জীব জন্তু নিয়ে রূপক কাহিনী রচনার ইতিহাস অতি প্রাচীন। ভারতের জাতকের কাহিনী, পঞ্চতন্ত্র ও গ্রীসের ঈশপের গল্প ইত্যাদি। গল্পগুলির চরিত্র জীবজন্তু কিন্তু তারা মানুষের মত কথা বলে। এই সকল গল্পের মাধ্যমে নীতিকথা প্রচার করা হয়। আধুনিক কালে জীবজন্তুকে মানবিক গুণাবলি দিয়ে চরিত্র সৃষ্টি করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ডিজনি। তিনি ও তার বন্ধু মিলে সৃষ্টি করলেন মিকি মাউস চরিত্র। সে ১৯২৮ সালের কথা। তাকে নিয়ে কাহিনি, সিনেমা , কার্টুন কত কি! আরো কয়েক বছর পর বিলেতী লোক কাহিনী অবলম্বন করে তৈরি করলেন ‘তিন শুকর ছানা ও দুষ্টু নেকড়ে’।
পরবর্তিকালে ওলান্দাজ শিল্পী ডিক ব্রুনা মিফি নামে মেয়ে খরগোশ নিয়ে গল্প লিখলেন ও ছবি আঁকলেন। ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন প্রকাশনা সংস্থা এ. ডাবলিউ. ব্রউনা এন্ড যুন কোম্পানি। এর সূচনা হয়েছিল ১৮৬৮ সালে। কোম্পানির মালিক এ. ডাবলিউ. ব্রউনা, ডিক ব্রউনার বাবা। ডিকের বাবার ইচ্ছা ছিল যে ডিকও বাবার পথ অনুসরণ করবেন। কিন্তু তার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডিকের ভাই, আর তিনি হলেন এই প্রকাশনার লেখক ও চিত্রকর এবং সহযোগী।
১৯৫৫ সালে ডিক সপরিবারে কোথাও বেড়াতে গিয়ে একটা খরগোশকে লাফিয়ে চলতে দেখেছিলেন। তখন থেকে এই খরগোশকে চরিত্র করে ছবি আঁকতে ও গল্প লিখতে আরম্ভ করলেন। ইংরেজিতে তার নাম হয় ‘মিফি’।
রহিমা করীম দূর বিদেশে দীর্ঘকাল বসবাস করেও বাংলা সাহিত্য চর্চা অব্যাহত রেখেছে ও বেশ কিছু ছোট গল্প রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি শিশুসাহিত্যের প্রতি সে আকৃষ্ট হয়ে ওয়ার্ল্ড ডিজনি রচিত “থ্রি লিট্টিল পিগ” শিশু সাহিত্য অবলম্বনে রচনা করেছে তিন ছাগল ছানা ও দুষ্টু নেকড়ে। রহিমা করীমের লেখা ‘ছোট্ট তিনটি ছাগল ছানা’-র কাহিনী তেমনি শিশুদের জন্য রচিত। ৪ রং-এ আকর্ষণীয় ছবি আঁকিয়ে ছাপা।
রহিমা করিমের পৈতৃক নিবাস গােপালগঞ্জ জেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। তবে বাবা মরহুম আবু আহমেদ আবদুল আলীর কর্মস্থলের সুবাদে তার জন্ম খুলনা জেলার রামপালে । শৈশব কেটেছে নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ঢাকার ইডেন গার্লস কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগােল বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। অবশ্য এর আগেই ১৯৬৪ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬৭ সাল থেকে স্বামী ড. রেজাউল করিমের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে বসবাস করছেন। তাঁর দুই ছেলে রাজী করিম ও নাঈম করিম । দীর্ঘকাল প্রবাসে কর্মব্যস্ততার মধ্যেও সাহিত্যচর্চা থেকে একেবারে বিযুক্ত হয়ে যাননি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিতভাবে তাঁর গল্প ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়ে আসছে। প্রবাসী বাঙালিদের জীবনযাত্রা ও সখ-দুঃখ তাকে বরাবরই আকর্ষণ করে। আর তাই লেখালেখিতে এসব বিষয়। উঠে আসে । লেখালেখির পাশাপাশি তিনি নিউ জার্সির বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন। রহিমা করিমের গল্পগ্রন্থ ‘স্বর্ণছােয়া’ ও ‘শেষ প্রশ্ন এবং উপন্যাস 'তিলােত্তমার তিরােধান’ ও ‘বিশ্বাসের অপমৃত্যু প্রকাশের পরই পাঠকমহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তিনি মেয়েদের সহজ স্বাস্থ্য রক্ষা' নামে নারী স্বাস্থ্যসহায়ক ছােট একটি বইও লিখেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের জন্য লিখেছেন 'A Trip to Remember' নামে আরেকটি ছােট বই ।।