একটি বাজেট উন্নয়ন বহুমুখী কার্যকলাপের ফলস্বরূপ। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ চিন্তা এবং জনগণের মন-মানসিকতা সবই উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। একক কোনো গোষ্ঠী এবং বিষয়ের উপর অধিক উন্নয়ন অর্জন করা যায় না। স্বাধীনতার ৫৩ বছর বাংলাদেশ বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে এক যুগ সন্দিক্ষণে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন মোটামুটি একটি সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সরকারের অবদান, একক কোনো সরকার এবং বিশেষ সময়ের দাবিদার কেউ হতে পারে না। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, উন্নয়নের ফসল সব স্তরে পৌঁছায়নি। বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্রের মধ্যে সন্তোষজনকভাবে যায়নি। ব্যক্তি আয় ও সম্পদের বণ্টন-এর দিক বিবেচনা করা হয়নি। দিন দিন দুটি সূচকে বৈষম্য বাড়ছে। এ যাবৎ উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সূচক অর্থাৎ জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধিই বোঝানো হয়েছে। সরকার এবং তাদের সহযোগী সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এটাই সকলকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু প্রবৃদ্ধিই নয়। এখানে উন্নয়নের সুবিধা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া, মানুষের বহুমাত্রিক চাহিদা যেমনÑ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা সবগুলো পূরণ করেই সঠিক উন্নয়ন অর্জন করতে হবে।
এই বইটির নামকরণ করা হয়েছে “উন্নয়ন ভাবনা : পথ ও পাথেয়”। বিভিন্ন নিবন্ধে সঠিক উন্নয়নের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় এগুলো প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়গুলোর প্রশংসিত বিবেচনা করেই এই বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নির্দেশ করার বিষয়গুলো এই বইতে প্রকাশ করা হয়েছে। গত প্রায় দেড় দশক ধরে দেশ একটি কেন্দ্রীভূত ক্ষমতাশীল দলের শাসন-এর আওতায় ছিল। বহু সমস্যাকে সে সময় পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। জনগণকে উন্নয়ন ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ফলস্বরূপ দেশের জনসাধারণ এক সময় প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নতুন একটি যুগের সূচনা করে। সমস্ত বৈষম্য, বঞ্চনা ও লঞ্ছনা অবসান করার লক্ষ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন সংষ্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সমতাভিত্তিক এবং কল্যাণকামী রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এই বইটি এগিয়ে যাওয়ার পথ ও পাথেয় হিসেবে কিছু অবদান রাখবে বলে আশা করি। বইটি প্রকাশ করার জন্য ‘দিশা’-এর প্রধান নির্বাহী ও আলোঘর প্রকাশনার প্রধান জনাব মো. সহিদ উল্লাহকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাকে বইটি প্রকাশ করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান ও প্রস্তুত করার জন্য মো. মুসা মিয়াকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রকাশনার ম্যানেজার মো. রাকিবুল হাসানকে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত ও প্রচ্ছদ ডিজাইন করার জন্য মো. ফখরুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পরক্ষণে নিবন্ধগুলো যে সব পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বইটি পাঠকের চিন্তার খোরাক জোগাবে ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণকামী অবদান রাখতে উৎসাহ প্রদান করবে বলে আশা করি।