রাত এগারোটা। ফাইজার চোখে ঘুমের লেশমাত্রও নেই। কিন্তু চোখের পাতা তার তাকিয়ে থাকতে হার মানছে। এটা তো ঘুম নয়, বরং চিরনিদ্রায় শায়িত হবার আগমন বার্তা। ফাইজার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বিছানায় চিত হয়ে পড়ে আছে। পছন্দের নীল শাড়িটা গায়ে জড়ানো। বমি করতে করতে শরীর অসাড় হয়ে এসেছে। দেখা দিয়েছে হৃদযন্ত্রে অ্যারিথমিয়া। নিশ্বাস নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে বুঝি পৃথিবী থেকে অক্সিজেন নামক জিনিসটা হারিয়ে গিয়েছে। লোকটা জানালা খুলে দিয়েছিল। বাতাসের দাপটে বৃষ্টির ছাট আসছিল ঘরে। মাঝেমধ্যে তীব্র বাতাসের ঝাপটায় পতপত আওয়াজ তুলছিল জানালার পর্দা। তবুও যেন এখন অক্সিজেনের বড্ড অভাব পড়েছে এ ঘরে। নড়াচড়ার লেশমাত্র শক্তি নেই দেহে।
বিছানায় পড়ে যাওয়ার পর ক্লান্ত চোখে যেভাবে তাকিয়েছিল সামনে ইজি চেয়ারে বসে দুলতে থাকা লোকটির দিকে, এখনো সেভাবেই তাকিয়ে আছে। চোখের পানি গড়িয়ে গিয়ে পড়ছে কানের ভেতর। কথা বলতে পারার শক্তি হারিয়েছে অনেক আগেই। মৌখিক ভাষা হারালেও আমরা মনের ভাষা মৃত্যু অব্ধি হারাই না। কাছের মানুষগুলোই আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
টেবিলের উপরে টিপটিপ করে জ্বলতে থাকা রঙিন মোমের হালকা আলোয় এ ঘর যেন এখন এক মৃত্যুপুরী। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বসে থাকা লোকটিকে হয়ত ফাইজা বলতে চাইছে, ‘আমার কি দোষ ছিল? কেন এমনটা করলেন আমার সাথে? মানলাম আমার হয়ত কোনো দোষ ছিল। কিন্তু আমার অনাগত বাচ্চার কি দোষ? কেন করলেন এমনটা? প্লিজ বাঁচিয়ে নিন আমায়। আমি বাঁচতে চাই। আমার বাচ্চার জন্য অন্তত বাঁচতে দিন আমায়।’