ইতিহাস পড়তে কার না ভালো লাগে। আর তা যদি হয় প্রান্তিকতামুক্ত প্রামাণ্য গ্রন্থ, তবে তো কথাই নেই! বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি মূলত এমনই বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়িমুক্ত একটি বই। লিখেছেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের আকর ফিকাহ শাস্ত্রের প্রবাদপুরুষ বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মুফতি শফি উসমানি রহ.। গভীর অনুভূতি, সুতীক্ষ্ণবোধ, বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা ও ধী-শক্তি তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। লেখক এতে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে কারবালার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এ ইতিহাস এতোটাই লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক যে, সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান আজও তা ভুলতে পারেনি-পারবেও না।
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনায় একদিকে যেমন জুলুম-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন, নিষ্ঠুরতা ও নির্দয়তার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে, অপরদিকে চিত্রিত হয়েছে প্রিয় নবিজির কলিজার টুকরা হজরত হুসাইন রাদি.-এর বাতিলের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া, সত্য ও ন্যায়ের পথে দৃঢ় থেকে স্বীয় জীবনকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করে দেয়ার মতো অনুপম আদর্শের রূপরেখা। ধ্বনিত হয়েছে পাপ-পঙ্কিলতা ও নীতি-নৈতিকতা অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম প্রতিবাদ।
এ গ্রন্থের প্রতিটি ঘটনাই অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। যা আমাদের ঘুমন্ত চেতনা ও মানসিকতাকে জাগিয়ে তুলতে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সত্য-সুন্দর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী চেতনাকে সমুজ্জ্বল করে রেখেছে। কারবালার শহিদানের স্মৃতি যুগ যুগ ধরে মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে চিরদিন প্রেরণা যোগাবে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কারবালার এ ঐতিহাসিক ঘটনাকে রসালো ও অতিরঞ্জিত করে ইতিহাস বিকৃতির অসুস্থ প্রতিযোগিতা সমাজে বিদ্যমান। তাই ইতিহাস বিকৃতির এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার ভিড়ে সঠিক ও নির্ভুল ইতিহাস জানা প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। আর বক্ষ্যমাণ বইটিই হতে পারে সেই শূন্যতার পূর্ণতা।
মুফতী মুহাম্মাদ শফী (উর্দূ: مفتى محمد شفيع) ১৩১৪ হিজরী সনের শা'বান মাসের ২১ তারিখে (২৫ জানুয়ারি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর নাম "মুহাম্মাদ শফী" হযরত রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কর্তৃক প্রস্তাবিত। ১৩২৫ হিজরীতে (১৯০৭/১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে) তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন । তিনি ১৩৩৬ হিজরীতে (১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ) দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন, তখন তার বয়স ২১ বছর ছিল। এরপর ১৩৩৭ হিজরীতে (১৯১৮/১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি খুবই তাড়াতাড়ি উচ্চতর শ্রেণীর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ১৩৫০ হিজরী সনে (১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দ) দারুল উলূম দেওবন্দের মুফতীয়ে আযম বা প্রধান মুফতী (গ্রন্ড মুফতী) নিযুক্ত হন। দেশ বিভাগের পর তিনি তাঁর পিতৃভূমি দেওবন্দ ছেড়ে পাকিস্তান চলে আসেন। তিনি ১৩৭০ হিজরীতে (১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ) পাকিস্তানে দারুল উলুম করাচী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শত এর মত বই লেখেছেন। তার বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ "মা'আরিফুল কুরআন" যা বহুল ভাষায় অনুবাদ হয়েছে যা তিনি সমাপ্ত করেন (ঊর্দূতে) তার ইন্তেকালের চার বছর আগে। এই আলেমে দ্বীন ও মনীষী ১৩৯৬ হিজরী সনের শাওয়াল মাসের ১০ তারিখে ইন্তেকাল করেন।[১][২]