শিশু-কিশোরদের মেধা ও চিন্তাশক্তি বিকাশের জন্য সুডোকু হতে পারে একটি কার্যকর ও উপভোগ্য মাধ্যম। এটি শুধু একটি খেলা নয়; বরং গণিত ও সমস্যা সমাধান দক্ষতার প্রতি আগ্রহ তৈরি করার এক দারুণ পদ্ধতি। এর মাধ্যমে শিশুরা যেমন আনন্দ পায়, তেমনই মস্তিষ্কের সক্রিয়তাও বাড়ে।
সুডোকুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এই ধাঁধা যুক্তিভিত্তিক চিন্তা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করে। যখন একটি শিশুকে সংখ্যাগুলোর মধ্যে সঠিক সম্পর্ক নির্ধারণ করতে হয়, তখন তাদের মস্তিষ্ক কৌশলগত চিন্তা করতে শেখে। এই প্রক্রিয়া তাদের গণিতের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে এবং ভবিষ্যতে জটিল বিষয়গুলো সহজে বুঝতে সাহায্য করে। একটি কলাম ও সারির মধ্যে ৯টি সংখ্যা বসানোর ভাবনায় বিভোর শিশুরা ধীরে ধীরে সৃজনশীল উপায়ে সমস্যা সমাধান কৌশল আয়ত্ত করে।
একটা ব্যক্তিগত স্মৃতির কথা বলতে পারি। আমি বেশ আগে থেকেই সুডোকু চর্চা করতাম। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল পড়ার সময় অনেক ব্যস্ততার মধ্যে থাকতাম। তখন গবেষণা ও ক্লাসের চাপকে মানিয়ে নিতে সুডোকু মেলাতাম প্রতিদিন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাঙ্গনে পড়াশোনার চাপ অনেক, সেখানে সুডোকু আমার জন্য মনোযোগ ধরে রাখার একটা দারুণ অনুষঙ্গ ছিল। শিক্ষাজীবনের ব্যস্ততায় কিছুটা বিরতি দিয়ে প্রতিদিন সুডোকু মেলাতাম। মোবাইল ফোনের অ্যাপ থেকে সুডোকু মেলাতাম প্রতিদিন। সেই সময় আমার মগজ ধোলাইয়ের জন্য সুডোকু বেশ কাজ করেছিল।
আমি দেখছি, বর্তমান সময়ে শিশুদের একটি বড় সমস্যা হলো প্রযুক্তি নির্ভরতা। অবসরের সময় তারা মোবাইল বা ভিডিও গেমে আসক্ত। তবে সুডোকু তাদের জন্য প্রযুক্তির বিকল্প একটি সৃজনশীল ও কার্যকর মাধ্যম হতে পারে। এটি তাদের অবসরকে আনন্দময় করে তোলার পাশাপাশি মনোযোগ ও ধৈর্য বাড়ায়। মোবাইল স্ক্রিন আসক্তি কমাতে সুডোকু বিকল্প হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের জন্য সুডোকু আরও বেশি উপকারী কারণ এটি তাদের একাগ্রতা এবং সমস্যা সমাধানের কৌশল উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সুডোকু চর্চার মাধ্যমে শিশুরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে, যা শিক্ষাজীবনে সফলতার ভিত্তি তৈরি করে। শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, অভিভাবকদের জন্যও এটি দারুণ এক মাধ্যম হতে পারে। পরিবারে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে মিলে সুডোকু খেলার অভ্যাস একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে এবং মানসিক প্রশান্তি আনে।
সুডোকু তাই শুধু খেলা নয়, এটি শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্কের ব্যায়ামের একটি সেরা মাধ্যম। তাদের সময় কাটানোর এই উপভোগ্য অনুষঙ্গ ভবিষ্যতের জন্য সৃজনশীল, ধৈর্যশীল এবং দক্ষ একটি প্রজন্ম গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
জাহিদ হোসাইন খান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগে এমফিল প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ২০০৮ সালে দেশের গণিত ও বিজ্ঞান আন্দোলনে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে সাংবাদিকতা ও গবেষণায় যুক্ত হন। ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন। নিয়মিত একটি জাতীয় দৈনিকে লেখালেখির পাশাপাশি গণমাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতার চর্চা করছেন।