আল কুরআনের আলোকে রিবা (সুদ) সম্পূর্ণ হারাম এবং এর বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা রয়েছে। এটি অধিকাংশ মানুষের জানা থাকলেও, রিবার প্রকৃত অর্থ, ক্ষেত্রবিশেষে রিবার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি, এবং আধুনিক অর্থনীতি রিবা ছাড়া সচল রাখা সম্ভব কি না—এ বিষয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। এমনকি কুরআনে রিবা সম্পর্কে সরাসরি কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় কি না, তা নিয়েও বিভিন্ন মত প্রচলিত রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, আলোচ্য বইটি আল কুরআনের রিবা সম্পর্কিত আয়াতসমূহের সমন্বিত বিশ্লেষণ তুলে ধরে রিবার প্রকৃত ধারণা স্পষ্ট করার প্রয়াস নিয়েছে। কুরআনের আদেশ-নিষেধের ক্ষেত্রে কোনো বিষয় সংজ্ঞায়িত করার পরিবর্তে, মানুষের প্রচলিত ভাষা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে যেসব ক্ষেত্রে মতভেদ দেখা দেয়, সেসব ক্ষেত্রে কুরআনের বক্তব্যের ধারাবাহিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক ধারণা তুলে ধরা হয়েছে।
বইটিতে রিবার সংজ্ঞা, বিভিন্ন পদ্ধতি, এবং বিভিন্ন প্রেক্ষিতে এর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রিবা নিষিদ্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা এবং মু’মিনদের জন্য রিবার বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক বৈশিষ্ট্যও আলোচিত হয়েছে। সংক্ষেপে, কুরআনের দৃষ্টিতে লেনদেনে অন্যায্য বা অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণই রিবা হিসেবে বিবেচিত। রিবা শুধু নৈতিকভাবে অনৈতিক নয়, এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও মারাত্মক হুমকি।
বইটি আধুনিক অর্থব্যবস্থার বিভিন্ন পদ্ধতির বিশ্লেষণের মাধ্যমে রিবার উপস্থিতি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেনি। বরং, রিবার ধারণাগত দিক অর্থাৎ কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে কোনো বিষয়কে রিবা বলা যায়, তা স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করা যায়, এই মৌলিক ধারণাগুলি রিবা চিহ্নিত করতে এবং এর বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ খুঁজতে সহায়ক হবে।
শওকত জাওহারের জন্ম ১৯৮৩ সালে নোয়াখালী জেলার দ্বীপ হাতিয়ায়। পিতা মুহাম্মদ আবদুশ শহীদ এবং মাতা আজমলেন্নেছা। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএসএস (অনার্স) ও এমএসএস সম্পন্ন করেন। পিতার প্রেরণায় এবং পারিবারিক লাইব্রেরির ধর্মীয় বই পড়ে তিনি ধর্মানুরাগী হয়ে ওঠেন। মুসলিম সমাজ ও সাহিত্যে ধর্মীয় চিন্তার বিভিন্নতা তাঁকে তুলনামূলক ধর্মীয় অধ্যয়নে উদ্বুদ্ধ করে। ২০০৮-২০১০ সালে তিনি কুরআন রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (QRF) রিসার্চ ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বেসিক কুরআনিক এরাবিক গ্রামার কোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১১-২০১৩ সালে কুরআন গবেষক তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জীর সান্নিধ্যে কুরআনের ব্যাখ্যা বিষয়ে মৌলিক জ্ঞানার্জন করেন এবং ওয়ার্ল্ড আল কুরআন রিসার্চ সেন্টারে রিসার্চ ফেলো ছিলেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন এবং দি ইনস্টিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড অ্যাপ্লিকেশনে (দি ইক্বরা) রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করছেন।