবনের দুঃসহ জীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
শাহ্ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান একজন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও গবেষক। পেশাগত জীবনে তিনি বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা। জন্ম ১০ই জুন ১৯৮৫ সালে জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার খাশিমারা গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ আবদুর রহিম, মাতা মোসাম্মৎ মাজেদা খাতুন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা জামালপুরের মাহমুদপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে। পঞ্চম শ্রেণিতে সরকারি বৃত্তি (১৯৯৫) অর্জন। ঢাকা কলেজ থেকে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর (২০০৮), সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএল.বি. (২০১৩)। একুশ শতকের শূন্য দশক থেকে লেখালেখি শুরু। মূলত তিনি সৃজনশীল প্রবন্ধ লিখেন। অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকা ও জার্নালে। কাজী নজরুল ইসলামের ওপর ও আইন-বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধগুলো পাঠক সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রথম ব্যাচে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। ‘অমর একুশে বাংলা একাডেমির ৬০ বছর ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৫ স্মারকপত্রে’র প্রকাশনা সহকারী এবং পাঁচ খণ্ডে সমাপ্য জেলা সাহিত্যমেলা ২০২২’ গ্রন্থের প্রকাশনা পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : জীবন-কথা : মির্জা আশরাফ উদ্দিন হায়দার’ (২০২২), ‘কাজী নজরুলের কারাজীবন’ (২০২৩), ‘ডা. মো. জাকির হোসেন : কালসমুদ্রে আলোরযাত্রী’ (২০২৪)। কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অর্জন করেছেন কুমিল্লা সাহিত্য সংসদ গুণিজন সম্মাননা (২০২২), তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক পুরস্কার (২০০৯), ঢাকা কলেজ থেকে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক পুরস্কার (২০০৯), ঢাকা কলেজ থেকে ইদ-ই-মিলাদুন্নবি উপলক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক পুরস্কার (২০০৮)সহ বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মাননা।