‘শারহুল আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ’ হলো ইসলামের মূল বিশ্বাস বা আকীদাহ বোঝার এক অনন্য গ্রন্থ। ইমাম তহাবী (রাহি:) রচিত এই কালজয়ী বইটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহের আকীদাহকে সুসংহতভাবে উপস্থাপন করেছে। এতে সংক্ষিপ্ত অথচ গভীরভাবে আল্লাহর সিফাত, তাকদীর, নবুওয়াত, শিরক, কুফর ও ঈমান সম্পর্কিত বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বইটি এমনভাবে সাজানো যে, জটিল বিষয়গুলোও সহজে বুঝে নেয়া সম্ভব।
বইটি সম্পর্কে কিছু কথা:
আকীদাহ ঠিক না থাকলে আমল গ্রহণযোগ্য হয় না—এই বাস্তবতা আমাদের প্রত্যেকেরই জানা। কিন্তু আকীদাহর জটিল বিষয়গুলো বুঝতে গিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হন বা নির্ভরযোগ্য উৎস খুঁজে পান না।
এই বই সেই শূন্যস্থান পূরণ করে। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা, সহজ ভাষা ও নির্ভরযোগ্য আলেমদের ব্যাখ্যার সমন্বয়ে তৈরি এই সংস্করণটি যে কোনো পাঠকের জন্য পড়া ও বোঝা সহজ। এটি এমন একটি কিতাব, যা পড়লে মনে হয়—বিশ্বাসের ভিত আরও দৃঢ় হয়ে গেছে।
বইটির মূল বৈশিষ্ট্য:
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহের আকীদাহর অন্যতম প্রাচীন ও নির্ভরযোগ্য উৎসগ্রন্থ
ব্যাখ্যায় যুক্ত হয়েছেন তিনজন বিশ্ববিখ্যাত আলেম: শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানি, শাইখ ইবনু বায এবং শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু মানি (রাহিমাহুমুল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর বিশ্লেষণ—শিক্ষার্থী ও সাধারণ পাঠক উভয়ের জন্য উপযোগী
জটিল আকীদাহ বিষয়গুলো সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে
প্রতিটি অধ্যায়ে মূল আকীদাহর দলিল ও ব্যাখ্যা সংযুক্ত, যা পাঠকের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে।
এই বইটি কেন পড়বেন?
নিজের আকীদাহকে সঠিক উৎস থেকে যাচাই ও পরিশুদ্ধ করতে।
আল্লাহ, রাসূল ﷺ ও পরকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও প্রমাণভিত্তিক ধারণা গড়ে তুলতে।
বিভ্রান্তিকর মতবাদ, বিদআত ও ভ্রান্ত চিন্তা থেকে নিরাপদ থাকতে।
ঈমান, তাকদীর, আল্লাহর সিফাত ও নবুওয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা জানতে।
এমন একটি বই হাতে রাখতে, যা দীন বোঝার ভিত্তি মজবুত করে ও আত্মাকে প্রশান্ত করে।
তাহাবী ৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে/২২৯ হিজরিতে উত্তর মিশরের তাহা গ্রামে এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পড়াশোনা তার মামা ইসমাঈল ইবনে ইয়াহিয়া আল-মুজানির সাথে শুরু করেন, যিনি ছিলেন শাফিঈ মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় একজন আলেম। ৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে/২৪৯হিজরীতে, তাহাবী ২০ বছর বয়সে শাফিই মাযহাব ত্যাগ করেন এবং ব্যক্তিগত কারণে হানাফি মাযহাব গ্রহণ করেন। তার হানাফী মাযহাবে স্থানান্তরের কারণ নিয়ে অনেক বর্ণনা রয়েছে, তবে অধিক সম্ভাব্য কারণ ছিল মনে হয়, তার কাছে আবু হানিফাকে শাফিঈর থেকে বেশি বুদ্ধিদীপ্ত লেগেছিল। তাহাবী পরে মিশরে হানাফীদের প্রধান আহমেদ ইবনে আবী ইমরান মুসার অধীনে পড়াশোনা করেন, যিনি নিজে আবু হানিফার দুই প্রাথমিক শিক্ষার্থী আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদ আল-শায়বানির অধীনে পড়াশোনা করেছিলেন। তাহাবী পরবর্তী সময়ে ৮৮২ খ্রী/২৬৮ হিজরীতে হানাফি আইন বিষয়ে আরও পড়াশোনা করার জন্য সিরিয়ায় যান এবং দামেস্কের প্রধান হাকিম কাজী আবু হাজ্জিম আবদুল হামিদ বিন জাফরের শিষ্য হন। তাহাবী হানাফী আইনশাস্ত্র ছাড়াও হাদীসের উপর এক অসাধারণ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ফলস্বরূপ তাঁর গবেষণা অনেক আলেমকে আকৃষ্ট করে যারা পরে তাঁর হাদীস সম্পর্কিত রচনা নিয়ে আরো গবেষণা করেন। এর মধ্যে খুরাসানের জহিরীদের প্রধান আল-দাউদি এবং হাদীস বর্ণানাকারীদের জীবনী সংক্রান্ত অভিধানের জন্য আল-তাবারানী সুপরিচিত ছিলেন। হানাফী ফকীহরা তো বটেই, তাহাবির গ্রন্থ কিতাব মাআনী আল-আতহার এবং তাঁর আকীদা সম্পর্কিত বইয়ের জন্য বেশিরভাগ সুন্নি পন্ডিতের মধ্যে বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছে।