মনীষী-ইতিহাসবিদ অমলেশ ত্রিপাঠীর এযাবৎ-অগ্রন্থিত প্রবন্ধসমূহের এই সংকলন। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বাংলা ভাষায় ইতিহাসচর্চাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দৈনিক সংবাদপত্রে এবং বিভিন্ন সাময়িক পত্রিকায় তিনি স্বদেশ ও স্বকাল সম্বন্ধে যে-বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধগুলি প্রকাশ করেছিলেন সেগুলির কিয়দংশ ইতিপূর্বেই তাঁর বাংলা গ্রন্থাদিতে সন্নিবিষ্ট হয়েছে: অবশিষ্ট প্রবন্ধগুলির প্রায় সবটুকুই তাঁর প্রয়াণের আড়াই দশক পেরিয়ে একত্র করে রাখা হল এই সংকলনে। ১৯৩৮-৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্র অমলেশের চারটি প্রবন্ধ এবং অধুনালুপ্ত ও দুষ্প্রাপ্য ‘ইতিহাস’ পত্রিকার কীটদষ্ট পৃষ্ঠাগুলি থেকে উদ্ধার-করা অমলেশের তিনটি প্রবন্ধ এই সংকলনের সম্পদ, যা অমলেশের গুণগ্রাহী পাঠকদের কাছেও সম্ভবত অপরিজ্ঞাত ছিল। ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী যেমন বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের কারণ অনুসন্ধান করেছেন, তেমনি ব্যাখ্যা করেছেন গান্ধীর নেতৃত্বে সংঘটিত তিনটি আন্দোলনের পূর্বপট; গান্ধী-নেহরু-সুভাষের মতবিরোধের ব্যাখ্যা করেছেন যথোচিত নিরপেক্ষতায়; স্বাধীনোত্তর ভারতের জাতীয় জীবনের উত্থানপতনময় ইতিবৃত্তের সূত্রে উদ্ঘাটন করেছেন গণতন্ত্রের সংকট এবং সামগ্রিক অবক্ষয়ের করুণ চিত্র; একদিকে তিনি চৈতন্য-রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নির্ধারণ করেছেন; অন্যদিকে সমসাময়িক ইতিহাসের বিচারে তাঁর দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন ‘ঐতিহাসিকের মূল্যায়ন’–পর্বের লেখাগুলিতে; উপরন্তু ‘বাংলা সাহিত্যের দুই পথিকৃৎ’–পর্বের রচনাগুলিতে সাহিত্যকেও পর্যবেক্ষণ করেছেন ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে; তাঁর কর্মক্ষেত্র কলকাতা এবং তাঁর পূর্বসূরি ইতিহাসবিদগণ— কিছুই তাঁর মনস্কতার বাইরে থাকেনি। এই সংকলনের উপজীব্য শুধু ইতিহাস নয়; ভারত ও বিশ্বের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনাধারার ইতিবৃত্ত। অমলেশের জীবনপঞ্জি ও রচনাপঞ্জি এই সংকলনকে অভিপ্রেত পূর্ণতা দিয়েছে।
জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯২১ । মেদিনীপুরের দেভোগ-এ । পড়াশোনা তমলুক হ্যামিলটন হাই স্কুলে, প্রেসিডেন্সি কলেজে, কলম্বিয়া ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন । গৌরবময় সাফল্য পরবর্তী ক্ষেত্রেও । কর্মজীবন : প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাস বিভাগের প্রধান (১৯৫৭-৬৯) ; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আশুতোষ অধ্যাপক (১৯৬৯-৮৬) । ইউ. জি. সি-এর সদস্য | সিন্ডিকেটের সদস্য ও ডিন ।। গবেষণা ; প্রথম ফুলব্রাইট স্কলার, রকফেলার ফেলো ইত্যাদি । গান্ধী লেকচারার, লন্ডন (১৯৭৪)। রাশিয়া, জাপান, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে আমন্ত্রিত । বিবাহ ১৯৪৬ সালে। স্ত্রী দীপ্তি ত্ৰিপাঠী—বর্তমানে বেথুন কলেজের অধ্যক্ষা । দুই সন্তান । পুত্র ও কন্যা উভয়েই কৃতী। রচনাঃ প্রথম গবেষণা গ্রন্থ -Trade and Finance in the Bengal Presidency 1793-1833 আর্চায যদুনাথ অক্সফোর্ডের অধ্যাপক ভিনসেন্ট হালোঁ প্রমুখ। কর্তৃক উচ্চ প্রশংসিত । ক্লাসিক” রূপে স্বীকৃত । অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, সাংস্কৃতিক যোগাযোগে চরমপন্থীদের যে বিশেষ মানুসিকতা গড়ে উঠছিল তার বিশ্লেষণ The Extremist Challenge পথিকৃৎ । বিদ্যাসাগরের অভিনব মূল্যায়ন Traditional Moderniser গ্রন্থে । প্রবন্ধ সংকলন—“ইতিহাস ও ঐতিহাসিক” । ইতিহাস দর্শনের প্রথম পদক্ষেপরাপে এ-গ্ৰন্থ পেয়েছে আনন্দ পুরস্কার ।