‘মাফ করবেন স্যার! আপনি যেভাবে লাফ দিয়ে অত সুন্দর করে বাইকে উঠলেন স্যার, আমার তো রাশেদ ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল।’ ড্রাইভার বলল।
ভ্রু কুঁচকালাম। ‘এই রাশেদটা কে?’
‘রাশেদ ভাইকে চিনলেন না স্যার!
‘এ শহরের সবচেয়ে বড় অ্যাথলেট। ভালো একজন কুস্তিগিরও! সাইক্লিং প্রতিযোগিতায়ও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কয়েকবার।’ ড্রাইভারের মুখে যেন খই ফুটছে।
‘তাই নাকি। শুনিনি তো।’ আমার অবস্থা হচ্ছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!
‘কী বলব স্যার, রাশেদ ভাইয়ের যেমন চেহারা তেমনি তার ফিগার। কয়েকবার তো সিনেমার পরিচালকরা তাকে নায়ক পর্যন্ত বানাতে চেয়েছিল।’
‘সিনেমায় অভিনয় ক-ক-করেনি?’ পেট চেপে কোনো রকমে বললাম আমি।
‘সিনেমা ভাইয়ের অত পছন্দের না। তবে প্যাকেজ নাটক করেছে কয়েকটা। সবগুলোর নায়িকাই ছিল চিত্রনায়িকা পপি।’
‘তাই নাকি! তা তোমার রাশেদ ভাই করে কী?’ আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি আর কি। যতক্ষণ নিজের সমস্যা ভুলে থাকা যায়।
‘কিছু করে না স্যার! ওনার অনেক টাকা-পয়সা! এই শহরে ওনার বেশ কয়েকটা বাড়ি। আর জমিজমাও আছে গ্রামের বাড়িতে।’
‘বলো কী! তাহলে তো উনি মহা বড়লোক!’ শ্লেষ মিশিয়ে বললাম আমি।
‘বড়লোক কিন্তু মনে কোনো অহংকার নেই স্যার। গায়ক মানুষ তো!’
‘বলো কী! আবার গানও গায়।’
‘জি স্যার! এফএম রেডিওতে মাঝে মাঝেই ওনার গান বাজে!’
‘তা তোমার রাশেদ ভাইয়ের গাড়ি নেই? চরম বিরক্তিতে বললাম আমি।’
‘আছে স্যার! পাঁচটা বাস, দুইটা ট্রাক আর একটা মাইক্রোবাস আছে।’
‘তুমি এতসব জানলে কীভাবে? তোমার গাড়িতে রাশেদ সাহেব উঠেছিল নাকি?’
‘না স্যার। উনি আর বেঁচে নেই।’ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলল ইজি বাইকের ড্রাইভার। দেখে মনে হলো কেঁদেই ফেলবে।
‘আহারে! রাশেদ সাহেব নিশ্চয়ই তোমার আত্মীয় ছিল?’ সহানুভূতি মাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম।
‘হ্যাঁ স্যার। উনি আমার স্ত্রীর প্রথম স্বামী ছিলেন।’ ভেজা ভেজা কণ্ঠে বলল ড্রাইভার।
খ্যাঁচ করে আমার বাসার সামনে থামল বাইকটি।
বাইক থেকে নেমে লাফাতে লাফাতে দৌড় দিলাম বাসার বাথরুমের দিকে।
বাইকের টাকা শোধ না করেই।
রাস্তার ঝাঁকুনি আর ড্রাইভারের শেষ ঝাঁকুনি দুই মিলে বাথরুমে যাওয়ার ‘নিম্নচাপ’ বাড়িয়ে দিয়েছে আমার!