রাত না দিন চঞ্চল চৌধুরি কিছুই মনে করতে পারেন না। আকাশে থালার মতো বড়ো চাঁদ। মিশকালো জলে জোছনার অবয়ব। আলো-আঁধারের সুনসান সেই নীরবতায় ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে দীঘির জল পাড়ি দিয়ে একটা বাদুড় ওপারে উড়ে যায়। চঞ্চল চৌধুরি এখন যৌবনের সেই তাগড়া যুবক। জোছনার জলকেলির এমন রাতে মেঘাকে খুঁজছে। মেঘা, মেঘা! দেখো, আমি এসেছি।
উদভ্রান্তের মতো ঘাট ছেড়ে উঠতে যাবে অমনি পাশে এসে দাঁড়ায় সাদা জোব্বা পরিহিত সেই পুরনো প্রহরী রহমত আলী।
—বাবা চঞ্চল, তুমি এখানে আবার এলে কেন?
—কাকু, মেঘা কোথায়!
—ঐ যে ঘর দেখো ওখানেই ছিল আমার মেঘা মা।
-আমাকে নিয়ে চলুন কাকু। আমাকে এক্ষুণি নিয়ে চলেন! আমি মেঘার কাছে যাব।
সেই অন্ধকার প্রকোষ্ঠ খুলে দেয় রহমত আলী। কেউ নেই আর ওখানে।
পুরো গল্প শুনে চঞ্চল চৌধুরি দু হাত কচলাতে থাকেন। ঘন নিঃশ্বাসে তুমুল বেগে ওঠা নামা করছে তাঁর বুক। যেন তিনি দেখতে পেলেন তাঁর সেই দীঘল কালো চুলের শ্যামলা সুন্দরী রাজকন্যা মেঘা উসকো খুসকো চুলে মেঝেতে চটের বিছানায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তাঁর জীর্ণ শীর্ণ হাত নিয়ে খেলছে ইনাক্ষী।
চঞ্চল চৌধুরি দৌড়ে দীঘির ঘাটে চলে যান। জলের মধ্যে পা দুটো ডুবিয়ে মাথা গুঁজে দু হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকেন। আহা তাঁর জন্য মেঘার এই করুণ পরিণতি হয়েছিল। চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন চঞ্চল চৌধুরি। সেই কান্নার শব্দে কিছু রাতজাগা পাখি তারস্বরে চিৎকার করে রাতের নীরবতা ভাঙে।
‘চঞ্চল, চঞ্চল এই তো আমি! কাঁদছ কেন! দেখো, এই তো আমি। আমি মেঘা! চিনতে পারছ না!’ কাঁধে মেঘার আলতো স্পর্শ।
চঞ্চল চৌধুরি মুখ তুলে তাকাতেই দেখেন সেই আগের মতো মিষ্টি করে হাসছে মেঘা।
-চঞ্চল, তুমি কী আমার ইনাক্ষীকে এনে দিতে পারো? ঐ তো জলের বুকে ঘুমিয়ে আছে সে।
চলো, আমরা ওর কাছে যাই।
জলের ভেতর থেকে খলখলিয়ে হেসে ওঠে ইনাক্ষী। দু হাতে ইনাক্ষীকে পাঁজা কোলে করে তুলে জল থেকে হেঁটে হেঁটে ঘাটের দিকে মেঘার কাছে আসে চঞ্চল চৌধুরি।
জন্ম ৯ই সেপ্টেম্বর । বাবা প্রয়াত সুলতান আহমেদ খান, মা রাবেয়া খান। ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি গ্রহণ করেন । বর্তমানে সাংসারিকতার পাশাপাশি লেখালেখিতে সময় অতিবাহিত করছেন। লেখালেখির প্রথম অনুপ্রেরণা মা ও বড় বােন শাফিয়া খান । ভীষণ সাহিত্যানুরাগী মায়ের কাছ থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন লেখালেখি থেকে দূরে থাকলেও স্বামী এবং শ্বশুরের অনুপ্রেরণায় আবার শুরু করেন। শখ আবৃত্তি ও 'গান করা। কবির বিশ্বাস, ভালাে বই সব সময়ের ভালাে বন্ধু । এটি কবির দ্বিতীয় একক কাব্যগ্রন্থ এবং তৃতীয় একক গ্রন্থ । প্রথম কাব্যগ্রন্থ “শিশিরের শব্দে তােমায় খুঁজি প্রকাশিত হয় একুশের বইমেলা ২০১৯ এ । বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তাঁর কবিতা মুদ্রিত হয় । ২০১৮ সালের একুশের বইমেলায় কয়েকটি সংকলন গ্রন্থে তার কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ।