"জয় বাংলা হইছে! যুদ্ধ যুদ্ধ হইলেও হামার যুদ্ধ শেষ হয়নি।কহিবা পারেন কুনদিন হামার যুদ্ধ শেষ হইবে?"- অনন্তবালা নামের একজন বয়স্ক নারী এই কথা বলেছিলেন 'দৈনিক ডেসনিটি'কে ২৪ শে জানুয়ারি ২০১০ সালে। বইটির নাম দেখেই আমরা অনেকেই বুঝতে পারছি যে,বইটির মূল উপজীব্য কি পারে...বইটিতে অসংখ্য বধ্যভূমির বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর সবগুলোই বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় উঠে আসা তথ্যের সংকলন।আমরা জানি যে,আমাদের একটা লম্বা ইতিহাস রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের। পলাশীর মাঠে অস্ত যাওয়া সূর্য বাংলার আকাশে ২০০ বছরেরও অধিক সময় পরে আবার উদিত হয়েছিলো।এই মধ্যখানের সময়গুলো কিন্তু আসলে আমাদের জন্য সহজ ছিলো না।আমরা ব্রিটিশদের কর্তৃক শোষণ হয়েছিলাম,পাকিস্তান কর্তৃক ২৪ বছর অত্যাচারিত হয়েছি।যার থেকে মুক্তি মেলে অবশেষে ১৯৭১ সালে।৩ মিলিয়ন শহীদ এবং .২ মিলিয়ন অত্যাচারিত মা-বোনদের বিনিময়ে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা। পাকিস্তানিরা অসংখ্য মানুষকে মেরে মাটিচাপা দিয়েছেন,বড় গর্ত করে একসাথে অনেককেই মেরে পুঁতে রেখেছিলো।সময়ের সাথে সাথে সেসব গণকবরের সন্ধান মিলতে থাকে।এ রকম দেশের অসংখ্য স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গণকবর তথা বধ্যভূমির বর্ণনা রয়েছে বইটিতে।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এখনও বধ্যভূমি নিয়ে লেখা চোখে পরে থাকতে পারে অনেকের।কিন্তু,এরকম সংকলন বোধহয় আর হয় নি।এদিক থেকে অনেক তথ্যের সমাহার,যার ফলে বেশকিছু অজানা তথ্য জানা গেলো।অবশ্যই,ভালো একটা দিক।
নামকরণঃ
বইটির সম্পূর্ণ অংশ জুড়েই যেহুতু বধ্যভূমি দখল করে আছে, সেহুতু 'একাত্তরের বধ্যভূমি' নামটি বলা যায় বেশ হয়েছে।
কিছু আলাদা অনুভূতিঃ
আমাদের চারপাশে হয়তো আমাদের বধ্যভূমি রয়েছে।আমি ভোলা,বরিশাল,শরীয়তপুর,ঢাকার বেশ কয়েকটি বধ্যভূমিতে গিয়েছিলাম। সামনে উপস্থিত হলে,মাথায় তৎক্ষনাৎ উপলব্ধি হয় এখানেই তো আমাদের দেশের মানুষদের মেরে ফেলে রাখা হয়েছিলো!বইটির একদম শুরুর দিকে বধ্যভূমির লিস্ট দেয়া আছে।খুঁজলে হয়ত আপনার আমার বাড়ির কাছের বধ্যভূমির নামও সেখানে দেখতে পাবেন।
মােঃ জয়নাল আবেদীন ১৯৫৪ সালে বিক্রমপুরের শ্রীনগর উপজেলার বেজগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী ছাত্র মাে: জয়নাল আবেদীন ১৯৬৪ সালে শ্রীনগর ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও ১৯৬৭ সালে ষােলঘর এ, কে, এস কে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জুনিয়র বৃত্তি লাভ। ১৯৭০ সালে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শ্রীনগর কলেজে প্রথম ছাত্র হিসেবে ভূতি। ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (হরগঙ্গা কলেজ) থেকে (৪% পাশের হারে) স্নাতক ডিগ্রি অর্জন। ১৯৭৫-৭৬ শিক্ষা বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে এম, এ পড়াকালে জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত। প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকার্স রিক্রটমেন্ট কমিটির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মজীবন শুরন। ১৯৬৯ সালে। ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ, ১৯৭০ সালের। নির্বাচনে থানা ছাত্র দ্বীপের সভাপতি হিসেবে জনমত গঠনে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন। ১৯৭১ সালে অসহযােগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ। ১৯৭২-১৯৭৫ পর্বে পর পর দুবার। শ্রীনগর কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন । কর্মজীবনে (১৯৭৭-২০০১) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার থেকে ডিজিএম, (২০০১-২০০৬) কৃষি ব্যাংক ও জনতা। ব্যাংকে জিএম, ২০০৭-২০১৩ রূপালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি । সিনিয়র, যােগ্য, সৎ ও মুক্তিযােদ্ধা কর্মকর্তা হওয়া। সত্ত্বেও দলীয় সরকারের আমলে একাধিকবার পদোন্নতি বঞ্চিত। বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও বিক্রমপুর সমিতির জীবন সদস্য, বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারি শ্রীনগর কলেজ প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতির আহ্বায়ক। সম্পাদিত গ্রন্থ :- ‘একাত্তরের শ্রীনগর’ ও ‘কিংবদন্তী পুরুষ আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী' । প্রকাশিত গ্রন্থ :- শ্রীনগরের জনগণ : মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ডায়েরি, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি, একাত্তরের বধ্যভূমি, কর্মজীবনের স্মৃতি, কবিরের মুক্তিযুদ্ধ। প্রথম আলাে ও গ্রামীণ ফোন-এর উদ্যোগে প্রথমা প্রকাশিত ‘একাত্তরের চিঠি' গ্রন্থে দুটি চিঠি প্রকাশিত । সামাজিক ও পেশাগত কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ অতীশ দীপংকর গবেষণা পদক-২০০০, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সম্মাননা-২০০৩, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার-২০০৫, সালেহীন মেমােরিয়াল এ্যাওয়ার্ড-২০০৫, বাংলাদেশ স্কাউটস লেখক সম্মাননা-২০০৫, বাংলাদেশ নৌকমাণ্ডো এসােসিয়েশন। সম্মাননা ২০০৮, জিলানি কমপ্লেক্স (চট্টগ্রাম) গুণীজন সম্মাননা ২০০৮, চ্যানেল আই বিজয়মেলা সম্মাননা-২০০৯, সিদ্দিক মেমােরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ (রংপুর) সম্মাননা-২০০৯, বরণীয়। বিক্রমপুর সম্মাননা-২০১০ সহ অনেক সম্মাননা লাভ ।