চিত্রকল্পের অপূর্ব শৈলী আর দার্শনিক গভীরতায় কবি হোসাইন কবির স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। দশক বিবেচনায় তিনি গেলো শতাব্দীর আশির দশকের কবি। তাঁর কবিতায় বাংলার প্রকৃতি, প্রেম, শূন্যতা, এবং অস্তিত্বের প্রশ্ন এক অনন্য বুননে গাঁথা। প্রতিটি শব্দে যেন জীবনের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব, প্রকৃতির মায়া আর মানুষের বেদনা এক হয়ে কথা বলে।
হোসাইন কবিরের কবিতায় প্রাণ-প্রকৃতি শুধুমাত্র প্রেক্ষাপট নয়; এটি মানুষের অনুভূতির প্রতিচ্ছবি। 'নদী ছিলো, নদী নেই! আছে নদীর কঙ্কাল- মাঠে ঘাটে প্রান্তরে পাখির পালক, কেবলই পাথর আর পাথরের চোখ, পাথরকে জল ভেবে পাথরেই ডুবে যায় নদীর স্বজন' এরূপ উচ্চারণ যেন ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রকৃতি মানুষের অন্তরলোকের শূন্যতাকে প্রতিফলিত করে। একইভাবে, তাঁর লেখায় গ্রামবাংলার সরলতা আর আধুনিক জীবনের যান্ত্রিকতার মধ্যে সংঘাত স্পষ্ট। 'গ্রামগুলো শহর হলে যে মানুষ গ্রামের আলপথে শিস দিয়ে বাজাতো পাতার সানাই, সে মানুষ তাহলে কি পাখি হবে?' এমন শব্দচিত্রের বুনন পাঠককে স্মৃতিমেদুর করে তোলে।
তাঁর কবিতায় মৃত্যুর চিরন্তন দর্শন ও সময়ের প্রবাহ মিশে গিয়ে এক ধরনের নির্জন আবহ তৈরি করে। 'মানুষ একা হলে শুনতে পায়, মৃত সব নদীর কান্না, সমবেত কোরাস'- এখানে নিঃসঙ্গতার মধ্যে সময় এবং প্রকৃতির ক্ষয়ের শব্দ ধরা পড়ে। এই একাকিত্ব ব্যক্তিক হয়েও বিশ্বজনীন।
আধুনিক সমাজের সংকট এবং মানুষের বিবেকহীনতার প্রতি তাঁর আঙুল তোলা স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রতীকী চিত্রকল্পে। কবির প্রতিটি কবিতায় প্রশ্ন উঠে আসে মানুষ কে? কী তার স্থান- এই বিশাল মহাবিশ্বে? কে আমি? জলঘরে আজও জল মাপি ধূলিতে ধূসর প্রান্তরে একা।' এমন গভীর প্রশ্নে তিনি পাঠককে ভাবনায় ডুবিয়ে দেন। তাঁর কবিতায় সময়, মৃত্যু, শূন্যতা এবং জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব- এক সঙ্গে বুনে যায় এক বিস্তৃত মানচিত্র।
হোসাইন কবির : জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩ ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য গ্রন্থ- কবিতা- জলের কল্লোল বৃক্ষের ক্রন্দন (১৯৯৭) ও মাটি ও শূন্যতা (২০০৪) সাঁকোর নিচে শান্তজল (২০১৪) নিঃসঙ্গ পাতার বাঁশি (২০২০) ডাহুক এখনো ডাকে (২০২২) অগ্নিজলে সুগন্ধশরীর (২০২৫) প্রবন্ধ- সমাজ রাজনীতি জনপ্রশাসন (২০০৮) বিশ্বাস চর্চার অধিকার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০২১)