ভূমিকা নয়, চব্বিশে নারীর দ্রোহের বারুদে জ্বলে ওঠার গল্পগাথা
ইতিহাস ও মানব সভ্যতা হাত ধরাধরি করে চলে। ইতিহাস নানাভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে। সহজ করে বললে, ‘ইতিহাস’ হলো কালক্রম রচনা ও অধ্যয়ন। অতীতের ঘটনাগুলোর পাশাপাশি স্মৃতি, আবিষ্কার, সংগ্রহ, সংগঠন, উপস্থাপনা এবং এই ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা নিয়ে ইতিহাস গঠিত হয়। ইতিহাসের আলেখ্য তাই সভ্যতার মূল্যবান সম্পদ। ইতিহাসের কোনো রং নেই। ইতিহাস রচনায় নিরপেক্ষ থাকাটা ন্যায্যতার দাবি। রং মাখানো ইতিহাস আবর্জনা বৈ কিছু নয়। হাই হিল জুতো আবিষ্কার হয়েছিল পুরুষের প্রয়োজনে, কিন্তু ব্যবহারের আধিক্যে সে ইতিহাস ‘অচল’ হয়ে গেছে। এখন সবাই মনে করে, ‘ইউনিসেক্স’ তথা নারীকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যই বোধ হয় কোনো এক ‘সহৃদয়বান’ বিজ্ঞানী হাই হিল জুতো উদ্ভাবন করেছেন! ইতিহাসকে তাই সমকালে লিখতে হয়, নইলে তার চ্যুতি ঘটা ইতিহাসেরই শিক্ষা। বর্তমান ‘চব্বিশের কন্যারা’ গ্রন্থটির জন্য লেখিকা রহিমা আক্তার মৌ নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। ইতোমধ্যে তাঁর যে পাঠকশ্রেণি তৈরি হয়েছে, গ্রন্থটি তাদের হতাশ করবে না বোধ করি।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’, ‘বাংলা বিপ্লব’ কিংবা ‘বাংলা বসন্ত’ - বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিধারা নির্ধারণের সর্বশেষ আন্দোলন। ঘটনা পরম্পরায় সর্বশেষ হলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ আন্দোলন বলে বিবেচিত হচ্ছে। প্রেক্ষাপটের গভীরে গেলে বুঝতে কষ্ট হয় না, ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলন আর ২০২৪-এর আন্দোলন হলো রাজনৈতিক। স্লোগান আর দেয়াল লিখনের ভাষা-ই বলে দেয় এ আন্দোলন কতটা রাজনৈতিক। আন্দোলনকারীরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে ‘ফ্যাসিস্ট’, ‘খুনি’, ‘রক্তপিপাসু’, ‘ডাইনি’ ইত্যাদি অভিধায় আখ্যায়িত করে এবং সরকার বিরোধিতার পাশাপাশি ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টও তীব্র ছিল। ২০২৪-এর আন্দোলন শুরুতে সাদামাটাভাবে ছাত্রদের চাকরির অধিকার আদায়ের লড়াই থাকলেও তৎকালীন সরকারের অদূরদর্শিতায় তা রাজনৈতিক রূপ নেয়।