নাগিব মাহফুজের অধিকাংশ উপন্যাসের ক্ষেত্র মিশরের কায়রো। মিশরের সমাজকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর রচনায়। বাস্তবভিত্তিক উপন্যাস 'কায়রো ট্রিলজি' তাঁকে বিশ্বখ্যাতি এনে দেয় এবং তিনি নোবেল পুরস্কার অর্জনের গৌরবে গৌরবান্বিত হন। বিশাল এ উপন্যাসটির একই কাহিনিকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্যালেস ওয়াক, প্যালেস অব ডিজায়ার ও সুগার স্ট্রিট। কায়রোর যে এলাকায় মাহফুজ বেড়ে উঠেছিলেন- সেখানকার এক পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের তিনটি প্রজন্মের কথা উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে।
নাগিব মাহফুজ কোনো নীতির প্রচারক হিসেবে নিজেকে বিবেচিত হতে দেননি, কিন্তু তাঁর একটি লক্ষ্য ছিল লেখক হিসেবে সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন। তাঁর উপন্যাস ও ছোটগল্প বাস্তবে শিল্পকর্ম, যেখানে অতি প্রাচীনকাল থেকে সমসাময়িক প্রাত্যহিক জীবনের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, মানুষের প্রশ্ন ও সমস্যা, সমাজের দার্শনিক দিক ও অস্তিত্বের সংগ্রামের বিষয় এসেছে। তাঁর উপন্যাস পাঠককে প্রায়শ ধারণা দেয় যে তিনি প্রকৃতপক্ষে মিশরের ইতিহাস রচনা করেছেন, শুধু সময় ও পরিবেশের সাথে প্রেক্ষাপট বদলে গেছে এবং তার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে কোথাও কোথাও অর্থ ও ব্যাখ্যা বদলে গেছে মাত্র।
'প্যালেস অব ডিজায়ার'-এর কাহিনি শুরু হয়েছে ১৯২৪ সালে জাতীয়তাবাদী ওয়াফদ পার্টির নেতা সা'দ জগলুল পাশার সাথে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের আলোচনার মধ্যদিয়ে এবং শেষ হয়েছে ১৯২৭ সালে তার মৃত্যুর মধ্যদিয়ে। আমরা দেখি যে, সময় ও দেশের রাজনীতির সাথে একটি পরিবারের জীবন কীভাবে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে যায় এবং পরিস্থিতির সাথে বিভিন্ন সময়ে কীভাবে সামঞ্জস্য বিধান করতে হয়।
(আরবি: نجيب محفوظ) (জন্ম: ডিসেম্বর ১১, ১৯১১ - মৃত্যু: আগস্ট ৩০, ২০০৬) নোবেল বিজয়ী মিশরীয় সাহিত্যিক। নাগিব মাহফুজ মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি মিশরীয় বিপ্লবে ১৯১৯ অংশ গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে, তিনি দর্শন বিভাগে ১৯৩০ সালে ভর্তি হন মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৩৪সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন জরেন। এর পর ১৯৩৬ সালে দর্শনের গবেষণা কাজে একটি বছর অতিবাহিত করেন। পরে তিনি গবেষনা পরিত্যাগ করেন এবং একটি পেশাদার লেখক হয়ে যান। মাহফুজ তারপর আল-রিসালায়ের জন্য একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন, এবং এল-হিলাল এবং আল-আহরাম ছোটোগল্প লিখতে অবদান রাখেন। নাগিব মাহফুজ ১৭ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় ৩০টি উপন্যাস লিখেলও ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে প্রকাশিত কায়েরা ট্রিলজি তাঁকে আরব সাহিত্যের এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেন। এতে তিনি ইংরেজ শাসন থেকেমুক্ত হওয়ার সময়কালে মিশরের ঐতিহ্যবাহী শহুরে জীবনধারা ফুটিয়ে তোলেন । এ উপন্যাসের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। নাগিব মাহফুজের উপন্যাসের প্রায় অর্ধেকেরও বেশীর চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি ১০০ টিরও বেশি ছোটগল্প রচনা করেছেন। এগুলির বেশীর ভাগই পরে ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।