সিনেমা-টিনেমা বইটি লেখকের ব্যতিক্রমী চিন্তা ও সৃজনশীলতার উদাহরণ। এতে রচনা সংকলন হয়েছে যা প্রচলিত শাসনপ্রণালির বাইরে গিয়ে তৈরি। সিনেমার শুচিতাময় বিভাজনের প্রতি অসন্তোষ এবং চলচ্চিত্রের গণ্ডি ভেঙে নতুন ধারার রচনা সৃষ্টি লেখকের অন্যতম অনুপ্রেরণা। বইয়ে তর্কমূলক নিবন্ধ, বিদ্যাজাগতিক প্রবন্ধ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পর্যালোচনা, চলচ্চিত্র সমালোচনা, এবং প্রতিবেদনধর্মী লেখাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিছু গবেষণামূলক কাজও রয়েছে, যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুদানে সম্পন্ন হয়েছিল।
চলচ্চিত্র নিয়ে লেখকের যাত্রা শুরু ২৭ বছর আগে, যখন তিনি এফডিসির ছবিতে নায়কদের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন নিয়ে প্রথম প্রবন্ধ লেখেন। এর পর থেকে তার লেখায় দুইটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে—নৃবিজ্ঞান নিয়ে নির্ধারণমূলক আলোচনা এবং মিডিয়া স্টাডিজের শুচিতাময় ধারা থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াস। লেখক মনে করেন, সিনেমা নিয়ে আলোচনায় শুধু বিকল্প ধারা নয়, বরং মূলধারার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবকেও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
২০০০-এর দশকে ‘অশ্লীলতা’ বিরোধী আন্দোলনের সাংগঠনিক ও বৌদ্ধিক অসংগতি লেখককে চলচ্চিত্র নিয়ে গভীরতর লেখালেখি চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। এই বইয়ের রচনাগুলোর মধ্যে লেখক তার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পর্যবেক্ষণের গভীরতা তুলে ধরেছেন। রচনাগুলো সাজানোর ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট থিম অনুসরণ না করে, বিভিন্ন ধারা ও শৈলীর ভিত্তিতে বইটি বিভক্ত করা হয়েছে। এতে বিদ্যাজাগতিক প্রবন্ধ, তর্কমূলক নিবন্ধ, প্রতিবর্তী টীকা এবং প্রতিবেদন স্থান পেয়েছে, যা পাঠকদের চলচ্চিত্র সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা দেবে।
বইটির আলোকচিত্র সংগ্রহ করা হয়েছে অনলাইন উৎস, বিশেষত বাংলা মুভি ডেটাবেজ (বিএমডিবি) থেকে। লেখক এবং প্রকাশক ছবির উৎসের স্বীকৃতি দিতে আগ্রহী ছিলেন, তবে কপিরাইটের সীমাবদ্ধতায় তা সবসময় সম্ভব হয়নি।
লেখক এই বইটিকে শুধুমাত্র সিনেমা নিয়ে আলোচনার জন্য নয়, বরং সিনেমার মাধ্যমে সমাজ ও সংস্কৃতির ওপর দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেন। তিনি আশা করেন, এটি পাঠকদের সিনেমার শৈলী ও বৈচিত্র্য নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সহায়তা করবে। লেখকের মতে, সাহসী উদ্যোগ সবসময়ই তাৎপর্যপূর্ণ, এবং এই বইটি সেই সাহসেরই ফল।
জন্ম: বরগুনা, ২৮ মার্চ ১৯৬৯। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক। কথাশিল্পী, সংকলক, অনুবাদক, কলামিস্ট ইত্যাদি। শিল্পকলার পত্রিকা Depart-এর নির্বাহী সম্পাদক। প্রকাশিত গ্রন্থ : নৃবিজ্ঞানের প্রথম পাঠ (রেহনুমা আহমেদ-এর সঙ্গে যৌথ বিরচিত), কর্তার সংসার: নারীবাদী রচনা সংকলন (সায়দিয়া গুলরুখ-এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদিত), এইডস ও যৌনতা নিয়ে ডিসকোর্স (সায়দিয়া গুলরুখ-এর সঙ্গে যৌথ বিরচিত), নৃবিজ্ঞান পরিচিতি (প্রশান্ত ত্রিপুরা ও রেহনুমা আহমেদ-এর সঙ্গে যৌথ বিরচিত), মুক্ত আলোচনা (আইনুন নাহার-এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদিত), সাম্প্রতিক নৃবিজ্ঞান (নুরুল আলম এবং আইনুন নাহার-এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদিত), চর্চা (জহির আহমেদ-এর সঙ্গে যৌথ সম্পাদিত), কাকগৃহ(ছোটগল্প), আয়ানাতে নিজের মুখটা(ছোটগল্প), ময়নাতদন্তহীন একটি মৃত্যু,(ছোটগল্প)।