অধ্যাপক কবি আ ন ম আবদুস সোবহানের সঙ্গে পরিচয় ফরিদপুর শহরে সরকারি রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে পড়তে এসে ১৯৮৩ সালে। মহকুমা পেরিয়ে জেলা শহরে আসা গ্রাম্য ছেলে হিসেবে অনেকটা পেছনের পঙক্তিতেই ছিলাম। তবু উদগ্র বাসনা ছিল সাহিত্যচর্চা করার। মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির দেওয়ালপত্রিকায় কবিতা ছাপা হওয়ার আনন্দে স্থানীয় পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের প্রবল ইচ্ছে দানা বাঁধে। কিন্তু সাহস পাই না। কবিতা পাঠানোর নিয়মকানুনও জানি না। একবার ৩টি কবিতা হাতে লিখে সাপ্তাহিক আলমোয়াজ্জিন, সাপ্তাহিক জাগরণ ও অর্ধসাপ্তাহিক বাংলা সংবাদ পত্রিকার অফিসে রক্ষিত প্রেসরিলিস জমাদানের বাক্সে চুপিচুপি ফেলে আসি। পরের সপ্তাহে 'আলমোয়াজ্জিনে' ছাপা হয় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমার কবিতা। এটি আমার মুদ্রিত অক্ষরের প্রথম কবিতা। দ্বিতীয় কবিতাটি ছাপা হয় 'বাংলা সংবাদে'। তৃতীয়টি ছাপা হয় 'জাগরণে'। দ্বিতীয়বার কবিতা নিয়ে যাই পত্রিকার দফতরে। সেখানে মনোয়ার হোসেন নামে কর্মরত এক সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। মনোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকা ও ফরিদপুরে আমার অজস্রবার দেখা হতো। প্রবল এক ঘনিষ্ঠতাও তৈরি হয়েছিল। হায়, এখন তিনি আর নেই! আমার কবিতা ছাপানোর কথা বলায় তিনি ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে সম্পাদকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সেখানেই পরিচয় আ ন ম আবদুস সোবহানের সঙ্গে তিনি কবি, ইয়াছিন মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। পাশের রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র আমি। সেই সূত্রে আমার স্যার। শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক না হয়েও নিজগুণে তিনি আমার শিক্ষকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। সারাদেশে মহাবিদ্যালয়-পর্যায়ে বাংলাবিদ্যার অধ্যাপকদের তুলনায় তিনি অনেকটাই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। শওকত ওসমান, আশরাফ সিদ্দিকী, অজিত গুহ, মমতাজউদ্দীন আহমদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত আলী, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, রফিক কায়সার, মোহাম্মদ জয়নুদ্দিন, তিতাশ চৌধুরী, শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, মাহবুব সাদিক, মাহমুদ কামাল, সন্দীপ মল্লিক, সরকার আবদুল মান্নান, রতন সিদ্দিকী, প্রশান্ত মৃধা প্রমুখ সাহিত্যিক তো মহাবিদ্যালয় থেকেই উঠে-আসা। আ ন ম আবদুস সোবহান স্যার এঁদেরই কাতারের মানুষ। কিন্তু নানান কারণে রয়ে গেছেন আলোচনার বাইরে। 'বাংলা সংবাদে'র সম্পাদক হিসেবে মঞ্জুয়ারা স্বপ্নার নাম ছাপ হলেও সোবহান স্যারই প্রকৃত সম্পাদক ও প্রকাশক। চাকরিতে নিযুক্ত বলে বোনের নামে ডিক্লিয়ারেশন নিয়েছেন। সূর্যমুখী মুদ্রণালয়, সূর্যমুখী প্রকাশনী আর বাংলা সংবাদ পত্রিকার কার্যালয় একই ভবনে। স্যার আমার প্রকাশিত কবিতাটি প্রশংসা করেন।
লেখক গবেষক শিক্ষক। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২২। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে জীবনীগ্রন্থ: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, জ্যোতির্ময় লেখক ড. হুমায়ূন আজাদ, সবার প্রিয় হিমু ও হুমায়ূন আহমেদ, ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান জীবন ও কর্ম, স্থপতি ও চিত্রশিল্পী মুস্তাফা খালীদ পলাশ জীবন ও কর্ম (of conflict and harmony), ছোটদের বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, ছোটদের রবীন্দ্রনাথ। উপন্যাস: হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, তুমি শুধু আমার, অনুভবে প্রতিদিন, স্বপ্ন ছুঁয়ে যায়, একটি নষ্ট রাতের কষ্ট, একাত্তরের শিশু, শুভ্রর আবিষ্কারের স্বপ্ন, নাম তার কচি ইত্যাদি। যৌথ কাব্যগ্রন্থ: দ্বান্দ্বিক ভালোবাসা, ফাগুনের ঝরাপাতা। সম্পাদনা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদিত শ্রেষ্ঠ কবিতা। জন্ম: ৮ অক্টোবর, ১৯৭১, মুকসুদপুর, পোপালগঞ্জ। পিতা: নিত্যানন্দ রায়, মাতা: কামরাগী রায়। গণিতশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর। পেশা: অধ্যাপনা, স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ইনস্টিটিউশন ও কলেজ। সুমন্ত রায় এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। কন্যা শ্রীময়ী রায় শ্রেষ্ঠা, পুত্র দীপায়ন রায় পৃথ্বী। সহধর্মিণী দিপালী শিকদার, ইংরেজি সাহিত্যে এমএ। শিক্ষকতা করেন হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজে। সুমন্ত রায় ত্রৈমাসিক অগ্রসর বিক্রমপুর-এর সহযোগী সম্পাদক। বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সহ-সভাপতি।